প্রথম পাতা

রাষ্ট্রীয় সফর এবং...

কূটনৈতিক রিপোর্টার

২৬ জুলাই ২০২১, সোমবার, ৯:৩৬ অপরাহ্ন

প্রতীকী ছবি

হোস্ট কান্ট্রি বা স্বাগতিক দেশের আড়ম্বরপূর্ণ সম্ভাষণ বা উষ্ণ অভ্যর্থনার মধ্য দিয়ে একটি দেশের প্রেসিডেন্ট বা সরকার প্রধান যখন সেই দেশ সফর করেন সাধারণত তাকে রাষ্ট্রীয় সফর বলা হয়। ‘স্টেট ভিজিট’ বা ‘রাষ্ট্রীয় সফর’-এর নির্ধারক একান্তভাবেই নিমন্ত্রণকারী রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিত্ব বা সরকার। এমন সফরে অতিথিকে বরণে রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা বা অনুষঙ্গ কতোটা যুক্ত হচ্ছে সেটিই মূখ্য বিবেচ্য। রেওয়াজ হচ্ছে আমন্ত্রণ পত্রেই সফরের ক্যাটাগরি উল্লেখ করা। সেই সঙ্গে অতিথির প্রটোকল নির্ধারণ, যেমন রেড কার্পেটে বরণ, গার্ড অব অনার, গান স্যালুট প্রদান এবং অতিথির সম্মানে স্টেট ব্যাঙ্কুয়েট বা রাষ্ট্রীয় ভোজের আয়োজন। আনুষ্ঠানিকতা এবং রাষ্ট্রাচার অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বা সরকার প্রধানই কেবল ‘স্টেট ভিজিট’ করতে পারেন।

আবার রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানের সফর হলেই তাকে ‘রাষ্ট্রীয় সফর’ বলা যাবে না। যদি না ওই সফরের সঙ্গে রাষ্ট্রাচার অনুযায়ী অত্যাবশ্যকীয় উপাদানের সংশ্লেষ থাকে। যেমনটি ঘটেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রথম বৃটেন সফরে। গত মাসে বাইডেন জি-৭ সম্মেলনে যোগদান উপলক্ষ্যে বৃটেন সফর করেন। সেই সময় রানী এলিজাবেথের সঙ্গে তার প্রথম এবং আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ হয়। বাকিংহাম প্যালেসে ১৩ই জুন রানী এলিজাবেথ প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানালেও সেখানে ছিল না রেড কার্পেট এবং স্টেট ব্যাঙ্কুয়েটের কোন আয়োজন। উইন্ডসর ক্যাসেলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে রানী টিয়ারা বা ফরমাল পোশাক পড়েননি বরং তিনি রেগুলার স্মার্ট ড্রেস এবং হ্যাট পরিহিত ছিলেন। বৃটিশ ফরেন অফিসের বরাতে আন্তর্জতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ওই সাক্ষাৎ তথা বৃটেন সফরটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, কিন্তু এটি মোটেও ‘রাষ্ট্রীয় সফর’ ছিল না। তারা এ-ও জানায়, খুব শিগগির বাইডেন এবং জিল আগের মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মতই বৃটেনে ‘রাষ্ট্রীয় সফর’ এর জন্য আমন্ত্রিত হবেন।
স্টেট ভিজিট বা রাষ্ট্রীয় সফরকে দু’টি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সর্বোচ্চ প্রকাশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ওই ভিজিটের মাত্রা বৃদ্ধি বা হ্রাসের অপশন রয়েছে। যেমন রাজা-রানী বা বাদশাহ যখন তার কাউন্টার পার্ট বা রাষ্ট্রপ্রধান কিংবা সরকার প্রধানকে আমন্ত্রণ জানান তখন সেটি ‘রয়েল ভিজিট’ বা রাজকীয় সফরের মর্যাদা পায়। আবার বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রটোকল বা রাষ্ট্রীয় আয়োজনে কমতি হলে স্টেট ভিজিটও অফিসিয়াল ভিজিট বা অফিসিয়াল ওয়ার্কিং লেভেল ভিজিট হিসেবে বিবেচনার অপশন রয়েছে। এ জন্য নতুন ঘোষণার প্রয়োজন নেই বরং আনুষ্ঠানিকতার মাত্রা দেখেই বুঝে নেয়া যায় ভিজিটটা কোন লেভেলে রাখা হয়েছে। সাধারণত রাজা-রানীর প্রাইভেট ভিজিট বা প্লেজার ট্রিপে এমনটি হয়।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অনেক দেশেই অহরহ মন্ত্রী বা কর্মকর্তা পর্যায়ের সফরে ‘স্টেট ভিজিট’ বা ‘রাষ্ট্রীয় সফর’ শব্দগুচ্ছের ব্যবহার হচ্ছে, যার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পেশাদার কূটনীতিক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, দুনিয়াজুড়ে স্টেট ভিজিট বা রাষ্ট্রীয় সফরের কম্পনেন্ট (উপাদান) কমন বা অভিন্ন। যদিও আনুষ্ঠানিকতা বা অভ্যর্থনার আয়োজনের মাত্রায় দেশে দেশে খানিক ভিন্নতা রয়েছে। দেশভেদে কালচার বা সংস্কৃতিগত বৈচিত্র্যতা বা স্বতন্ত্রতার প্রতি অতিথিকে অবশ্যই সম্মান প্রদর্শন করতে হয়। না হলে তিনি সমালোচনার মুখে পড়েন। এমন সমালোচনা নিকট অতীত এবং দূর অতীতেও হয়েছে।

