বাংলারজমিন
যার বিদায়ে কেঁদেছে হাটহাজারী!
মো. আবু শাহেদ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) থেকে
২৫ জুলাই ২০২১, রবিবার, ৭:২৫ অপরাহ্ন
একজন ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা)। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। চট্টগ্রামের আলোচিত ব্যক্তি। মানবিক ও কর্মবীর হিসেবে পরিচিত। নাম তার রুহুল আমিন। ইউএনও হিসেবে সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায়। মাত্র দুই বছর ১০ মাস সেবা করে হাটহাজারীবাসীর আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন তিনি। হাটহাজারীবাসীও রুহুল আমিনকে আপন করে নিয়ে দুঃখ-কষ্ট ভাগাভাগি করতো। কর্মের মাধ্যমে অল্প সময়ে বিশ্বাসের আঁতুড়ঘর হিসেবে গড়ে তোলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়কে। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে মানুষের সেবা করেছেন। পেয়েছেন কর্মবীর উপাধি। ‘বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ’ হালদা রক্ষায় অনবদ্য ভূমিকা রেখে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া রুহুল আমিন ‘হালদার পাহারাদার’ খ্যাত। ২০১৮ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে যোগদান করেন রুহুল আমিন। হালদা তখনও ‘বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ’ হয়নি। মৎস্য অভয়াশ্রম ঘোষণা দেয়ার পর তখন হালদার অবস্থা শোচনীয়। নির্বিচারে মাছ শিকার, ইঞ্জিনচালিত নৌকার অবাধ বিচরণ, ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, গৃহস্থালীর বর্জ্য, পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের বর্জ্য, এশিয়ান পেপার মিলের বর্জ্য হালদাকে বিষিয়ে তুলছিল।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহায়তায় পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের বর্জ্য ও এশিয়ান পেপার মিল বন্ধ করতে সক্ষম হন এই রুহুল আমিন। হাটহাজারী উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি ভেজাল বিরোধী অভিযান চালিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। রুহুল আমিন হালদা নদীর মা মাছ, ডলফিন এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১৭৮টি অভিযান পরিচালনা করেছেন। ভয়াবহ ফার্নেস তেল দুর্ঘটনা থেকে হালদা নদীকে রক্ষা করেছেন। দুর্গম মনাই ত্রিপুরা পাড়াকে আমূল বদলে দিয়ে গ্রামকে শহরে রূপান্তর করেছেন। জরাজীর্ণ/ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সন্দ্বীপ পাড়া স্কুলকে নান্দনিক স্কুল হিসেবে গড়ে তুলেছেন। প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে নানামুখী কাজ করেছেন। শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাচ্চাদের জন্য শিশুরাজ্য তৈরি করেছেন। যোগদানের পর শতাধিক উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে বাসস্ট্যান্ড, সরকারহাটসহ সরকারি জমি উদ্ধার করেছেন। সরকারি বনের কাঠ পাচার রোধে অভিযান চালিয়েছেন। ভেজাল বিরোধী প্রায় দুই শতাধিক অভিযান, বিশেষ করে ভেজাল ঘি’র বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য ‘১৫ মিনিটের সেবা’ চালু করেছিলেন, যেখানে সেবাগ্রহীতাদের ১৫ মিনিটের মধ্যেই জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে দেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় ‘সার্ভিস এট ডোরস্টেপ থ্রু মোবাইল কোর্ট’ কার্যক্রম গ্রহণ করে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন। এর আওতায় দোকানে বসেই ট্রেড লাইসেন্স পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারি জমির দখল রোধে কয়েক হাজার গাছের চারা রোপণ, সরকারি জমির দখল রোধে উচ্ছেদের পরে পাবলিক টয়লেট, রাস্তা, ড্রেন এবং কালভার্ট নির্মাণ, ৫০ বছরের পুরনো রাস্তা উদ্ধার, বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফাইল থেকে কমিশন প্রথা (ঘুষ) সমূলে উৎপাটন, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে অফিসে ঘুষ বোর্ড স্থাপন, পরিবেশ রক্ষায় নানা উদ্যোগ নিয়েছেন।
