দেশ বিদেশ

সরজমিন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল

পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না সোহরাওয়ার্দীতে

আলতাফ হোসাইন

২৭ জুলাই ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:৫৫ অপরাহ্ন

রোববার রাতে হঠাৎ শরীরে জ্বর আসে ধামরাই উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা শহিদুল ইসলামের (৩৫)। এরপর শুরু হয় ডায়রিয়া ও বমি। রাতেই ৮-১০ বার পাতলা পায়খানা ও কয়েকবার বমি হয়। এতে তার শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। সেইসঙ্গে দুই চোখ রক্তের মতো লাল আকার ধারণ করায় ঘাবড়ে যায় তার পরিবার। তাই দ্রুত এম্বুলেন্সে করে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু হাসপাতালে এসে বিপাকে পড়েন তার স্বজনরা। হাসপাতাল থেকে জানানো হয় আপাতত বেড খালি নেই। তাই প্রাথমিকভাবে দেখে হাসপাতালের গেটের পাশেই শুইয়ে রাখা হয় শহিদুলকে। কিন্তু ক্রমেই শহিদুল নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তার বৃদ্ধ বাবা জানান, এর আগে ডায়রিয়া হলেও এমন অবস্থা কখনো হয়নি তার ছেলের। শহিদুলের মতোই বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ নিয়ে আরও অনেকেই আসছেন হাসপাতালে। কারও জ্বর ঠাণ্ডা, কারও বা শ্বাসকষ্ট, সেইসঙ্গে পাতলা পায়খানা, চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করাসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে। তবে হাসপাতালে এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে মিলছে না আইসিইউ। দেখা দিয়েছে সাধারণ বেডের সংকটও।
সরজমিন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, কিছুক্ষণ পর পর এম্বুলেন্স কিংবা সিএনজিতে করে নানা বয়সী রোগী আসছেন হাসপাতালের গেটে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই করোনা উপসর্গ নিয়ে আসছেন। গুরুতর রোগীরা আইসিইউ খালি না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। রোগীদের বেশিরভাগই ঢাকার বাইরে থেকে আসছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, বর্তমানে করোনা রোগীর চাপ বেড়েছে। আইসিইউ খালি না থাকলেও বেডের সংকট নেই বলেও জানান তারা। তবে বেড না পাওয়ায় হাসপাতালের মেঝেতে রোগীদের শুইয়ে রাখতে দেখা যায়। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের স্টাফরা বেড খালি নেই বলে জানিয়েছেন। তাই আপাতত রোগীকে মেঝেতে রাখতে বলেছেন তারা। এছাড়া হাসপাতালের গেটে অনেক রোগীকে ভর্তির জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। আইসিইউ না পেয়ে গেট থেকেই অনেক রোগীকে ফেরত যেতে দেখা যায়।
ধামরাই থেকে আসা শহিদুলের স্ত্রী বলেন, প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে গেটেই অবস্থান করছি। এখানে এসে স্টাফদের বললাম, তারা বলছে বেড খালি নেই। অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু তার শরীরের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কাল রাত থেকেই জ্বর আর সঙ্গে বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। আগেও ডায়রিয়া হয়েছে কিন্তু এর আগে এমন হয়নি কখনো। তার চোখ দু’টি রক্তের মতো লাল হয়ে গেছে। তাই দ্রুত এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে আসছি। কিন্তু এখানে এসে খুব হয়রানি হতে হচ্ছে। তারা বলছে বেড খালি নেই।
অন্যদিকে, আইসিইউ খালি না থাকায় অনেক রোগীকে ফেরত যেতে দেখা গেছে। গতকাল সকালে সোহরাওয়ার্দীতে আসেন মিরপুর ৬০ ফিটের বাসিন্দা আবুল কাশেম (৬৫)। কয়েকদিন আগে করোনায় তার মেয়ের জামাই মারা যান। এরপরই তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে সোহরাওয়ার্দীতে আসলে আইসিইউ খালি নেই বলে জানান হাসপতালের নার্সরা। তাই অনেকক্ষণ সাধারণ বেডে রাখা হয় তাকে। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউ’র খোঁজে সোহরাওয়ার্দী থেকে গ্রীন রোডের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় রোগীর স্বজনরা জানান, কয়েকদিন আগেই করোনায় তার মেয়ের জামাই মারা গেছেন। এরপরই তার শরীরে প্রচণ্ড জ্বর আসে এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। হাসপাতালের পরিচালক খলিলুর রহমান মানবজমিনকে জানান, আপাতত আইসিইউ খালি না থাকলেও সাধারণ বেডের কোনো সংকট নেই। তবে হাসপাতালে রোগীর অনেক চাপ বেড়েছে। তাই আরও বেড বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের এখানে ২৫০ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে ঢাকার বাইরের রোগী বেশি। আমাদের এখানে ৪০০ বেড করোনা রোগীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। রোগীর চাপ বাড়ায় ইতিমধ্যেই বেডের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ মাসেই আরও ১০০ বেড বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি। খলিলুর রহমান বলেন, আমরা এই সংকটকালে মানুষকে বাঁচাতে নিজেদের একদম বিলিয়ে দিয়েছি। রোগীর যত চাপ বাড়ছে ততই আমাদের দায়িত্ব বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের আইসইিউ বেডের সংকট রয়েছে। তবে আমরা হাল ছাড়িনি। সব রকম চেষ্টা আমাদের অব্যাহত রয়েছে। শেষ পর্যন্ত আমরা চেষ্টা করে যাবো। প্রয়োজন হলে আরও বেড বাড়ানোর নির্দেশনাও রয়েছে বলে জানান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status