প্রথম পাতা

কণ্ঠযোদ্ধার বিদায়

স্টাফ রিপোর্টার

২৫ জুলাই ২০২১, রবিবার, ৯:৪১ অপরাহ্ন

চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা, গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গতকাল বাদ জোহর তাকে খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। শুক্রবার রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। ফকির আলমগীরের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা ফকির আলমগীরের স্মৃতিচারণ করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, একজন কণ্ঠযোদ্ধা, গণমানুষের শিল্পী হিসেবে ফকির আলমগীর বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে।
গতকাল সকাল ১১টায় খিলগাঁওয়ের পল্লীমা সংসদে ফকির আলমগীরকে ‘গার্ড অব অনার’ দেয়া হয়। সেখানেই তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১২টায় তার মরদেহ নেয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে বৃষ্টি উপেক্ষা করে সর্বস্তরের মানুষ তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। এরপর শিল্পীর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় খিলগাঁও চৌধুরীপাড়া মাটির মসজিদে। বাদ জোহর তালতলা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ফকির আলমগীর করোনা টিকার দুই ডোজই নিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন আগেই জ্বর ও খুসখুসে কাশি শুরু হয় এ শিল্পীর। পরে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে করোনা পরীক্ষা করান। ফল পজেটিভ আসে। সেদিনই তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এরপর তাকে গ্রীন রোডের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। ওই সময় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রয়োজন পড়লে সেখান থেকে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে  নেয়া হয়। শনিবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
ফকির আলমগীরের জন্ম ১৯৫০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে ভূমিকা রেখেছেন ফকির আলমগীর। পরবর্তীতে গণসংগীত নিয়ে একাই তিনি কাজ করেন ব্যাপকভাবে। ফকির আলমগীর ছিলেন দেশীয় গণসংগীতের প্রবাদ পুরুষ। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার কণ্ঠের বেশকিছু গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৮২ সালের বিটিভি’র আনন্দমেলা অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পর দর্শকের মধ্যে সাড়া ফেলে। কণ্ঠ দেয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর। তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা, গণসংগীতচর্চার আরেক সংগঠন গণসংগীতশিল্পী পরিষদের সাবেক সভাপতি। ফকির আলমগীর গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করেছেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যারা আছেন হৃদয়পটে’সহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ হয়েছে তার। ফকির আলমগীর ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও গণশিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে ফকির আলমগীরকে একুশে পদক প্রদান করে।
শিল্পী তিমির নন্দী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে কলকাতার নারিকেল ডাঙায় শরণার্থী শিল্পীগোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিলাম আমরা। সেখানে ফকির আলমগীরের সহশিল্পী ছিলাম আমি, নাট্যকার-অভিনেতা মামুনুর রশীদসহ অনেকে। সেই সময় বিভিন্ন গীতিনাট্য নিয়ে আমরা কলকাতা ও কলকাতার আশপাশে সীমান্তে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করেছি। সেই সময় ফকিরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা গাঢ় হয়েছে। আমার সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিল।
সংগীত শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ফকির আলমগীর বাংলাদেশের এমন একজন গায়ক যাকে আমি বাংলার সংগীতের বাঘ বলি। মজার বিষয় হচ্ছে, ওর মাথায় বিয়ের পাগড়িটা আমিই পরিয়েছিলাম। এমন হাজারো গল্প রয়েছে আমাদের। সে গণসংগীতটাকে ধরে রেখেছিল আমৃত্যু। তার চলে যাওয়ায় সংগীতের এই অসাধারণ ধারাটিতে শূন্যতা তৈরি হলো।
উপস্থাপক হানিফ সংকেত এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, মানবিক গুণাবলীতে মহান এই শিল্পীর অকস্মাৎ মৃত্যুসংবাদে স্বজন হারানোর কষ্ট অনুভব করছি।
শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, তিনি যেমন বড় মাপের শিল্পী ছিলেন তেমনি ভালো মনের মানুষ ছিলেন। তার আত্মা শান্তি পাক- সেই প্রার্থনাই করি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status