বিশ্বজমিন
প্রতি ৪টি সংক্রামক রোগের ৩টির বিস্তার ঘটেছে প্রাণি থেকে মানব শরীরে
মানবজমিন ডেস্ক
২৫ জুলাই ২০২১, রবিবার, ৩:১৩ অপরাহ্ন
প্রতি চারটি সংক্রামক রোগের মধ্যে তিনটিরই বিস্তার ঘটেছে প্রাণি থেকে মানব শরীরে। এমন রোগকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘জুনোটিক’। এসব প্রাণির মধ্যে বেশির ভাগই স্তন্যপায়ী। তারা হতে পারে গৃহপালিত অথবা বন্য। এসব প্রাণি এমন সব ভাইরাস বহন করে বেড়ায়, যার বিস্তার ঘটে মানব শরীরে। এর ফলে জিকা, ইবোলার মতো বড় প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ন্যাশনাল জিওগ্রাফি। মহামারি বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি হিসাব করে দেখেছেন যে, প্রতিটি স্তন্যপায়ী প্রজাতিতে কতগুলো ‘জুনোটিক’ ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এসব প্রজাতির মধ্যে কোন প্রাণি মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হতে পারে, তা নির্ণয়ই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। গৃহপালিত প্রাণিতে অথবা সাধারণ বন্য প্রজাতি, যা মানব পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে, তার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বড় রকমের ঝুঁকি রয়েছে। করোনা মহামারির আগে এই গবেষণা করা হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন মানব শরীরকে সংক্রমিত করার আগে এই ভাইরাস প্রথমে সৃষ্টি হয়েছে প্রাণির শরীরে।
গবেষণায় দেখা গেছে শীর্ষ স্থানীয় ১০টি স্তন্যপায়ী প্রজাতির মধ্যে আটটির মধ্যেই সবচেয়ে বেশি ‘জুনোটিক’ ভাইরাস পাওয়া যায়। এসব প্রাণি গৃহে পালন করা হয়। এই গ্রুপের মধ্যে রয়েছে বিড়াল, কুকুর, শূকর, গবাদিপশু, ঘোড়া, ভেড়া ইত্যাদি। মানব শরীরে দ্রুত বিস্তার করতে পারে এমন অর্ধেক ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার জন্য দায়ী এরা। স্থলভাগের শতকরা মাত্র ১১ ভাগ স্তন্যপায়ী ও বন্যপ্রাণি ‘জুনোটিক’ ভাইরাসের বাহক বলে মনে করা হয়। এসব প্রাণির বেশির ভাগ একটিমাত্র ভাইরাস বহন করে। গৃহপালিত প্রজাতি, প্রাইমেট এবং বাদুর সবচেয়ে বেশি ভাইরাস বহন করে। গৃহপালিত প্রাণিগুলোতে যেসব ভাইরাস থাকে, তা অন্য গৃহপালিত প্রাণিতে স্থানান্তর হয় সহজে এবং সেখান থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
জুনোটিক ভাইরাস কি?
জুনোটিক ভাইরাসের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ ভাইরাসের অন্যতম হলো জলাতঙ্ক রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস। প্রায় ১২৪ রকম প্রজাতির মধ্যে এই ভাইরাস পাওয়া যায়। লাতিন ‘টুরেজ’ শব্দ থেকে এর নাম এসেছে। অন্যগুলোর নামকরণ হয়েছে প্রথমে যেখানে আবিষ্কার করা হয়েছে তার নাম অনুসারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জিকা ভাইরাসের নামকরণ হয়েছে পূর্ব আফ্রিকার বনাঞ্চলের নাম অনুযায়ী। অথবা তাদের নামকরণ করা হয় যেসব প্রাণির দেহে ভাইরাস পাওয়া যায় তাদের নামের সম্মিলিত রূপ হিসেবে। যেমন ভেনিজুয়েলান ইকুইন এনসেফালাইটিস। অথবা অতি সম্প্রতি আবিষ্কার করা করোনা ভাইরাস। সব পোষকই মানব সংক্রমণের উৎস নয়। ‘ভেক্টর’ বা মধ্যবর্তী একটি বাহকের মাধ্যমেও মানব সংক্রমণ হতে পারে। যেমন রক্তচোষক মশা।