ভয়াবহ মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতেও বেশকিছু উদ্যোগ নেন হাটহাজারী উপজেলার সাবেক এই নির্বাহী কর্মকর্তা। প্রবাসীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, খাদ্য সহায়তার অংশ হিসেবে বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা এবং মধ্যবিত্তদের জন্য ‘ভালোবাসার থলে’ প্রদান, পরিবহন শ্রমিকদের সুরক্ষায় সম্প্রীতির কার্ড ব্যবস্থা চালু, পরিবহন সংকটে কৃষকদের সবজি পরিবহনে ও বিক্রিতে এবং ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে সমস্যা দেখা দেয়ায় কৃষকদের সুরক্ষার জন্য ‘ফসলের মাঠে কৃষকের সাথে’ শীর্ষক কর্মসূচি গ্রহণ, ত্রাণ বিতরণে ‘ত্রিপুরা পাড়া’ মডেল চালু, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে উপজেলার কাঁচাবাজারগুলো খেলার মাঠ/খোলা মাঠে স্থানান্তরসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
রুহুল আমিন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে দীর্ঘ ২ বছর ১০ মাস দায়িত্ব পালন করে গত ১১ই জুন পদোন্নতি পেয়ে জাতীয় চা বোর্ডে উপ-সচিব হিসেবে যোগ দিয়েছেন সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা। বিদায়ের দিন সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের ফেসবুক ওয়ালে তিনি লেখেন, ‘শেষ বিকেলের সূর্যটাও ডুবে যাচ্ছে.. মাগরিবের আজানের সুর ভেসে আসছে মসজিদের মিনার হতে.. লাল গাড়িটাও বের হচ্ছে কমপ্লেক্সের গেট দিয়ে.. বিদায় হাটহাজারী, আল্লাহ সুস্থ রাখো হাটহাজারীবাসীকে।’
তার এই লেখা কাঁদিয়েছে হাজারো মানুষকে। ফেসবুক কমেন্টে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ আবেগময়ী মন্তব্য করেছেন। এসেছে হাজারো কান্নার প্রতিকৃতি। কমেন্টে সেখানে অনেকে উল্লেখ করছেন, মন থেকে এই রুহুল আমিনকে বিদায় দিতে পারছেন না!
এরপর রাতে তিনি অন্য একটি ফেসবুক পেজে হাটহাজারীবাসীর উদ্দেশ্যে লেখেন, ‘এই পেজে যারা আমার পাশে ছিলেন, সমর্থন দিয়েছেন, দোয়া করেছেন তাদের প্রতি আমার সীমাহীন কৃতজ্ঞতা। প্রজাতন্ত্রের একজন সামান্য কর্মচারীর প্রতি আপনারা যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন তা তুলনাহীন। আমি ১০০% নিশ্চিত আপনাদের সঙ্গে আমি মনের অজান্তে দুর্ব্যবহার করেছি। আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আপনাদের জন্য দোয়া করি। এই মহামারিতে আল্লাহ প্রিয় হাটহাজারীবাসীকে সুস্থ রাখুক। বিদায় বেলায় একটা কথা আপনাদের বলে যাই, আমি শুধুমাত্র আল্লাহর ভয়ে সবসময় হারাম খাওয়া থেকে বিরত থেকেছি। আপনাদের দোয়া কামনায়- মোহাম্মাদ রুহুল আমিন।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহায়তায় পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের বর্জ্য ও এশিয়ান পেপার মিল বন্ধ করতে সক্ষম হন এই রুহুল আমিন। হাটহাজারী উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি ভেজাল বিরোধী অভিযান চালিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। রুহুল আমিন হালদা নদীর মা মাছ, ডলফিন এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১৭৮টি অভিযান পরিচালনা করেছেন। ভয়াবহ ফার্নেস তেল দুর্ঘটনা থেকে হালদা নদীকে রক্ষা করেছেন। দুর্গম মনাই ত্রিপুরা পাড়াকে আমূল বদলে দিয়ে গ্রামকে শহরে রূপান্তর করেছেন। জরাজীর্ণ/ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সন্দ্বীপ পাড়া স্কুলকে নান্দনিক স্কুল হিসেবে গড়ে তুলেছেন। প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে নানামুখী কাজ করেছেন। শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাচ্চাদের জন্য শিশুরাজ্য তৈরি করেছেন। যোগদানের পর