খেলা

কে সেরা, কী বলছে পরিসংখ্যান?

স্পোর্টস ডেস্ক

২৫ জুলাই ২০২১, রবিবার, ৮:০৫ অপরাহ্ন

পেলে নাকি ম্যারাডোনা? সেরার এই প্রশ্নে বহুদিন মেতেছিলেন ফুটবলবোদ্ধা থেকে শুরু করে সাধারণ ফুটবলপ্রেমীরা। নানা যুক্তি-তর্ক ও বিশ্লেষণ করেও সেরা হিসেবে ম্যারাডোনা কিংবা পেলের নাম ঘোষণা করা হয়নি। এরমধ্যেই আবির্ভূত ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি। ফুটবলের দুই মহাতারকা সবুজ গালিচায় দাপট দেখাচ্ছেন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। সেরা সময় পেছনে ফেলে রোনালদো ও মেসি এখন ক্যারিয়ারের গোধূলী লগ্নে দাঁড়িয়ে। দু’জনের মধ্যে কে সেরা? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে ফুটবলের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট গোলডটকম। তারা মেসি ও রোনালদোর ক্যারিয়ারকে সাজিয়েছে পরিসংখ্যানের ছকে।
ক্লাবের জার্সিতে গোল
বয়সে মেসির চেয়ে দুই বছরের বড় রোনালদো। পেশাদার ক্যারিয়ারের শুরুটাও আগে রোনালদোর। স্পোর্টিং সিপি’র হয়ে ২০০২-০৩ মৌসুমে পেশাদার ফুটবলে রোনালদোর অভিষেক। বার্সেলোনা সিনিয়র দলে মেসির অভিষেক ২০০৪-০৫ মৌসুমে। তবুও মেসির চেয়ে খুব বেশি এগিয়ে নেই রোনালদো। স্পোর্টিং সিপি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাসের জার্সিতে ১৯ মৌসুমে ৬৭৪ গোল রোনালদোর। দুই মৌসুম কম খেলে মেসি করেছেন ৬৭২ গোল। সবই বার্সেলোনার হয়ে। এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডে এগিয়ে মেসি। ২০১১-১২ মৌসুমে মেসি করেছেন ৭৩ গোল। সেবছর রোনালদো করেছিলেন ৬০ গোল। ২০১৪-১৫ মৌসুমে ক্যারিয়ার সেরা ৬১ গোল করেছিলেন রোনালদো। সেবার মেসি থেমেছিলেন ৫৮ গোলে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখানোর পর মেসির সঙ্গে লড়াই পায় ভিন্ন মাত্রা। মেসি-রোনালদো দ্বৈরথের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অধ্যায় ছিল ২০০৯-১০ থেকে ২০১৪-১৫ মৌসুম পর্যন্ত। ক্লাব ফুটবলে গোলের লড়াইয়ে মেসিকে পেছনে ফেলে দারুণ এক অর্জন রয়েছে রোনালদোর। ২০১০-১১ থেকে ২০১৫-১৬ পর্যন্ত টানা ছয় মৌসুম অন্তত ৫০ গোল করেছেন পর্তুগিজ সুপারস্টার। মেসি অন্তত ৫০ গোল করেছেন টানা তিনবার। মৌসুমে কমপক্ষে ৩০ গোল করার রেকর্ড আবার মেসির দখলে। আর্জেন্টাইন মহাতারকা অন্তত ৩০ গোল করেছেন টানা ১৩ মৌসুম। ২০০৮-০৯ এ শুরু হয়ে যা অব্যাহত ছিল গত মৌসুম পর্যন্ত। ২০০৯-১০ থেকে টানা ৯ মৌসুম অন্তত ৩০ গোল করার পর রোনালদো দশম মৌসুমে এসে ব্যর্থ হয়েছেন জুভেন্টাসে যোগ দেয়ার বছরে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে রোনালদো করেছিলেন ২৮ গোল।
ক্লাব ফুটবলে অ্যাসিস্ট
রোনালদোর চেয়ে অ্যাসিস্টে অনেক এগিয়ে মেসি। গোলডটকম অ্যাসিস্টের হিসাব রাখা শুরু করে ২০০৯-১০ মৌসুম থেকে। সে অনুযায়ী রোনালদো সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ১৩৯ গোল। সবচেয়ে বেশি ২১ অ্যাসিস্ট ২০১৪-১৫ মৌসুমে। মেসির অ্যাসিস্টের সংখ্যা ২২৬। ২০১১-১২ মৌসুমে মেসি সবচেয়ে বেশিবার (২৯) গোল করিয়েছেন সতীর্থদের দিয়ে।
চ্যাম্পিয়ন্স লীগে নৈপুণ্য
ইউরোপের ক্লাব ফুটবলের সেরা আসরে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনালদো। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাসের হয়ে ১৩৪ গোল তার। ম্যাচ খেলেছেন ১৭৬টি। চ্যাম্পিয়নস লীগে মেসির গোল ১২০টি। তবে ম্যাচপ্রতি গোলের হিসাবে এগিয়ে মেসি। রোনালদোর ম্যাচপ্রতি গোল ০.৭৬। আর ১৪৯ ম্যাচে মেসির গোলের হার ০.৮১।