সম্প্রতি বেশ কিছু মহামারি দেখা দিয়েছে জুনোটিক ভাইরাসের কারণে। যেমন সার্স এবং ইবোলা ভাইরাস। এগুলোর উৎস এশিয়া ও আফ্রিকা। এসব ভাইরাস প্রথমে পশুর দেহ থেকে মানবশরীরে সংক্রমিত হওয়ার বিষয় রেকর্ড করা হয়েছে। ১৯৯৩ সালের মে মাসে উত্তর আমেরিকায় নাভাজো সম্প্রদায়ের এক যুবক অজ্ঞাত পালমোনারি রোগে মারা যায়। এর পরপরই দ্রুত আরো এমন ঘটনার কথা শোনা যায়। হরিণের মতো দেখতে শরীরের গঠন, এমন ইঁদুরকে এর প্রাথমিক পোষক হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
২০০৩ সালে চীনে প্রথম সার্স ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। দ্রুত তা এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকার ২৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এর মূল বাহক হিসেবে শনাক্ত করা হয় বাদুরকে। কিছু বিড়াল এই ভাইরাস বহন করে, এই সন্দেহে হাজার হাজার বিড়ালকে হত্যা করা হয়।
১৯৪৪ সলে প্রথম ক্রাইমিয়াতে ক্রাইমিয়া-কঙ্গো হেমোরেজিক জ্বর দেখা দেয়। পরে তা ১৯৫৬ সালে বেলজিয়ান কঙ্গোতে শনাক্ত করা হয়। অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণি এই ভাইরাসের পোষক। ১৯৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের একটি এলাকা হেন্দ্রায় প্রথম দু’জন মানুষ এবং ২১টি দৌড়ের ঘোড়া সংক্রমিত হয় হেন্দ্রা ভাইরাসে। এই ভাইরাস ফলখেকো বাদুর থেকে ঘোড়া, তারপর মানুষে ছড়িয়ে পড়ে। মাচাপো ভাইরাসের পরিচয় আছে বলিভিয়ান হেমোরেজিক জ্বরের ভাইরাস হিসেবে। ১৯৫২ সালে এই ভাইরাসে বলিভিয়ার কৃষকদের মধ্যে সংক্রমণ দেখা দেয়। ইঁদুর এবং জঙ্গলে থাকা ইঁদুর জাতীয় প্রাণি থেকে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে এসেছে বলে মনে করা হয়। ১৯৪৭ সালে উগান্ডায় বানরের ওপর গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা জিকা ভাইরাস আবিষ্কার করেন। এর পরপরই তারা মশায় এই ভাইরাস শনাক্ত করেন। মালয়েশিয়ায় ১৯৯৯ সালে প্রথম শূকর খামারিদের মধ্যে শনাক্ত করা হয় নিপাহ ভাইরাস। ২০০১ সাল থেকে এই সংক্রমণ দেখা দেয় বাংলাদেশে। মানুষ ও অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণিতে এর সংক্রমণের জন্য বাদুরকে দায়ী করা হয়।
মারবার্গ ভাইরাসের উৎপত্তি আফ্রিকায়। জার্মানির শহরের নামে এর নামকরণ করা হয়েছে। কারণ, প্রথম এই ভাইরাস ওই শহরে শনাক্ত করা হয়েছিল। আফ্রিকার সবুজ বানরের টিস্যু নিয়ে গবেষণার পর ১৯৬৭ সালে বিজ্ঞানীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
গবেষণায় দেখা গেছে শীর্ষ স্থানীয় ১০টি স্তন্যপায়ী প্রজাতির মধ্যে আটটির মধ্যেই সবচেয়ে বেশি ‘জুনোটিক’ ভাইরাস পাওয়া যায়। এসব প্রাণি গৃহে পালন করা হয়। এই গ্রুপের মধ্যে রয়েছে বিড়াল, কুকুর, শূকর, গবাদিপশু, ঘোড়া, ভেড়া ইত্যাদি। মানব শরীরে দ্রুত বিস্তার করতে পারে এমন অর্ধেক ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার জন্য দায়ী এরা। স্থলভাগের শতকরা মাত্র ১১ ভাগ স্তন্যপায়ী ও বন্যপ্রাণি ‘জুনোটিক’ ভাইরাসের বাহক বলে মনে করা হয়। এসব প্রাণির বেশির ভাগ একটিমাত্র ভাইরাস বহন করে। গৃহপালিত প্রজাতি, প্রাইমেট এবং বাদুর সবচেয়ে বেশি ভাইরাস বহন করে। গৃহপালিত প্রাণিগুলোতে যেসব ভাইরাস থাকে, তা অন্য গৃহপালিত প্রাণিতে স্থানান্তর হয় সহজে এবং সেখান থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
জুনোটিক ভাইরাস কি?
