দেশ বিদেশ

সরজমিন ডিএনসিসি হাসপাতাল

চার হাসপাতাল ঘুরে ঠাঁই পেলো রোগী

পিয়াস সরকার

২৭ জুলাই ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:৫৮ অপরাহ্ন

মা, মেয়ে করোনা আক্রান্ত। মায়ের থেকে মেয়েরই অবস্থা সংকটাপন্ন। লাগছে অক্সিজেন। জীবন বাঁচাতে চাই হাসপাতালে সিট। কিন্তু মিলছে না কোথাও। তিন ঘণ্টা এম্বুলেন্সে যুদ্ধ করে চার হাসপাতাল ঘুরে ভর্তি হন রাজধানীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে।
মায়ের নাম শিল্পী ও মেয়ের নাম প্রকৃতি। তারা থাকেন রাজধানীর আজমপুরে। ঈদের দিন থেকে জ্বরে ভুগছিলেন তারা। করোনা পরীক্ষা করে জানতে পারেন পজেটিভ। বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু আক্রান্ত অবস্থায় প্রকৃতি শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকেন। এরপর তার মামা ও মামির সহযোগিতায় হাসপাতালে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
করোনার এ ঊর্ধ্বগতিতে হাসপাতালে সিট মেলা দায়। আজমপুর থেকে এম্বুলেন্সে নেয়া হয় মহিলা ও শিশু হাসপাতাল উত্তরায়। সেখানে ভর্তি হতে না পেরে আনা হয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। সেখান থেকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে। ভর দুপুরে তিন ঘণ্টার অপেক্ষা শেষে তাদের ভর্তি করানো হয় ডিএনসিসি হাসপাতালে।
হাসপাতালে নিয়ে আসার পর শিল্পী ভাইয়ের শরীরে ভর দিয়ে হেঁটে ভেতরে প্রবেশ করেন। কিন্তু প্রকৃতির হাঁটার শক্তি নেই। আর অক্সিজেন ছাড়া থাকতে পারেন না এক মুহূর্ত। মাকে চিকিৎসকের কাছে নেয়া সম্ভব হলেও প্রকৃতিকে নেয়া হলো হুইলচেয়ারে। প্রকৃতির মামা বলেন, চার হাসপাতাল ঘুরে যখন সিট পাচ্ছিলাম না তখন খুব হতাশায় ভুগি। যেখানেই যাই বলতে থাকে সিট খালি নাই। এক পরিচিত চিকিৎসকের পরামর্শে এখানে এসেই সিট পেয়ে যাই। যদিও বলা হয়েছে আইসিইউ সেবা খালি নাই। তারপরেও অক্সিজেনটা মিলছে এই অনেক।
ডিএনসিসি হাসপাতালে সরজমিন গতকাল দুপুরে দেখা যায় একে একে আসতে থাকেন রোগী। পূর্বে এম্বুলেন্সের আধিক্য থাকলেও এবারে ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি লক্ষ্য করা যায়।
কুমিল্লার চান্দিনা থেকে মাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন শাহজাহান পাটোয়ারী। বলেন, আম্মার জ্বর জ্বর ভাব ছিল বেশ কয়েকদিন। হঠাৎ গত শুক্রবার রাতে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। কুমিল্লায় হাসপাতালে নিই। টেস্ট করানোর পর পজেটিভ আসে। কিন্তু অক্সিজেন লেবেল ৭০ এ নেমে যাওয়ায় ডাক্তারদের পরামর্শে নিয়ে আসি এখানে। আসার সঙ্গে সিট পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।
দুপুরে থাকা অবস্থায় প্রায় ১২ জন রোগী আসেন। সকলেই ভর্তির সুযোগ পান। তথ্য ও অনুসন্ধান কেন্দ্র থেকে জানানো হয়, এখান থেকে কোনো রোগীকে ফেরত পাঠানো হয় না। রোগী ভর্তির পর্যাপ্ত আসন রয়েছে। তবে নেই আইসিইউ।
হঠাৎই এক মহিলা কান্না শুরু করেন হাসপাতালের বাইরে। কাছে গিয়ে জানতে পারি, শাহাদাত হোসেন, ১২ দিন যাবৎ হাসপাতালে ভর্তি। শেষ চারদিন আছেন আইসিইউতে। সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন হাসপাতালে। সঙ্গে আছেন ছেলে ও তার চাচাতো ভাই। হাসপাতালের বাইরে ফুটপাথে বোনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ছেলে শামস হোসেন। কিন্তু অপেক্ষা করলেও বাবার কাছে যেতে দেননি ভাই। তিনি বোনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, একসঙ্গে সবাই আক্রান্ত হওয়ার দরকার আছে। আব্বারে দেখতে যেয়ে নিজে আক্রান্ত হওয়ার দরকার নেই। তার বোন বলতে থাকেন, আব্বার অবস্থা ভালো না। আমারে একটাবার দূর থেকে দেখতে দেও। আব্বার যদি কিছু হয় শেষ দেখাটাও করতে পারবো না। সিরাজগঞ্জ থেকে মাইক্রো ভাড়া করে আসলাম আব্বারে না দেখেই চলে যাবো।
বেশকিছু সময় কান্নার পর বোনের কথার কাছে হার মানলেন ভাই। সঙ্গে ছেলে ও স্বামীকে নিচে রেখে দেখা করতে গেলেন বাবার সঙ্গে।
এ ছাড়াও শ্যামলী নামে এক রোগীর দেখা মেলে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে। তিনি ঈদের আগের দিন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। বর্তমানে কোভিড নেগেটিভ। কিন্তু নানা জটিলতায় ভুগছেন তিনি। মাথায় গোটা উঠেছে, জ্বর আসে প্রতি রাতেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এসেছিলেন তিনি। পরামর্শ নিয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন তিনি। কোভিড থেকে সুস্থ হলেও ঠিকমতো হাঁটতে পারছিলেন না শ্যামলী। স্বামীর কাঁধে ভর দিয়ে খুব ধীরে ওঠেন গাড়িতে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status