দেশ বিদেশ

দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রোড শো শুরু

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২৭ জুলাই ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:১৩ অপরাহ্ন

দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে শুরু হলো রোড শো। ১০ দিনব্যাপী এই শোতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য, বাংলাদেশি পণ্য ও সেবা, শেয়ারবাজার এবং বন্ড মার্কেটকে তুলে ধরা হবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উদ্যোগে স্থানীয় সময় ২৬শে জুলাই সকালে নিউ ইয়র্ক সিটির কেন্দ্রস্থল ম্যানহাটনে শুরু হয় প্রথমদিনের কর্মসূচি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের শেয়ারবাজারের ব্যাপ্তি ও প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য পুঁজিবাজার বিএসইসি এই উদ্যোগ নিয়েছে।
অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তির বিবেচনায় বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী এই দেশটিতে বাংলাদেশকে তুলে ধরে বিদেশি ও অনাবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ আকর্ষণ এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে প্রবাসীরা যাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে সে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
পুরো কর্মসূচির নাম দেয়া হয়েছে ‘রেইজ অব বেঙ্গল টাইগার’। স্থানীয় সময় গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় নিউ ইয়র্কের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই কর্মসূচির উদ্বোধন হয়। পর্যায়ক্রমে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ আরও তিন শহর ওয়াশিংটন ডিসি, লস অ্যাঞ্জেলেস ও সান ফ্রান্সিসকোতে রোড শো চলবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফাইন্যান্স ডিভিশনের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রেসিডেন্ট লরেন্স হেনরি সামার্স, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবিএম রুহুল আজাদ এবং বিএসইসির কমিশনার ড. মিজানুর রহমান।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক বাজারে বন্ড ছাড়ার ঘোষণা দেবে বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি ‘নগদ’। প্রোগ্রামে স্পন্সর হিসেবে রয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক, নগদ এবং ওয়ালটন। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও কামরুল আনাম খান।
বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় অগ্রগতি হয়েছে। অর্থনীতির সবগুলো সূচকে আমরা এগিয়েছি। সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করলে আগামী দিনে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা বিশাল। কিন্তু আমাদের অর্থনীতিতে যে অর্জন ও সম্ভাবনা রয়েছে, উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের কাছে তা তুলে ধরা হয়নি, যে কারণে আমাদের ওইভাবে বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। এ কারণে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য আমরা এ ধরনের রোড শোর উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, এরআগে আমরা দুবাইতে একটি রোড শো করেছি। সেখানে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। পর্যায়ক্রমে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন দেশে এই ধরনের আরও আয়োজন থাকবে।
অনুষ্ঠানের মূল উপস্থাপনায় বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে ২০৫০ সালে বিশ্বের ২৩তম অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হলো বাংলাদেশ। একই পূর্বাভাস দিয়েছে আরেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি)।
গত ১০ বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ। আর মোট জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৩১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধিকে সাপোর্ট দিতে ২০২০ সালে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।
২০১১ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৮৬০ ইউএস ডলার। বর্তমানে তা ২ হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) ১০.৮৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল।
নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠানের প্রথমদিনে দুটি সেশন রাখা হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম সেশনে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের প্রবাসী বিনিয়োগকারী সম্মেলন এবং একই দিনে দ্বিতীয় সেশনে বিদেশি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সম্মেলন। ২৮শে জুলাই ওয়াশিংটনে দ্য রিটজ কার্লটনে অনুষ্ঠিত হবে স্টেক হোল্ডার্স মিটিং বা অংশীজন বৈঠক।
৩০শে জুলাই লস অ্যাঞ্জেলেসের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে হবে বিনিয়োগকারী সম্মেলন। সর্বশেষ ২রা আগস্ট সান ফ্রান্সিসকোর হোটেল হায়াত রিজেন্সিতে হবে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ সম্মেলন। এসব সম্মেলনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তা, বেসরকারি উদ্যোক্তা, অনাবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তারা অংশ নেবেন। আয়োজকরা ধারণা করছেন, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি নতুন করে পরিচিতি পাবে।
এদিকে বিশ্ব বাজারে নিজেদের জায়গা করার লক্ষ্যে ওয়ালটন এই রোড শোকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এই রোড শোকে কেন্দ্র করে ওয়ালটনের দশ সদস্যের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদল এখন নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছে। প্রতিনিধিদলে রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ, পরিচালক তাহমিনা আফরোজ তান্না, নিশাত তাসনিম শুচি, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাশার হাওলাদার, চিফ মার্কেটিং অফিসার ফিরোজ আলম।
ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ এই রোড শো প্রসঙ্গে বলেন, এই রোড শোকে কেন্দ্র করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মনোযোগ এবং আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন ওয়ালটন। ওয়ালটনের লক্ষ্য এখন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ব্র্যান্ড হওয়া। গ্লোবাল ব্র্যান্ড হতে হলে দেশের বাইরে গিয়ে বিশ্বকে জানান দিতে হবে। আমেরিকায় আমাদের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এসেছে। তারা দেখবেন এখানে কি কি সম্ভাবনা আছে। তাদের রিপোর্ট এবং অবজারভেশনের ওপর ভিত্তি করে ওয়ালটন তার গ্লোবাল রোড ম্যাপ তৈরি করবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status