শতাধিক উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে বাসস্ট্যান্ড, সরকারহাটসহ সরকারি জমি উদ্ধার করেছেন। সরকারি বনের কাঠ পাচার রোধে অভিযান চালিয়েছেন। ভেজাল বিরোধী প্রায় দুই শতাধিক অভিযান, বিশেষ করে ভেজাল ঘি’র বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য ‘১৫ মিনিটের সেবা’ চালু করেছিলেন, যেখানে সেবাগ্রহীতাদের ১৫ মিনিটের মধ্যেই জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে দেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় ‘সার্ভিস এট ডোরস্টেপ থ্রু মোবাইল কোর্ট’ কার্যক্রম গ্রহণ করে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন। এর আওতায় দোকানে বসেই ট্রেড লাইসেন্স পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারি জমির দখল রোধে কয়েক হাজার গাছের চারা রোপণ, সরকারি জমির দখল রোধে উচ্ছেদের পরে পাবলিক টয়লেট, রাস্তা, ড্রেন এবং কালভার্ট নির্মাণ, ৫০ বছরের পুরনো রাস্তা উদ্ধার, বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফাইল থেকে কমিশন প্রথা (ঘুষ) সমূলে উৎপাটন, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে অফিসে ঘুষ বোর্ড স্থাপন, পরিবেশ রক্ষায় নানা উদ্যোগ নিয়েছেন।
ভয়াবহ মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতেও বেশকিছু উদ্যোগ নেন হাটহাজারী উপজেলার সাবেক এই নির্বাহী কর্মকর্তা। প্রবাসীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, খাদ্য সহায়তার অংশ হিসেবে বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা এবং মধ্যবিত্তদের জন্য ‘ভালোবাসার থলে’ প্রদান, পরিবহন শ্রমিকদের সুরক্ষায় সম্প্রীতির কার্ড ব্যবস্থা চালু, পরিবহন সংকটে কৃষকদের সবজি পরিবহনে ও বিক্রিতে এবং ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে সমস্যা দেখা দেয়ায় কৃষকদের সুরক্ষার জন্য ‘ফসলের মাঠে কৃষকের সাথে’ শীর্ষক কর্মসূচি গ্রহণ, ত্রাণ বিতরণে ‘ত্রিপুরা পাড়া’ মডেল চালু, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে উপজেলার কাঁচাবাজারগুলো খেলার মাঠ/খোলা মাঠে স্থানান্তরসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
রুহুল আমিন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে দীর্ঘ ২ বছর ১০ মাস দায়িত্ব পালন করে গত ১১ই জুন পদোন্নতি পেয়ে জাতীয় চা বোর্ডে উপ-সচিব হিসেবে যোগ দিয়েছেন সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা। বিদায়ের দিন সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের ফেসবুক ওয়ালে তিনি লেখেন, ‘শেষ বিকেলের সূর্যটাও ডুবে যাচ্ছে.. মাগরিবের আজানের সুর ভেসে আসছে মসজিদের মিনার হতে.. লাল গাড়িটাও বের হচ্ছে কমপ্লেক্সের গেট দিয়ে.. বিদায় হাটহাজারী, আল্লাহ সুস্থ রাখো হাটহাজারীবাসীকে।’
তার এই লেখা কাঁদিয়েছে হাজারো মানুষকে। ফেসবুক কমেন্টে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ আবেগময়ী মন্তব্য করেছেন। এসেছে হাজারো কান্নার প্রতিকৃতি। কমেন্টে সেখানে অনেকে উল্লেখ করছেন, মন থেকে এই রুহুল আমিনকে বিদায় দিতে পারছেন না!
এরপর রাতে তিনি অন্য একটি ফেসবুক পেজে হাটহাজারীবাসীর উদ্দেশ্যে লেখেন, ‘এই পেজে যারা আমার পাশে ছিলেন, সমর্থন দিয়েছেন, দোয়া করেছেন তাদের প্রতি আমার সীমাহীন কৃতজ্ঞতা। প্রজাতন্ত্রের একজন সামান্য কর্মচারীর প্রতি আপনারা যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন তা তুলনাহীন। আমি ১০০% নিশ্চিত আপনাদের সঙ্গে আমি মনের অজান্তে দুর্ব্যবহার করেছি। আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আপনাদের জন্য দোয়া করি। এই মহামারিতে আল্লাহ প্রিয় হাটহাজারীবাসীকে সুস্থ রাখুক। বিদায় বেলায় একটা কথা আপনাদের বলে যাই, আমি শুধুমাত্র আল্লাহর ভয়ে সবসময় হারাম খাওয়া থেকে বিরত থেকেছি। আপনাদের দোয়া কামনায়- মোহাম্মাদ রুহুল আমিন।’