প্রথম পাতা

লকডাউনে বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল

স্টাফ রিপোর্টার

২৬ জুলাই ২০২১, সোমবার, ৯:২৭ অপরাহ্ন

ঈদের পর কঠোর লকডাউনের তৃতীয়দিনে ঢাকার রাজপথে চেকপোস্ট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনা সদস্যদের টহলের মধ্যেও ছিল প্রাইভেট গাড়ির আধিপত্য। পথে পথে ছিল রিকশা, অ্যাপসে রাইড শেয়ারকারী মোটরসাইকেল। এ ছাড়া পায়ে হেঁটে চলাচল করতে দেখা গেছে অনেককে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা থেকে শুরু করে নানা অজুহাতে বিচ্ছিন্নভাবে বেরিয়ে ছিলেন তারা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হয়ে জিজ্ঞাসাবাদের শিকার হয়েছেন তাদের অনেকেই। এরমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেকে। ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করা হয়েছে অনেককে।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করে বাইরে বের হয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫৮৭ জন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ২৩৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে এক লাখ ৯৫০ টাকা। এ ছাড়া ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক ৫২১টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ১২ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এ নিয়ে গত তিনদিনে রাজধানীতে মোট গ্রেপ্তার হয়েছেন এক হাজার ৩৭৩ জন।

সকাল থেকেই উত্তরা, গুলশান, মিরপুর, ধানমণ্ডি এলাকায় দেখা গেছে প্রাইভেট গাড়ির আধিপত্য। মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে বিজিবির তত্ত্বাবধানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খায়রুন নাহার। গাড়ি থামিয়ে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন তিনি। অনেকেই সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। ওষুধ কিনতে যাওয়া অজুহাত দেখিয়েছেন কেউ কেউ কিন্তু প্রেসক্রিপশন নেই। প্রেসক্রিপশন থাকলেও নিজ এলাকা উত্তরা ওষুধ না পেয়ে মিরপুরে এসেছেন। এমন নানা অজুহাত ছিল ঘরের বাইরে থাকা লোকজনের। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খায়রুন নাহার জানান, বিধিনিষেধ অমান্যকারী ও মাস্কবিহীন কাউকেই ছাড় দেয়া হয়নি। দুপুরে হাতিরঝিল এলাকার উলন রামপুরা এলাকায় দেখা গেছে, কয়েকশ’ মিটার দূরে দূরে অন্তত ১০টি প্রাইভেটকার দাঁড়ানো ছিল। গাড়ি থামিয়ে গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন কেউ কেউ। কেউ কেউ এসেছিলেন বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে। এমনকি চার-পাঁচজন মিলে প্রয়োজনীয় মিটিং করতেও দেখা গেছে হাতিরঝিলের গাছের ছায়ায়। তাদের অনেকের মুখ ছিল মাস্কবিহীন।
বেলা ২টার দিকে গুলিস্তান জিপিও মোড়ে দেখা গেছে, চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে রাইড শেয়ারকারী মোটরসাইকেল, অনেকগুলো রিকশা ও কয়েক সিএনজি অটোরিকশা। সচিবালয় সংলগ্ন ফুটপাথে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন চালক ও পথচারীরা। ওই সময়ে সেখানে কোনো পুলিশ সদস্যের দেখা মেলেনি। তবে সকালে ওই এলাকায় টহল দিয়েছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। পুরানা পল্টন হয়ে কাকরাইলমুখী সড়কে দুপুরে ছিল র‌্যাবের চেকপোস্ট। মোটরসাইকেল ও পথচারীদের থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিলো সেখানে। তার আগে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শাহবাগ মোড়ে র?্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত শুরু হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু জানান, রাস্তায় যারা বের হয়েছেন সবাইকেই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। যারা সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি তাদের জরিমানা করা হয়েছে।

গুলশান ও বনানী এলাকায় ছিল পুলিশের দুটি চেকপোস্ট। সেখানে পথচারী ও মোটরসাইকেল থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিলো। মোটরসাইকেল আরোহী ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তা অমিত আহমেদ জানান, জরুরি প্রয়োজনে বাসা থেকে গুলশানে এক কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। এরআগে একাধিকবার প্রাইভেটকার ব্যবহার করে ওই পথে গেলে তাকে আটক করা হয়নি। মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে গেলেই দুটি চেকপোস্টে থামতে হয়েছে তাকে। তার ধারণা প্রাইভেটকারগুলোর প্রতি পুলিশের নজরদারি কম।
পথে পথে দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের মানুষের অপেক্ষা। শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণির কাকরাইল মসজিদ সংলগ্ন ফুটপাথে ছিল শত শত মানুষ। সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তারা। দুপুরে তাদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেন এক ব্যক্তি। অপেক্ষমাণ এসব মানুষ জানান, লকডাউনে কাজ না থাকায় সাহায্যের জন্য বসে রয়েছেন। তারা মূলত দিনমজুর। ওই এলাকাতে অনেককে ফুটপাথে শুয়ে থাকতেও দেখা গেছে।

বাড্ডা, রামপুরা, খিলগাঁও, মালিবাগ, সবুজবাগ এলাকায় দেখা গেছে, পথে পথে মানুষ আর রিকশা। অলিগলিতে খোলা ছিল দোকানপাট। তবে সকালে সেনা সদস্যদের একটি টহল টিম ওই এলাকায় গেলে দ্রুত দোকানগুলো বন্ধ করা হয়। এ সময় ফাঁকা হয়ে যায় রাস্তাঘাটও। টহল টিম চলে গেলে আবারো অভিন্ন রূপ ধারণ করে। গাবতলী এলাকা দিয়ে প্রাইভেট গাড়িতে ও পায়ে হেঁটে ঢাকায় ঢুকছিলেন অনেকে। পুলিশের চেকপোস্টে মোটরসাইকেল ও পথচারীদের থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে। পুরান ঢাকার লালবাগ, নাজিম উদ্দিন রোডে মুদি ও চা দোকানে ছিল মানুষের ভিড়। অনেকের মুখেই দেখা যায়নি মাস্ক।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status