বিশ্বজমিন

জিন্স পরায় ভারতে বালিকা হত্যা

মানবজমিন ডেস্ক

২৭ জুলাই ২০২১, মঙ্গলবার, ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন

ভারতের উত্তর প্রদেশের এক গ্রামে জিন্সের প্যান্ট পরার কারণে ১৭ বছর বয়সী এক বালিকাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তার দাদা-দাদি ও চাচারা। এরপর তার মৃতদেহ অটোরিক্সায় করে নিয়ে একটি সেতু থেকে রশি দিয়ে ঝুঁলিয়ে দেয়, যাতে মানুষ দেখে মনে করে সে আত্মহত্যা করেছে। এ অভিযোগে মামলা করেছেন ওই বালিকার মা শকুন্তলা দেবী। ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, ঘটনার শিকার বালিকার নাম নেহা পাসোয়ান। তার মা শকুন্তলা দেবী বলেছেন, নেহা জিন্সের প্যান্ট পরার কারণে এ নিয়ে দেওরিয়া জেলার সাবরেজি খার্গ গ্রামের বাড়িতে দাদা ও চাচাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় নেহার। সাবরেজি খার্গ রাজ্যের সবচেয়ে অনুন্নত গ্রামগুলোর একটি।

শকুন্তলা দেবী বলেছেন, ঘটনার দিন সারাদিন উপোস ছিল নেহা। সন্ধ্যায় সে একটি জিন্সের প্যান্ট আর উপরে একটি টপ পরে। এভাবেই সে তার ধর্মীয় রীতি পালন করছিল। কিন্তু তার পোশাক নিয়ে আপত্তি তোলেন তার দাদাদাদি। নেহা তাদেরকে জানায়, এই জিন্স তো বানানো হয়েছে পরার জন্য। সে এটা পরবেই। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি তুমুল পর্যায়ে যায়। এ থেকে সহিংস আচরণ করে তার চাচারা ও দাদা। তারা তাকে বেদম প্রহার করতে থাকে। এতে নেহা অচেতন হয়ে পড়লে সংশ্লিষ্টরা একটি অটোরিক্সা ডাকে। জানায়, তারা নেহাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে।

শকুন্তলা দেবী বলেন, তারা আমাকে সঙ্গে নেয়নি। আমি এ বিষয়টি আত্মীয়স্বজনদের জানাই। তাদেরকে বলি হাসপাতালে খোঁজ নিতে। কিন্তু কোন হাসপাতালে নেহাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। শকুন্তলা দেবী বলেন, পরের দিন সকালে তিনি শুনতে পান গন্ধক নদীর ওপরে একটি সেতু থেকে তার মেয়ের লাশ ঝুলে আছে। এ খবরে আত্মীয়রা সেখানে ছুটে যান। দেখতে পান, সত্যি ওটা নেহার মৃতদেহ।

এ ঘটনায় হত্যা ও প্রমাণ ধ্বংসের অভিযোগে পুলিশ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছে। এর মধ্যে আছেন নেহার দাদাদাদি, চাচারা, চাচীরা, চাচাতো ভাইয়েরা ও অটোরিক্সা চালক। সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা শ্রীয়াশ ত্রিপাঠি বিবিসিকে বলেছেন, নেহার দাদাদাদি, এক চাচা ও অটোরিক্সা চালকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অভিযুক্ত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

নেহার পিতা অমরনাথ পাসোয়ান। তিনি একজন দিনমজুর। কাজ করেন পাঞ্জাবের লুধিয়ানা শহরে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে। মেয়ের এই খবর শুনে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। বলেছেন, আমি নেহাসহ সব সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর জন্য কঠিন পরিশ্রম করি। শকুন্তলা দেবী বলেন, আমার মেয়ে পুলিশ অফিসার হতে চেয়েছিল। এখন তার সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। তিনি আরো অভিযোগ করেন, তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন নেহাকে স্থানীয় স্কুলে পড়া বন্ধ করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। মাঝেমাঝেই তাকে পোশাক নিয়ে তিরস্কার করতো।
নেহা আধুনিক পোশাক পরা পছন্দ করতো।

তার পরিবার দুটি ছবি শেয়ার করেছে। তার একটিতে তাকে দেখা যায় একটি লম্বা পোশাক পরা। অন্যদিকে দেখা যায় একটি জিন্স এবং জ্যাকেট পরা। অধিকার বিষয়ক কর্মীরা বলছেন, নারী বা যুবতীদের বিরুদ্ধে এমন সহিংসতা পরিবারের ভিতরেই হয়ে থাকে। ভারতে মেয়ে শিশু এবং নারীরা মারাত্মক হুমকির মোকাবিলা করেন। তারা জন্ম নেয়ার আগেই পরিবারের ক্ষোভের শিকার হন। মায়ের পেটে থাকতেই তাদের ভ্রুণ নষ্ট করে দেয়ার ঝুঁকি থাকে। কারণ, পরিবারগুলোতে ছেলে শিশুর প্রতি আকাঙ্খা থাকে। এসব কারণে গৃহসহিংসতা ব্যাপক। গড়ে যৌতুক দাবিতে প্রতিদিন ২০ জন নারীকে হত্যা করা হয়। ছোট শহর বা গ্রামে বসবাসকারী নারী বা বালিকারা গ্রাম্য প্রধান অথবা পরিবারের চাপে মারাত্মক বিধিনিষেধের মধ্যে থাকেন। মাঝে মাঝে তাদেরকে বলে দেয়া হয় তারা কি পরতে পারবেন। তারা কোথায় যেতে পারবেন এবং কার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status