বিবিসি’র রিপোর্ট মতে, ২০১৯ সালে বৃটেনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সর্বশেষ রাষ্ট্রীয় সফরকালে তালগোল পেকে গিয়েছিল। যার কারণে হোস্ট এবং অতিথি উভয়কেই বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। রিপোর্ট মতে, তিনদিনের রাষ্ট্রীয় ওই সফরকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন সব ঘটনা এবং বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। লন্ডনের তৎকালীন মেয়র সাদিক খান সেদিন অতিথি ট্রাম্পকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন। জবাবে ট্রাম্পও সাদিক খানকে একহাত নিয়ে ছাড়েন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিরোধী লেবার পার্টি ও লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির নেতাসহ অনেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্মানে দেয়া রাষ্ট্রীয় ভোজ বয়কট করেছিলেন। কিন্তু প্রতিবাদের মধ্যেও অতিথি বরণের রাষ্ট্রীয় আয়োজনের কোনো কমতি ছিল না। বিশেষ করে বাকিংহাম প্রাসাদে রানী এলিজাবেথ ও প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং রাতে বাকিংহাম প্রাসাদে ভোজের বর্ণাঢ্য আয়োজন ছিল অন্যতম।

তবে ওই আয়োজনগুলো বিশেষত রানীর সঙ্গে সাক্ষাতে অতিথিকে বৃটেন নির্ধারিত বাড়তি রীতিনীতি মেনে চলতে হয়েছে। বিশেষজ্ঞ ডায়ানা ম্যাথার বিবিসিকে যেমনটি বলছিলেন। তার মতে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি বিষয়ের প্রতি অতিথি ট্রাম্পকে সদা-সতর্ক থাকতে হয়েছে। প্রথমত, রানীকে চুমু না খাওয়া। বিবিসি’র রিপোর্ট মতে, ১৯৭৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার তার রাষ্ট্রীয় সফরে এমন ভুল করেছিলেন। তিনি রানীর মা’কে চুমু খেয়েছিলেন, যেটা তিনি একেবারেই পছন্দ করেননি। আগের বারের রাষ্ট্রীয় সফরে রাজকীয় গার্ড অব অনারের সময় রানীর আগে আগে হেঁটে ছিলেন ট্রাম্প, যা ছিল রীতিবহির্ভূত। কিন্তু ওইবার তিনি এ থেকে সতর্ক ছিলেন এবং রানীর পাশাপাশিই হেঁটেছেন। তারও আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একবার নিয়ম ভঙ্গ করে জাতীয় সংগীত বাজার সময় কথা বলে বৃটেনে রাষ্ট্রীয় সফরে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। শুধু বৃটেন নয়, ইউরোপের দেশে দেশে বহু রাজা-বাদশাহ, প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় সফর বিতর্কের মুখে পড়ার রেকর্ড রয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status