বিশ্বজমিন

করোনা: তিউনিশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত, পার্লামেন্ট স্থগিত, ‘অভ্যুত্থানের’ অভিযোগ স্পিকারের

অনলাইন ডেস্ক

২৬ জুলাই ২০২১, সোমবার, ৯:৪৪ পূর্বাহ্ন

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভুল পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তিউনিশিয়ায় হাজার হাজার মানুষ রাজপথে বিক্ষোভ করেছেন রোববার। এদিন রাস্তায় রাস্তায় প্রতিবাদী জনতার বাণ ডাকে। এ সময়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। কোনো হতাহতের খবর জানা না গেলেও দেশটির প্রেসিডেন্ট কায়েস সাঈদ তার প্রধানমন্ত্রী হিচেম মেচিচি’কে বরখাস্ত করে পার্লামেন্ট স্থগিত করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, একজন নতুন প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় তিনিই দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্য দিয়ে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু তার এ পদক্ষেপকে বিরোধীরা দেখছেন একটি অভ্যুত্থান হিসেবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

রোববার জরুরি নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাঈদ। এরপর টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, তিউনিশিয়ায় যতক্ষণ সামাজিক শান্তি ফিরে না আসবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাষ্ট্রকে নিরাপদ না করতে পারবো, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। অর্থাৎ পার্লামেন্ট স্থগিত থাকবে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী হিশেমকে বরখাস্ত করার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিক্ষোভকারীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। এ অবস্থায় রাজধানী তিউনিসে বিক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে যোগ দেন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাঈদ।

রোববার হাজার হাজার মানুষ রাজধানী তিউনিসে এবং অন্যান্য শহরে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে যোগ দেন। তারা চিৎকার করে বলতে থাকেন- ‘গেট আউট’। অর্থাৎ বিদায় হও। একইসঙ্গে তারা পার্লামেন্ট বাতিল করার দাবি জানাতে থাকেন। এ সময় পার্লামেন্ট ভবন চারদিক থেকে ঘেরাও করে রাখে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। ২০১১ সালে তিউনিশিয়ায় সরকার বিরোধী বিক্ষোভের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল কেন্দ্রীয় এভিনিউ বুরগুইবা। এর চারদিকের সড়কও অবরোধ করে রাখে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা।

বিক্ষোভকারীদের দিকে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। বিভিন্ন শহর থেকে গ্রেপ্তার করেছে বেশ কিছু বিক্ষোভকারীকে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরা ঝড়ো গতিতে শাসক দল ইন্নাহদা পার্টি অফিসে প্রবেশ করে কম্পিউটার ভাঙচুর করেছে। তৌজিউরে স্থানীয় প্রধান কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইন্নাহদা পার্টি। হামলাকারীদের তারা অপরাধী গ্যাং বলে আখ্যায়িত করেছে। বলেছে, ওইসব মানুষ বিশৃংখলা এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর চেষ্টা করেছিল।

এই ধারা অব্যাহত থাকলে সামরিক শক্তি ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাঈদ। তিনি বলেছেন, আমি সতর্ক করে বলছি, যে অস্ত্র ব্যবহার করার কথা ভাববে অথবা যে একটি বুলেট ছুড়বে, সেনাবাহিনী বুলেট দিয়ে তার জবাব দেবে। তিনি আরো বলেন, যদি বিপজ্জনক পরিস্থিতি অত্যাসন্ন হয় তাহলে পার্লামেন্ট স্থগিতের অনুমোদন তাকে দিয়েছে সংবিধান।

ওদিকে পার্লামেন্টের স্পিকার রাশেদ ঘানুচি প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। বলেছেন, তিনি বিপ্লব ও সংবিধানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান করেছেন। আমি আশা করি এখনও প্রতিষ্ঠান টিকে আছে। তাই ইন্নাহদা পার্টি এবং তিউনিশিয়ার জনগণের প্রতি আহ্বান জানাই বিপ্লবের পক্ষে দাঁড়াতে।

উল্লেখ্য, এখন থেকে ১০ বছর আগে তিউনিশিয়ায় গণতন্ত্রের দাবিতে গণঅভ্যুত্থান দেখা দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় ওই অঞ্চলে শুরু হয় আরব বসন্ত। এক দশক পরেও সেই তিউনিশিয়ায় অর্থনৈতিক সঙ্কট অনেক গভীরে। আফ্রিকায় যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ, তার মধ্যে তিউনিশিয়ার অবস্থা নাজুক। সম্প্রতি সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এতে ভঙ্গুর অর্থনীতির ওপর আরও চাপ বেড়েছে। গত সপ্তাহে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী হিশেম মেচিচি। কিন্তু তাতে মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি বিন্দু পরিমাণও।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status