প্রথম পাতা
মুমূর্ষু রোগী ছাড়া ঠাঁই মিলছে না হাসপাতালে
শুভ্র দেব
২৪ জুলাই ২০২১, শনিবার, ৯:১২ অপরাহ্ন
চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে। চাপা কষ্ট বুকে নিয়ে কিছু খোঁজার চেষ্টা করছেন। একটু পরপর দুইহাত ওপরে তুলে সৃষ্টিকর্তার কাছে ফরিয়াদ করছেন ‘বাবা হারুন তুই কই চলে গেলি, তরে আমি বাঁচাতে পারলাম না, আল্লাহ আমার ছেলেটারে এনে দাও, বড় আদরের ছেলে আমার, আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো? করোনা আক্রান্ত ছেলের মৃত্যুতে হাসপাতালে বসে এভাবেই আহাজারি করছিলেন এক মা। তার আহাজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হচ্ছিল। তার পাশে বসে মৃত ছেলের স্ত্রীও আহাজারি করছিলেন।
ছেলে হারুন অর রশিদ (৩৮) এক সপ্তাহ ধরে জ্বর, কাশি, শরীর ব্যথায় ভুগছিলেন। কুমিল্লার দাউদকান্দির বাসিন্দা হারুন এলাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি। অবস্থা বেগতিক হওয়ায় তাকে নেয়া হয় কুমিল্লা সদর হাসপাতালে। চিকিৎসকরা হারুনের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন। পরে ঢাকায় এনে তার স্বজনরা ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আইসিইউ লাগবে বলে জানান। ব্যয়বহুল হওয়াতে তার পরিবার ওই হাসপাতালের সাধারণ শয্যায় একদিন রেখে গতকাল দুপুরে রওয়ানা দেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্য। হারুনের স্বজনরা যখন ঢাকা মেডিকেলে এসে পৌঁছান ততক্ষণে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পৌঁছামাত্র তার মৃত্যু হয়।
হারুনের মা নাজমা বেগম বলেন, দুই ছেলের মধ্যে হারুন বড়। এলাকায় ছোটখাটো ব্যবসা করে। ব্যবসার খাতিরে কিছুদিন আগে ঢাকায় এসেছিল। বাড়ি যাবার পর থেকেই তার শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এলাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে কোনো লাভ হয়নি। এর মধ্যে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। এজন্য চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে নিয়ে আসি ঢাকাতে। টাকার অভাবে ইবনেসিনা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারিনি। তার অক্সিজেন লেভেল কম ছিল। তাই আইসিইউ প্রয়োজন হয়। বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে খরচ বেশি। তাই সরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসলাম। ঢামেকে এসে এম্বুলেন্সে বসে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেছি। কিন্তু একটা ট্রলির ব্যবস্থা করতে পারি নাই। এখানে আসার পর হারুনের শ্বাসকষ্ট আরও বেড়ে যায়। নিজ চোখেই ছেলের কষ্ট দেখছিলাম। অথচ কিছুই করতে পারছিলাম না। রোগীর সঙ্গে আমরা দুজনই নারী। আমাদের পক্ষে তাকে এম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে জরুরি বিভাগ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। আমাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে একজন এসে তার অক্সিজেন লেভেল মেপে দ্রুত জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। তারপর জানানো হলো সে আর বেঁচে নাই।
এদিকে ঢাকার করোনা ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংকট থাকায় গুরুতর রোগী ছাড়া ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। করোনা পজেটিভ কিন্তু শারীরিক অবস্থা মোটামুটি ভালো আছে এমন রোগীদের ওষুধ লিখে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অথচ এসব রোগীদের ঢাকার বাইরের জেলা হাসপাতাল থেকে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে ভর্তি হতে না পেরে আবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা। এতে করে জেলা হাসপাতালগুলোর পরামর্শে ঢাকায় আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। একদিকে যেমন তাদের টাকা ও সময়ের অপচয় হচ্ছে। অন্যদিকে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে রোগীরা দীর্ঘসময় চিকিৎসা বঞ্চিত থাকছেন। নরসিংদী সদরের বাসিন্দা মারুফ হোসাইন (২৭)। মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মারুফ ঈদের আগে থেকেই জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, পেটে সমস্যায় ভুগছিলেন। নরসিংদীতে প্রাথমিক চিকিৎসা করালে তার এই সমস্যাগুলোর কিছুটা উন্নতি হয় তবে নতুন করে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় পড়েন। নরসিংদীর চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। ঢামেক হাসপাতালে শয্যা সংকট দেখিয়ে তাকে ভর্তি নেয়া হয়নি। এম্বুলেন্সে শুয়ে কয়েকঘণ্টা অপেক্ষার পর তার ভাগ্যে শয্যা জোটেনি। মারুফ বলেন, আমার অক্সিজেন লেভেল নব্বইয়ের নিচে। এখানে বলা হচ্ছে আমার শারীরিক অবস্থা ভালো তাই বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার জন্য। বলা হচ্ছে শয্যা নাই। কিন্তু যখন শয্যা থাকে তখনো ভর্তি হতে বেগ পেতে হয়।
৫৫ বছর বয়সী রিনা বেগমকে বাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকার করোনা ডেডিকেটেড মুগদা হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন তার ছেলে মুসা। রিনার অক্সিজেন লেভেল ৮২। মুগদা হাসপাতাল থেকে বলা হচ্ছে ধীরে ধীরে তার অবস্থার অবনতি হচ্ছে। জরুরি বিভাগের পর্যবেক্ষণে তাকে রাখা হবে। শয্যা সংকট আছে। চিকিৎসকরা তার অবস্থা বুঝে ভর্তি নেবেন। রিনার ছেলে মুসা বলেন, ১৫ দিন ধরে আমার মা অসুস্থ। এলাকায় অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। অবস্থা ভালো না। স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকায় এনেছি। এখানে ভর্তি নেবে কিনা জানি না। তারা বলছেন শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপাতত তাকে জরুরি বিভাগের বাইরে একটি হুইল চেয়ারে বসিয়ে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে।
ছেলে হারুন অর রশিদ (৩৮) এক সপ্তাহ ধরে জ্বর, কাশি, শরীর ব্যথায় ভুগছিলেন। কুমিল্লার দাউদকান্দির বাসিন্দা হারুন এলাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি। অবস্থা বেগতিক হওয়ায় তাকে নেয়া হয় কুমিল্লা সদর হাসপাতালে। চিকিৎসকরা হারুনের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন। পরে ঢাকায় এনে তার স্বজনরা ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আইসিইউ লাগবে বলে জানান। ব্যয়বহুল হওয়াতে তার পরিবার ওই হাসপাতালের সাধারণ শয্যায় একদিন রেখে গতকাল দুপুরে রওয়ানা দেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্য। হারুনের স্বজনরা যখন ঢাকা মেডিকেলে এসে পৌঁছান ততক্ষণে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পৌঁছামাত্র তার মৃত্যু হয়।
হারুনের মা নাজমা বেগম বলেন, দুই ছেলের মধ্যে হারুন বড়। এলাকায় ছোটখাটো ব্যবসা করে। ব্যবসার খাতিরে কিছুদিন আগে ঢাকায় এসেছিল। বাড়ি যাবার পর থেকেই তার শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এলাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে কোনো লাভ হয়নি। এর মধ্যে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। এজন্য চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে নিয়ে আসি ঢাকাতে। টাকার অভাবে ইবনেসিনা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারিনি। তার অক্সিজেন লেভেল কম ছিল। তাই আইসিইউ প্রয়োজন হয়। বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে খরচ বেশি। তাই সরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসলাম। ঢামেকে এসে এম্বুলেন্সে বসে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেছি। কিন্তু একটা ট্রলির ব্যবস্থা করতে পারি নাই। এখানে আসার পর হারুনের শ্বাসকষ্ট আরও বেড়ে যায়। নিজ চোখেই ছেলের কষ্ট দেখছিলাম। অথচ কিছুই করতে পারছিলাম না। রোগীর সঙ্গে আমরা দুজনই নারী। আমাদের পক্ষে তাকে এম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে জরুরি বিভাগ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। আমাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে একজন এসে তার অক্সিজেন লেভেল মেপে দ্রুত জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। তারপর জানানো হলো সে আর বেঁচে নাই।
এদিকে ঢাকার করোনা ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংকট থাকায় গুরুতর রোগী ছাড়া ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। করোনা পজেটিভ কিন্তু শারীরিক অবস্থা মোটামুটি ভালো আছে এমন রোগীদের ওষুধ লিখে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অথচ এসব রোগীদের ঢাকার বাইরের জেলা হাসপাতাল থেকে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে ভর্তি হতে না পেরে আবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা। এতে করে জেলা হাসপাতালগুলোর পরামর্শে ঢাকায় আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। একদিকে যেমন তাদের টাকা ও সময়ের অপচয় হচ্ছে। অন্যদিকে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে রোগীরা দীর্ঘসময় চিকিৎসা বঞ্চিত থাকছেন। নরসিংদী সদরের বাসিন্দা মারুফ হোসাইন (২৭)। মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মারুফ ঈদের আগে থেকেই জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, পেটে সমস্যায় ভুগছিলেন। নরসিংদীতে প্রাথমিক চিকিৎসা করালে তার এই সমস্যাগুলোর কিছুটা উন্নতি হয় তবে নতুন করে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় পড়েন। নরসিংদীর চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। ঢামেক হাসপাতালে শয্যা সংকট দেখিয়ে তাকে ভর্তি নেয়া হয়নি। এম্বুলেন্সে শুয়ে কয়েকঘণ্টা অপেক্ষার পর তার ভাগ্যে শয্যা জোটেনি। মারুফ বলেন, আমার অক্সিজেন লেভেল নব্বইয়ের নিচে। এখানে বলা হচ্ছে আমার শারীরিক অবস্থা ভালো তাই বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার জন্য। বলা হচ্ছে শয্যা নাই। কিন্তু যখন শয্যা থাকে তখনো ভর্তি হতে বেগ পেতে হয়।
৫৫ বছর বয়সী রিনা বেগমকে বাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকার করোনা ডেডিকেটেড মুগদা হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন তার ছেলে মুসা। রিনার অক্সিজেন লেভেল ৮২। মুগদা হাসপাতাল থেকে বলা হচ্ছে ধীরে ধীরে তার অবস্থার অবনতি হচ্ছে। জরুরি বিভাগের পর্যবেক্ষণে তাকে রাখা হবে। শয্যা সংকট আছে। চিকিৎসকরা তার অবস্থা বুঝে ভর্তি নেবেন। রিনার ছেলে মুসা বলেন, ১৫ দিন ধরে আমার মা অসুস্থ। এলাকায় অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। অবস্থা ভালো না। স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকায় এনেছি। এখানে ভর্তি নেবে কিনা জানি না। তারা বলছেন শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপাতত তাকে জরুরি বিভাগের বাইরে একটি হুইল চেয়ারে বসিয়ে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে।