শেষের পাতা

ফেরিতে ভিড় মোটরবাইক এখন দূরপাল্লার বাহন!

নূরে আলম জিকু

২৫ জুলাই ২০২১, রবিবার, ৯:৩৫ অপরাহ্ন

লকডাউনেও ঢাকায় ফিরছে মানুষ। আরিচাঘাট থেকে ছবিটি তুলেছেন- জীবন আহমেদ

পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের আবুল কালাম আজাদ। ঢাকায় একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ঈদের ছুটি শেষে কঠোর লকডাউনের মধ্যে জীবিকার তাগিদে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার মোটরসাইকেল চালিয়ে ঢাকায় পৌঁছেছেন। পথে নানা বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে ১৬ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছান তিনি। আবুল কালাম বলেন, ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছি। তখন গণপরিবহন চলাচল ভোগান্তি আর বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে। ঈদের পরদিন ঢাকায় ফিরতে চেয়েছি। পারিবারিক সমস্যার কারণে সেদিন আসতে পারিনি। পরের দিন থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হবে। গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। এসব জেনে ২৩শে এপ্রিল ভোররাতে ছোট ভাইয়ের মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। তবে জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় কয়েক দফায় পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে। পুলিশি ঝামেলা এড়াতে একাধিক রুট পরিবর্তন করতে হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে দিনাজপুর ও গাইবান্ধার মধ্যবর্তী এলাকায় পুলিশ ১ ঘণ্টা ধরে বসিয়ে  রেখেছে। অনেক আকুতি মিনতি শেষে ছেড়ে দিয়েছে। যাত্রাপথে সড়কের পাশে কয়েকবার বিশ্রাম নিয়েছি। বগুড়ায় বিভিন্ন মোড়ে ৫/৭ বার পুলিশ বাধা দিয়েছে। পরে প্রধান সড়ক ছেড়ে আশেপাশের সড়ক ব্যবহার করেছি। সন্ধ্যা ৭টার দিকে গাবতলী এলাকায় আসি। দূরত্ব বেশি হওয়ায় মাথা ঠাণ্ডা করে ধীরেসুস্থে মোটরবাইক চালিয়েছি। মাঝে মধ্যে নানা ভয় আর আতঙ্ক কাজ করতো। তবুও থেমে যাইনি। চাকরি টিকিয়ে রাখতেই এত বড় ঝুঁকি নিয়েছি। করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে মালবাহী ট্রাক কিংবা ছোট ছোট যানবাহনে গাদাগাদি করে আসিনি। বিভিন্ন পরিবহনে ভেঙে ভেঙে ও গাদাগাদি করে আসলে আরও বেশি ভোগান্তির শিকার হতাম।
ঈদের ছুটি শেষে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। তবে বাস, ট্রেন, লঞ্চ বন্ধ থাকলেও নানা উপায়ে রাজধানীমুখী হচ্ছে মানুষ। লকডাউনের প্রথমদিন থেকে রাজধানীর প্রবেশ পথগুলোতে বেড়েছে মানুষের ভিড়। নানা অজুহাতে রাস্তায় নেমেছে মানুষ। তবে বিভিন্ন চেকপোস্টে জেরার মুখে পড়াসহ গুনতে হয়েছে জরিমানাও।
২৩শে জুলাই সকাল থেকে লঞ্চ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ঢাকায় আসার একমাত্র মাধ্যম ফেরি। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও জরুরি সেবার জন্য চালু রয়েছে ফেরি। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করছে। তবে কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি।
গতকালও ফেরিতে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। প্রায় প্রতিটি ফেরিতে জরুরি পরিবহনের চেয়ে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলের সংখ্যা ছিল কয়েকগুণ বেশি। জরুরি পরিবহনের সঙ্গে গাদাগাদি করে পদ্মা পাড়ি দিয়েছেন হাজারো যাত্রী। শনিবার সকাল থেকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ঢাকামুখী যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ লক্ষ্য করা গেছে। নানা উপায়ে পৌঁছে যাচ্ছেন তাদের নিজস্ব গন্তব্যে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটের ফেরিতেও একই চিত্র।