জুনোটিক ভাইরাসের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ ভাইরাসের অন্যতম হলো জলাতঙ্ক রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস। প্রায় ১২৪ রকম প্রজাতির মধ্যে এই ভাইরাস পাওয়া যায়। লাতিন ‘টুরেজ’ শব্দ থেকে এর নাম এসেছে। অন্যগুলোর নামকরণ হয়েছে প্রথমে যেখানে আবিষ্কার করা হয়েছে তার নাম অনুসারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জিকা ভাইরাসের নামকরণ হয়েছে পূর্ব আফ্রিকার বনাঞ্চলের নাম অনুযায়ী। অথবা তাদের নামকরণ করা হয় যেসব প্রাণির দেহে ভাইরাস পাওয়া যায় তাদের নামের সম্মিলিত রূপ হিসেবে। যেমন ভেনিজুয়েলান ইকুইন এনসেফালাইটিস। অথবা অতি সম্প্রতি আবিষ্কার করা করোনা ভাইরাস। সব পোষকই মানব সংক্রমণের উৎস নয়। ‘ভেক্টর’ বা মধ্যবর্তী একটি বাহকের মাধ্যমেও মানব সংক্রমণ হতে পারে। যেমন রক্তচোষক মশা।
সম্প্রতি বেশ কিছু মহামারি দেখা দিয়েছে জুনোটিক ভাইরাসের কারণে। যেমন সার্স এবং ইবোলা ভাইরাস। এগুলোর উৎস এশিয়া ও আফ্রিকা। এসব ভাইরাস প্রথমে পশুর দেহ থেকে মানবশরীরে সংক্রমিত হওয়ার বিষয় রেকর্ড করা হয়েছে। ১৯৯৩ সালের মে মাসে উত্তর আমেরিকায় নাভাজো সম্প্রদায়ের এক যুবক অজ্ঞাত পালমোনারি রোগে মারা যায়। এর পরপরই দ্রুত আরো এমন ঘটনার কথা শোনা যায়। হরিণের মতো দেখতে শরীরের গঠন, এমন ইঁদুরকে এর প্রাথমিক পোষক হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
২০০৩ সালে চীনে প্রথম সার্স ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। দ্রুত তা এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকার ২৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এর মূল বাহক হিসেবে শনাক্ত করা হয় বাদুরকে। কিছু বিড়াল এই ভাইরাস বহন করে, এই সন্দেহে হাজার হাজার বিড়ালকে হত্যা করা হয়।
১৯৪৪ সলে প্রথম ক্রাইমিয়াতে ক্রাইমিয়া-কঙ্গো হেমোরেজিক জ্বর দেখা দেয়। পরে তা ১৯৫৬ সালে বেলজিয়ান কঙ্গোতে শনাক্ত করা হয়। অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণি এই ভাইরাসের পোষক। ১৯৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের একটি এলাকা হেন্দ্রায় প্রথম দু’জন মানুষ এবং ২১টি দৌড়ের ঘোড়া সংক্রমিত হয় হেন্দ্রা ভাইরাসে। এই ভাইরাস ফলখেকো বাদুর থেকে ঘোড়া, তারপর মানুষে ছড়িয়ে পড়ে। মাচাপো ভাইরাসের পরিচয় আছে বলিভিয়ান হেমোরেজিক জ্বরের ভাইরাস হিসেবে। ১৯৫২ সালে এই ভাইরাসে বলিভিয়ার কৃষকদের মধ্যে সংক্রমণ দেখা দেয়। ইঁদুর এবং জঙ্গলে থাকা ইঁদুর জাতীয় প্রাণি থেকে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে এসেছে বলে মনে করা হয়। ১৯৪৭ সালে উগান্ডায় বানরের ওপর গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা জিকা ভাইরাস আবিষ্কার করেন। এর পরপরই তারা মশায় এই ভাইরাস শনাক্ত করেন। মালয়েশিয়ায় ১৯৯৯ সালে প্রথম শূকর খামারিদের মধ্যে শনাক্ত করা হয় নিপাহ ভাইরাস। ২০০১ সাল থেকে এই সংক্রমণ দেখা দেয় বাংলাদেশে। মানুষ ও অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণিতে এর সংক্রমণের জন্য বাদুরকে দায়ী করা হয়।
মারবার্গ ভাইরাসের উৎপত্তি আফ্রিকায়। জার্মানির শহরের নামে এর নামকরণ করা হয়েছে। কারণ, প্রথম এই ভাইরাস ওই শহরে শনাক্ত করা হয়েছিল। আফ্রিকার সবুজ বানরের টিস্যু নিয়ে গবেষণার পর ১৯৬৭ সালে বিজ্ঞানীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন।