এক্সক্লুসিভ

সরজমিন মুগদা হাসপাতাল

রোগী ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে মুগদায়

শুভ্র দেব

২৭ জুলাই ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:৫৩ অপরাহ্ন

গতকাল দুপুর ১২টা। করোনা ডেডিকেটেড মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এসে থামে একটি এম্বুলেন্স। থামার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যবয়সী এক নারী তড়িঘড়ি করে কিছু কাগজপত্র নিয়ে হাঁটা শুরু করেন। জরুরি বিভাগে কিছুক্ষণ কথা বলে সঙ্গে নিয়ে আসেন একজন মেডিকেল স্টাফকে। যাকে নিয়ে আসেন তিনি পালস অক্সিমিটার দিয়ে এম্বুলেন্সের ভেতরে থাকা এক রোগীর অক্সিজেন লেভেল মাপেন। তারপর আবার ওই মধ্যবয়সী নারীকে নিয়ে জরুরি বিভাগে যান। ওই নারী আরও কিছুক্ষণ পরে সেখান থেকে ফিরে এসে এম্বুলেন্সে ওঠেন।
কি হয়েছে? জানতে চাইলে রেহেনা বেগম নামের ওই নারী বলেন, কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বেতরা গ্রাম থেকে গত শুক্রবার ঢাকার ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে এসেছি। গত সপ্তাহে আমার মামা আবু তাহের (৫২) হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যান। তাকে উদ্ধার করে নেয়া হয় কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তার হার্টে দুটি ব্লক ধরা পড়ে। সেখানকার চিকিৎসকরা রোগীকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। আমার মামা গত শুক্রবার থেকে সেখানেই ভর্তি ছিলেন। এরইমধ্যে তার শরীরে করোনা উপসর্গ মিলে ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ রেজাল্ট আসে। শ্বাসকষ্ট থাকায় ওই হাসপাতাল থেকে মামাকে মুগদা হাসপাতালে ভর্তির জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু এখানে আসার পর মামার অক্সিজেন লেভেল বিপদসীমায় আছে বলে তারা জানায়। কিন্তু শয্যা সংকট থাকায় মামাকে ভর্তি নেয়া হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের রোগীকে ডিএনসিসি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এখন মামাকে নিয়ে সেখানেই যাচ্ছি। জানিনা সেখানে সিট পাবো কিনা।
শুধু রেহানা বেগমের মামা নন গতকাল দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মুগদা হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে অন্তত ১০ জন রোগী ফিরে গেছেন। এসব রোগী বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে শয্যা না পেয়ে এসেছিলেন মুগদা হাসপাতালে। কিন্তু এখানে আশাহত হয়ে ফিরতে হয়েছে তাদেরকে। মুগদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাসপাতালটিতে করোনা রোগীদের জন্য সবমিলিয়ে ৩৮৪টি শয্যা আছে। এরমধ্যে আইসিইউ শয্যা আছে ২৪টি। যার একটিও খালি নাই। এইচডিইউ ১০টি শয্যার একটিও খালি নাই। আর ডায়ালাইসিসের ১৬টি শয্যাও রোগীপূর্ণ। আর সাধারণ শয্যাগুলোও রোগীতে পূর্ণ। হাসপাতাল সূত্র বলছে, জটিল রোগীদের জন্য কিছু শয্যা রাখা হয়েছে। জটিল রোগী আসলে ভর্তি নেয়া হচ্ছে। আর কোনো রোগী ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেলে শয্যা ফাঁকা হয়। এসব শয্যায় নতুন রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে। নরসিংদীর রায়পুরা থেকে মুগদা হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার জন্য আনা হয় ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা জব্বার শেখকে (৬৫)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস ও কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। কয়েকদিন ধরে তার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ আসে। বাড়িতে থাকা নিরাপদ নয় মনে করে স্বজনরা নরসিংদীর একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু রোগীর অবস্থা দেখে সেখান থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। জব্বার শেখের ছেলে আল আমিন শেখ বলেন, ঢাকায় এসে প্রথমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই বাবাকে। সেখানে নাকি সক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি রোগী ভর্তি। তারপর সেখান থেকে নিয়ে যাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে শয্যা সংকট দেখানো হয়েছে। মুগদা মেডিকেলে আসার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলা হয়েছে ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালে যাওয়ার জন্য। এখন বাবাকে নিয়ে সেখানেই যাচ্ছি।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বাসিন্দা হাশেম মিয়া করোনা পজেটিভ হয়েছেন গত শুক্রবারে। শরীরে করোনার উপসর্গ থাকায় স্বজনরা তার নমুনা পরীক্ষা করান। গত শনিবার রাত থেকে হামেশের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। অক্সিজেন লেভেল দ্রুত কমে যাওয়ায় তার আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। তাই গত রোববার রাত থেকে হাশেমের স্বজনরা ঢাকার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ খোঁজ করছিলেন। কিন্তু কোথাও আইসিইউ শয্যার ব্যবস্থা করতে পারেননি। পরিচিত একজন আশ্বাস দিয়েছিল মুগদা হাসপাতালে একটি আইসিইউ শয্যা ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। সেই আশায় ছাড়পত্র নিয়ে গতকাল দুপুর ১টার দিকে একটি এম্বুলেন্সে করে মুগদা হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আসার পর প্রায় আধাঘণ্টা অপেক্ষা করে আশ্বাস দেয় ওই ব্যক্তিকে আর খুঁজে পায়নি হাশেমের স্বজনরা। এদিকে মুগদা মেডিকেলে খোঁজ করে তারা আইসিইউ শয্যার ব্যবস্থা করতে পারেননি। পরে উপায়ান্তর না পেয়ে মুগদা মেডিকেলের পরামর্শে হাশেমকে নেয়া হয় ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে।
সরজমিন দেখা গেছে অন্যদিনের চেয়ে গতকাল হাসপাতালে রোগীর চাপ তুলনামূলক কম ছিল। অন্যদিন যে রকম একসঙ্গে অনেক রোগী এসে জরুরি বিভাগের সামনে ভিড় করতেন। গতকাল দুপুর থেকে কয়েক ঘণ্টা ওই রকম চাপ ছিল না। তবে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা রোগীরা ভিড় করেছেন বলে জানিয়েছে মুগদা হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। রোগীর অবস্থা বুঝে বিশেষ করে জটিল রোগী দেখে কিছু ফাঁকা শয্যায় রোগী ভর্তি নেয়া হয়েছে। করোনা পজেটিভ কিন্তু শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালো এমন রোগীদের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status