বিশ্বকাপ পারফরমেন্স
ক্লাব ফুটবলে গোলের বন্যা বইয়ে দেয়া দুই মহাতারকা বিশ্বকাপের মঞ্চে কিছুটা বিবর্ণ। দু’জনই খেলেছেন চারটি বিশ্বকাপ। মেসি ১৯ ম্যাচে গোল করেছেন ৬টি। বিশ্ব আসরে ১৭ ম্যাচে রোনালদোর গোল সংখ্যা ৭। বিশ্বকাপে রোনালদোর অভিষেক আসরে (২০০৬) সেমিফাইনালে উঠেছিল পর্তুগাল। বিশ্বকাপে ওটাই রোনালদোর সেরা অর্জন। মেসি ২০১৪ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে তুলেছিলেন ফাইনালে। জার্মানির কাছে হেরে বিশ্বকাপ হারানোর বেদনায় পোড়েন মেসি।
জাতীয় দলে কীর্তি
রোনালদোর মতো মেসিও জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন ১৮ বছর বয়সে। পর্তুগালের হয়ে ১৭৯ ম্যাচে ১০৯ গোল রোনালদোর। জাতীয় দলের হয়ে যা যৌথভাবে সর্বকালের সর্বোচ্চ। আর এক গোল করলেই ইরানের আলি দাইয়েকে ছাড়িয়ে এককভাবে সিংহাসনে বসবেন রোনালদো। আর্জেন্টিনার হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ (১৫১) খেলা মেসি করেছেন ৭৬ গোল। আর্জেন্টিনার জার্সিতে সবচেয়ে বেশি গোলের কীর্তি এটি।
দলীয় শিরোপা
ইউরোপের সেরা পাঁচ লীগের তিনটিই জিতেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ, রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে লা লিগা জয়ের পর জুভেন্টাসের জার্সিতে ইতালিয়ান সিরি আ শিরোপার স্বাদ পেয়েছেন তিনি। ক্যারিয়ারে মেসি ঘরোয়া লীগ শিরোপা জিতেছেন ১০ বার। রোনালদো ৭ বার নিয়েছে লীগ শিরোপার স্বাদ। রোনালদো জাতীয় দলের হয়ে কিছু না জেতার আক্ষেপ মেটান ২০১৬ ইউরো জিতে। মেসির লেগেছে আরো পাঁচ বছর। চলতি মাসেই কোপা আমেরিকা জয় করে আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন মেসি। রোনালদোর ৫ চ্যাম্পিয়নস লীগের বিপরীতে মেসি এই শিরোপা জিতেছেন চারটি। অলিম্পিক গেমসে রোনালদো ও মেসি একবার করেই অংশ নিয়েছেন। ১৯ বছর বয়সী রোনালদো ২০০৪ অলিম্পিকে পর্তুগাল দলের অংশ ছিলেন। সেবার গ্রুপ পর্বই পেরোতে পারেনি পর্তুগাল। রোনালদো করেছিলেন ১ গোল। ২০০৮ অলিম্পিকে খেলার সময় মেসির বয়স ছিল ২১ বছর। তারকাবহুল আর্জেন্টিনা জিতে নেয় সোনার পদক। ২ গোল করেছিলেন মেসি। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে মেসি জিতেছেন ২৬টি শিরোপা। রোনালদো শিরোপার স্বাদ নিয়েছেন ২১ বার।
ব্যক্তিগত অর্জন
গত দশকের ফুটবলে সব আলো কেড়েছেন মেসি ও রোনালদো। ব্যক্তিগত দ্বৈরথে একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে মেতেছিলেন দু’জন। ব্যালন ডি’অর মেসি জিতেছেন ৬ বার। রোনালদো ৫ বার। ফিফা বর্ষসেরার পুরস্কার রোনালদো দুইবার জিতলেও মেসি জিতেছেন একবার। ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু মেসি জিতেছেন ৬ বার। রোনালদো চারবার জিতেছেন এই পুরস্কার। উয়েফার বর্ষসেরায় আবার এগিয়ে রোনালদো। মেসির চেয়ে একবার বেশি জিতেছেন রোনালদো (৪ বার)। জাতীয় দলের জার্সিতে কোনো আসরের সেরা খেলায়াড়ের খেতাব দুইবার জিতেছেন মেসি। ২০১৪ বিশ্বকাপ ও ২০২১ কোপা আমেরিকার সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ‘গোল্ডেন বল’ জেতেন তিনি। বিশ্বকাপ কিংবা ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের কোনো আসরে সেরার পুরস্কার জেতা হয়নি রোনালদোর। ফিফপ্রো একাদশে ১৪ বার করে জায়গা করে নিয়েছেন দু’জনই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status