অনলাইন

ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য

সেবন্তী ভট্টাচার্য্য

২৭ জুলাই ২০২১, মঙ্গলবার, ৪:৩৮ অপরাহ্ন

করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে ভাবছেন তো আপনি এখন নিশ্চিন্ত, আর বুঝি কোভিড হবে না। তবে ল্যানসেটের একটি রিপোর্ট আপনার ঘুম উড়িয়ে দিতে পারে। দ্য ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, ফাইজার এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন প্রয়োগের ৬ সপ্তাহ পর ভ্যাকসিনের অ্যান্টিবডি স্তর ৪.০৪ শতাংশ এবং ০.৪১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ১০ সপ্তাহ পর দেখা গেছে অ্যান্টিবডি স্তর কমেছে ৫০ শতাংশ। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল) এর গবেষকরা উল্লেখ করেছেন যে অ্যান্টিবডি স্তরগুলি যদি এই হারে কমতে থাকে তবে উদ্বেগ রয়েছে যে ভ্যাকসিনগুলির প্রতিরক্ষামূলক প্রভাবগুলিও ক্ষয় হতে শুরু করবে, বিশেষত করোনার নতুন রূপগুলির বিরুদ্ধে। তবে, তারা এও বলেছেন, কত তাড়াতাড়ি অ্যান্টিবডি স্তর হ্রাস পেতে পারে তা আগাম বলা সম্ভব নয়।

ইউসিএল ভাইরাস ওয়াচ সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে ভারতে কোভিশিল্ড নামে পরিচিত অ্যাস্ট্রাজেনিকা ভ্যাকসিনের দুটি শটের চেয়ে ফাইজার ভ্যাকসিনের দুটি ডোজের পরে অ্যান্টিবডি স্তরগুলি বেশি পরিমানে তৈরী হয়েছে। SARS-CoV-2 - তে আক্রান্ত রোগীদের তুলনায় ভ্যাকসিনযুক্ত ব্যক্তিদের শরীরে অ্যান্টিবডি স্তর অনেক বেশি বলেও জানাচ্ছে ইউসিএল ভাইরাস ওয়াচ।

ইউসিএল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ ইনফর্মটিক্সের মধুমিতা শ্রোত্রি বলছেন, ''অ্যাস্ট্রাজেনিকা বা ফাইজার ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নেওয়ার পর শরীরে অ্যান্টিবডিগুলির মাত্রা প্রাথমিকভাবে খুব বেশি থাকে, যা গুরুতর কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে সুরক্ষাবলয় তৈরী করে রাখে।তবে চিন্তার কারণ এই অ্যান্টিবডিগুলির মাত্রা ২-৩ মাস পর কমতে শুরু করে।'' গবেষকরা ১৮ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের ৬০০ জনের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে এই তথ্য সামনে এনেছেন। এদের মধ্যে বিভিন্ন বয়স, লিঙ্গের এবং বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত মানুষ আছেন। ফাইজারের অ্যান্টিবডি স্তরগুলি ভ্যাকসিনেশনের ২১-৪১ দিনের মধ্যে প্রতি মিলিলিটারে ৭৫০৬ ইউনিট করে কমতে থাকে, ৭০ দিনে কমে ৩,৩২০ ইউনিট। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের জন্য, অ্যান্টিবডি স্তরগুলি প্রথম ২০ দিনে প্রতি মিলিলিটারে ১২০১ ইউনিট হ্রাস পায়, ৭০ বা তার বেশি দিনে সেটি হয় প্রতি মিলিলিটারে ১৯০ ইউনিট। অর্থাৎ প্রায় ৫ গুন্ কমে যায়।

ইউসিএল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ ইনফরম্যাটিক্সের প্রফেসর রব অলড্রিজ বলেছেন, "যখন আমরা বুস্টার ডোজগুলির জন্য কাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত সে সম্পর্কে গবেষণা চালাচ্ছি তখন দেখতে পাই যারা আগে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদের দেহে অ্যান্টিবডি স্তর সবচেয়ে কম দেখা গেছে।'' এই অনুসন্ধান দেখে গবেষকরা পরামর্শ দিচ্ছেন যাঁদের বয়স ৭০ বছরের বেশি বা যাঁরা শারীরিকভাবে দুর্বল তাঁদের বুস্টার ডোজ নেওয়া উচিত। এছাড়াও, যাদের অ্যাস্ট্রাজেনিকা ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল তাদের দেহে ফাইজার ভ্যাকসিনের চেয়ে অ্যান্টিবডি মাত্রা অনেক কম থাকতে পারে বলে গবেষকরা উল্লেখ করেছেন। প্রফেসর রব অলড্রিজের মতে , বুস্টার ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে কাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত এই তথ্য সেই কাজে সাহায্য করবে।

গবেষকরা উল্লেখ করেছেন যে, পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটি ব্যক্তি যেহেতু কেবল একটি নমুনা প্রদান করেছে তাই তারা এখনও প্রতিটি ব্যক্তির জন্য অ্যান্টিবডি স্তর কত দ্রুত কমে যায় তা নিশ্চিত করতে পারেনি। সেই সঙ্গে বিভিন্ন মানুষের ইমিউনিটি লেভেলও বিভিন্ন হয়ে থাকে। তাই তাদের দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা কীভাবে গড়ে উঠবে সেটাও নির্ভর করে তাদের ইমিউনিটি লেভেলের ওপর। এমনকি অ্যান্টিবডি স্তর কম থাকলেও শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার অনেকদিন ধরে দেহকে দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা দিতে পারে বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status