আবুল কালামের মতো মোটরসাইকেলে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মোটরবাইকই এখন দূরপাল্লার বাহন হয়ে উঠেছে। কেউ নিজস্ব কেউ বা ভাড়ায়চালিত মোটরবাইকে করে ঢাকায় আসছেন। এতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
 ফেরিতে করে আসা যাত্রীদের অনেকেই ঘাট থেকে ঢাকায় প্রবেশমুখ পর্যন্ত ভাড়ায়চালিত মোটরবাইকে করে আসছেন। মোটরবাইকে ঢাকায় আসাদের মধ্যে ব্যাংক ও ওষুধ কোম্পানির লোকজনই বেশি। অনেকেই বলছেন, ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়ে এখন আবার ফিরেছেন তারা। কেউ কেউ পরিবার নিয়ে বাড়ি  গেলেও বিধিনিষেধের কারণে একাই ফিরতে হয়েছে।
এদিকে জরুরি সেবার আওতায় ব্যাংক ও ওষুধ কোম্পানির লোকজন চলাচল করলেও অনেকে নানা অজুহাতে ঢাকায় আসছেন। সড়ক-মহাসড়কে  চেকপোস্টে পরিচয়পত্র দেখিয়ে বেশির ভাগ মানুষ ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। অনেকে গাদাগাদি করে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি না মানায় মামলা ও জরিমানার মুখে পড়তে হয়েছে। গতকাল সকালে কুমিল্লা থেকে মোটরবাইকে করে ঢাকায় আসছেন আলাউদ্দিন আজাদ। তিনি জানান, ঈদের পরে কঠোর লকডাউন হবে জেনে ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সময়  মোটরসাইকেল নিয়ে গেছি। ছুটি শেষে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। আজ বাইকে করে আসলাম। সড়ক অনেকটা ফাঁকা থাকায় বেশি সময় লাগেনি। পথে কয়েক জায়গায় পুলিশ বাধা দিয়েছে। পরিচয়পত্র দেখিয়ে ছাড়া পেয়েছি। এই লকডাউনে অনেকে মোটরবাইকের ওপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, হাইওয়ে হওয়াতে আগে কখনো মোটরবাইক নিয়ে যাইনি। এবারই প্রথম হাইওয়েতে ড্রাইভ করলাম। পথে অনেক মানুষ বাইকে আসার জন্য হাত তুলেছে। ভাড়াও দিতে চেয়েছে। অনেকেই ভাড়ায় যাত্রী টানছেন।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা থেকে মোটরবাইকে করে ঢাকায় আসছেন মিরাজ ও তপন চন্দ্র দে। কথা হলে তারা জানান, সকাল ৬টার দিকে মুয়ারবান্দা এলাকা থেকে যাত্রা শুরু করেন। সকাল নয়টায় ফেরিতে করে তারা বরিশাল পৌঁছান। সেখানে সকালের নাস্তা করে সড়কপথে বাংলাবাজার ফেরিঘাটে আসেন। বরিশালে পুলিশি বাধা দিলেও বিকল্প পথ ব্যবহার করেন তারা। পরে বৃষ্টিতে ভিজে ফেরিতে উঠেন। বিকালে তারা ঢাকায় পৌঁছান।
এদিকে, রাজধানীর প্রবেশমুখ ও সড়কগুলোতে বেড়েছে আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যারিকেড। কোথাও পুলিশ থামিয়ে চেক করছে। জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষজনকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আবার যারা উপযুক্ত প্রমাণ হাজির করতে পারছেন না, তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে যেদিক থেকে এসেছেন সেদিকে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য জানান, এবারের লকডাউন অনেকটা ভিন্ন। কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ জন্য বিগত দিনের তুলনায় কিছুটা কম মানুষ আসছে ঢাকায়। যারা আসছেন, তাদের মধ্যে ব্যাংক ও ওষুধ কোম্পানির লোকজন বেশি। চিকিৎসা নেয়ার জন্যও আসছেন অনেকে। গণপরিবহন না থাকায় এখন মোটরবাইকের ব্যবহার বেড়েছে বেশি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় আসছেন অনেকে। অনেককে মামলাও দেয়া হচ্ছে। জরিমানা করা হচ্ছে। তবুও মানুষ আসছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status