অনলাইন
‘বাংলাদেশে বিরোধী দলের অভাব গণতন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে’
২২ জুলাই ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:৩২ পূর্বাহ্ন
১৯৭৪ সালে দেশটিতে ব্যাপক অনাহারে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল, এরই মধ্যে এর ১৬৬ মিলিয়ন জনসংখ্যার জন্য খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ । পাশাপাশি ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন বিদেশী অভিবাসী অর্থ পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে সহায়তা করছেন। শুধু ২০২০ সালেই রেমিট্যান্স থেকে বাংলাদেশ ১৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে । বাংলাদেশের কৃতিত্ব কেবলমাত্র অর্থনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই , সামাজিক খাতেও দেশটি ভালো কাজ করছে। জনসেবাতে বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে । কমেছে লিঙ্গ বৈষম্য। ১৯৬০ সালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে উর্বরতার হার একই ছিল। প্রতি মহিলা পিছু ৬ দশমিক ৭ এবং ভারতে এটি ছিল ৫ দশমিক ৯। ৬০ বছর পর ২০২০ সালে বাংলাদেশ তার উর্বরতার হার হ্রাস করে ২ শতাংশে , ভারতে সেই হার ২ দশমিক ২ এবং পাকিস্তানে ছিল ৩ দশমিক ৪ শতাংশ । স্বাস্থ্য খাতেও পরিকাঠামোগত উন্নয়ন বাড়ায় বেড়েছে দেশের মানুষের গড় আয়ুও। ২০১৮ সালে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু ছিল ৭২ দশমিক ৩২ বছর। পাকিস্তানে এটি ছিল ৬৭ দশমিক ১১ বছর এবং ভারতে এটি ছিল ৬৯ দশমিক ৪২ বছর। সাক্ষরতার হারে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে এবং ভারতের আরও নিকটে এসে গেছে। আরও লক্ষণীয়ভাবে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে উচ্চতর শিক্ষা অর্জনে এগিয়ে রয়েছে।পুষ্টি থেকে স্যানিটেশন, শিক্ষা থেকে ক্ষমতায়ন, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বাংলাদেশের অগ্রগতি লক্ষণীয়। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য লক্ষণীয় হলেও দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো অন্য কথা বলছে। ১৯৭৫, ১৯৮২ এবং ২০০৭- এ তিনটি সামরিক অভ্যুত্থান প্রত্যক্ষ করেছে বাংলাদেশ। সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজিত হওয়ায় ২০১১ সালে দেশের গণতান্ত্র বড়সড় ধাক্কা খায়। এর ফলে বৃহত্তম বিরোধী দল ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন বয়কট করেছিল। তার পর থেকেই বাংলাদেশের বিরোধী দলকে কোনঠাসা করা হয়েছে। ২০১৮ সালে নির্বাচনে জয়লাভের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মসনদে তৃতীয়বার আসীন হয়েছেন । এদিকে অনৈতিক অনুদানের অভিযোগে দেশটির প্রধান বিরোধী নেত্রী ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ১৭ বছরের কারাবাসের সাজা দেয়া হয়েছে। বিরোধী দলের অনুপস্থিতি এবং সংসদীয় তদারকির অভাব দেশের প্রশাসনের মান নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তালিকায় অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের কারণে ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর হুমকি কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার ভারও রয়েছে বাংলাদেশের ওপর মুখোমুখি, এবং শীঘ্রই তাদের প্রত্যাবর্তন খুব আশাব্যঞ্জক হবে বলে মনেও হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বলা যায় , সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিকাশে সত্যিই প্রশংসনীয় অগ্রগতি করেছে। তবে শক্তিশালী বিরোধী পক্ষের অভাব দেশটির গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হানতে পারে । সেই পরিস্থিতি রোধ করতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্ব সহকারে দৃষ্টি দেয়া দরকার।
একটি গালফ নিউসের প্রতিবেদন ,
লিখেছেন- অশোক সোয়েন, সুইডেনের ইউপ্পসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক