বাংলারজমিন

ডাক্তার ভর্তি নেননি, দিরাইয়ে হাসপাতালের সামনে রাস্তায় নবজাতকের জন্ম

দিরাই (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

২২ জুলাই ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৭:৪০ অপরাহ্ন

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে প্রসব ব্যথায় কাতর স্ত্রীকে নিয়ে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে দুর্গম পথ পেরিয়ে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন এক স্বামী। জরুরী বিভাগে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার ওই নারীকে ভর্তি না নিয়ে সিলেটে নিয়ে যেতে বলেন। শরণাপন্ন হন এক মেডিকেল অফিসারের। তিনিও একই পরামর্শ দেন। ভর্তির চেষ্টা করে ব্যর্থ রেস্তোরাঁ শ্রমিক স্বামী স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতাল ফটকের সামনে এসে এম্বুল্েন্সের খোঁজ করতে থাকেন। এসময় স্ত্রীর প্রসব ব্যথা তীব্র হয়ে উঠলে তাকে ফটকের সামনে দিরাই নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের রাস্তায় নিয়ে যান। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফুটফুটে মেয়ে সন্তান জন্ম দেন তার স্ত্রী। ভুক্তভোগী ওই নারী দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ডুলকর গ্রামের রুবেল মিয়ার স্ত্রী রাসমিনা (২১)। বৃহস্পতিবার (২২) জুলাই দুপুর ১২ টার দিকে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটক সংলগ্ন উপজেলা নির্বাচন অফিসের প্রবেশপথে এ ঘটনা ঘটে। রাসমিনা'র স্বামী রুবেল মিয়া (২৭) বলেন, আমার স্ত্রীর প্রসব ব্যথা শুরু হলে আমি দিরাই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসি। প্রথমে কাউকে পাইনি। অনেকক্ষণ খোঁজাখুজি করে একজনকে জরুরি বিভাগে পাই। তিনি আমার স্ত্রীকে সিলেট নিয়ে যেতে বলেন। আমি গরীব মানুষ। এতো টাকা কোথায় পাবে। এই চিন্তা করে বড় ডাক্তারের খোঁজ করতে থাকি। এসময় ডাক্তার মনি রাণীকে খোঁজে পেয়ে তাকে আমার স্ত্রীর বিষয়ে বলি। তিনি আমার স্ত্রীকে দেখে বলেন, রোগীর অবস্থা ভালো না। তাড়াতাড়ি সিলেট নিয়ে যেতে হবে। আমি বারবার অনুরোধ করলে বলেন, দোতলায় নিয়ে যেতে। তিনি বলে দেবেন। আমি কোলে করে আমার স্ত্রীকে নিয়ে দোতলায় যাই। সেখানে একজন নার্স ছিল। আমাকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। নার্স বলে এখানে রাখলে মা-সন্তান দুজনই মারা যেতে পারে। আমার স্ত্রীকে কোন পরীক্ষাও করা হয়নি। আমি বারবার অনুরোধ করেছি, অন্তত: দুইঘন্টা আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে রাখতে। কিন্তু তারা রাখেনি। তাদের কথায় ভয়ে নিরুপায় হয়ে সিলেট যাওয়ার জন্য রওয়ানা হই। হাসপাতালের গেইটের সামনে যাওয়ার পর আমার স্ত্রীর ব্যথা সহ্য করতে পারছিল না। রাস্তার পাশের অফিসের রাস্তায় নিয়ে গেলে সাথে থাকা আমার মা ও আরেকজন মহিলার সহযোগিতায় কাপড় দিয়ে পর্দা দিয়ে আমার স্ত্রী কিছু সময়ের মধ্যে ১ মেয়ে সন্তানের দেয়। এটি আমার প্রথম সন্তান ছিল। পরে আমি হাসপাতালে গিয়ে একজন নার্সকে ঘটনা বললে তিনি ওই অফিসের বারান্দায় এসে আমার স্ত্রী সন্তানকে দেখে যান। মা ও মেয়ে সুস্থ আছে এবং তাদের বাড়ি নিয়ে গেছেন বলে জানান রুবেল মিয়া। আক্ষেপ করে রুবেল মিয়ার সাথে থাকা তার ছোট ভাই জাহিদুল বলেন, যা দেখলাম হাসপাতালে, বলার ভাষা নাই। যাদের টাকা আছে, তাদের হাসপাতাল আছে, ডাক্তার আছে, চিকিৎসা আছে। যাদের টাকা নাই তাদের কিছু নেই। ঘটনার সময়ে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ স্বাধীন কুমার দাস তার সিলেটের বাসায় ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মনি রাণীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status