প্রথম পাতা

পেগাসাস ইস্যুতে দুই মন্ত্রীকে চিঠি

কাজী সোহাগ

২৭ জুলাই ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:৪২ অপরাহ্ন

ইসরাইলের এনএসও গ্রুপের তৈরি ফোনে আড়ি পাতা বিষয়ক প্রযুক্তি পেগাসাস স্পেসওয়্যার ইস্যুতে এবার দুই মন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। গতকাল স্বরাষ্ট্র ও তথ্যমন্ত্রীকে ওই চিঠি পাঠানো হয়। তবে দুই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো জবাব দেয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে এসোসিয়েশনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, বিষয়টি জানতে দুই মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। এখন অপেক্ষা জবাবের। রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ও মোবাইল গ্রাহকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, চিঠিতে আমরা দাবি করেছি, পেগাসাস স্পেসওয়্যার থেকে গ্রাহকদের নিরাপত্তা প্রদান এবং বাংলাদেশের নাম আসার বিষয়টি তদন্তপূর্বক তথ্য প্রকাশ করতে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্বে ভয়াবহ রকম মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে এমন সব দেশ বা সেখানে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিভাগগুলো ব্যবহার করছে এই প্রযুক্তি। বেশকিছু দেশে তা ব্যবহার করা হচ্ছে বা হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এমন ইঙ্গিতও মিলেছে। ফলে অপরাধ তদন্তের বৈধ একটি হাতিয়ার এই প্রযুক্তি, এমন দাবি করলেও এর ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। এতে আছে বাংলাদেশের নাম। যদিও ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বিষয়টি নাকচ করেছেন।
চিঠিতে যা আছে-
এদিকে দুই মন্ত্রীর কাছে পাঠানো পৃথক চিঠিতে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন বলেছে-মাননীয় মন্ত্রী, আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক, স্বেচ্ছাসেবীমূলক সামাজিক প্রতিষ্ঠান। গ্রাহক প্রতিকার ও গ্রাহকদের নিরাপত্তা রক্ষায় দীর্ঘদিন যাবৎ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। মাননীয় মন্ত্রী, আপনি ইতিমধ্যে অবগত হয়েছেন যে, দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমগুলো পেগাসাস স্পেসওয়্যার নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে এক প্রকার ভয়ভীতি ও আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও বিশ্বের ১৬টি শীর্ষ দৈনিকের করা তদন্তে ৪৫টি রাষ্ট্রের, সরকারি আধা-সরকারি, সাংবাদিক, অধিকার কর্মী, রাজনৈতিক ব্যক্তি এমনকি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মুঠোফোনে প্রবেশ করে সকল তথ্য হাতিয়ে নেয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রথমে ১০টি রাষ্ট্রের তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই। তবে আমাদের প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের অর্থাৎ ভারতের নাম রয়েছে। তবে এই তদন্ত কমিটির অন্যতম শীর্ষ পার্টনার দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করে প্রকাশ করেছে। এই সংবাদ আমরা বিবিসিসহ গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমেও দেখেছি। আমাদের বিশ্বাস বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই এমনটি করা হতে পারে। যেমনিভাবে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরা কর্তৃক ইসরাইল থেকে ইমচি ক্যাচার আমাদের সেনাবাহিনী ক্রয় করেছিল বলে সংবাদ প্রচার করে। ইসরাইল সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকা ও ইসরাইল থেকে এ ধরনের প্রযুক্তি পণ্য ক্রয় করার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে সেই সময় আইএসপিআর প্রতিবাদ করেছিল। মাননীয় মন্ত্রী, বর্তমান সরকার বিগত সকল সরকারের চাইতে রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ও আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে বলে আমরা মনে করি। তদুপরি যেহেতু বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনার ঝড় উঠেছে তাই দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা ও সংবিধানের ৪৩ (খ) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য অধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে, তাই আমরা আপনার মাধ্যমে একটি তদন্তপূর্বক বিষয়টি জনস্বার্থেই প্রকাশ করার অনুরোধ করছি। উল্লেখ্য, পেগাসাস পরিচালনায় থাকা একাধিক অপারেটর নিজেদের মধ্যে ক্লাউড সার্ভার অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভাগাভাগি করছে। ফলে যেকোনো মুহূর্তেই দখল করা স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য দুনিয়ার সামনে প্রকাশ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। কোন কোন দেশে এই নজরদারি করা হয়েছে তা পরিষ্কার জানা না গেলেও সবচেয়ে বেশি ফোনকলে আড়ি পাতা হয়েছে ১০টি দেশে। এসব দেশ হলো- আজারবাইজান, বাহরাইন, হাঙ্গেরি, ভারত, কাজাখস্তান, মেক্সিকো, মরক্কো, রুয়ান্ডা, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। কি পরিমাণ মানুষ এর শিকারে পরিণত হয়েছেন, তার প্রকৃত সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status