বিশ্বজমিন

গবেষণায় তথ্য: করোনাকালে ভারতে মৃতের সংখ্যা ৪০ লাখ!

মানবজমিন ডেস্ক

২০ জুলাই ২০২১, মঙ্গলবার, ৩:৫৮ অপরাহ্ন

করোনা মহামারিকালে ভারতে মৃতের সংখ্যা সরকারি হিসাবের ১০ গুণ হতে পারে। এই সংখ্যা ৪০ লাখ। নতুন এক গবেষণায় এ কথা জানিয়ে বলা হয়েছে, এটা হতে পারে আধুনিক ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ মানব ট্রাজেডি। করোনা ভাইরাস দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশে কি ভয়াবহতা সৃষ্টি করেছে তা নিয়ে সবচেয়ে বিস্তৃত গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ভারতে সরকারের হিসাবে মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে ৪ লাখ ১৪ হাজার। এই সংখ্যা অনেক কমিয়ে দেখানো হয়েছে। প্রকৃত মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করা হয়। কিন্তু ভারত সরকার এসব উদ্বেগকে অতিরিক্ত বাড়িয়ে বলা এবং বিভ্রান্তিকর বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

মঙ্গলবার অতিরিক্ত মৃত্যুর বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। এতে দেখা যায় সরকারি হিসাব এবং প্রত্যাশিত হিসাবের মধ্যে বিস্তর ফারাক। এতে বলা হয়ছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এ বছর জুন পর্যন্ত সময়ে ভারতে মারা গেছেন ৩০ লাখ থেকে ৪৭ লাখ মানুষ। তবে প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে কমবেশি হতে পারে। কিন্তু এ কথা সত্য যে, সরকারি হিসাবে মৃত্যুর যে সংখ্যা দেখানো হয়েছে, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে বহুগুন বেশি। এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন ভারত সরকারের সাবেক প্রধান অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রামানিয়ান ও সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ও হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অন্য দু’জন সিনিয়র গবেষক।

তারা রিপোর্টে বলেছেন, মৃতের সংখ্যা গণনায় ভুল হতে পারে। কারণ, হাসপাতালগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ ছিল। স্বাস্থ্য বিষয়ক বিধিনিষেধ বিলম্বিত ছিল এবং বিঘ্নিত হয়েছে- এমন সময়ে বহু মানুষ মারা গেছেন। বিশেষ করে এ ঘটনা ঘটেছে এ বছরের শুরুতে যখন ভয়াবহভাবে মৃত্যু ‘পিক’ বা চূড়ান্তে ওঠে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা কয়েক মিলিয়ন হতে পারে। হাজার হাজার নয়। ভারত ভাগ এবং স্বাধীনতা অর্জনের পর এটাই ভারতের সবচেয়ে ভয়াবহ মানব ট্রাজেডি।

উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে বৃটিশদের শাসন থেকে মুক্ত হয় ভারত উপমহাদেশ। সৃষ্টি হয় ভারত ও পাকিস্তান। ওই সময় হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সহিংসতায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ মারা যান। তার সঙ্গে তুলনা করে এই রিপোর্টে ট্রাজেডির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা হিসাব করা হয়েছে তিনটি পদ্ধতি ব্যবহার করে। তা হলো, ১. নাগরিক রেজিস্ট্রেশনের ডাটা। এই ডাটায় জন্ম ও মৃত্যু  রেকর্ড করা হয়। এমন সাতটি রাজ্যের ওপর রেকর্ড আমলে নেয়া হয়েছে। ২. বøাড টেস্ট। যা বিশ্বের ভয়াবহ মৃত্যুর পাশাপাশি ভারতে মৃত্যুর বিষয় প্রকাশ করে। ৩. এক বছরে প্রায় ৯ লাখ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর জরিপ করা হয়েছে।

গবেষকরা সতর্ক করেছে যে, প্রতিটি পদ্ধতিতেই কিছু দুর্বলতা আছে। যেমন অর্থনৈতিক অবস্থার জরিপে মৃত্যুর বিষয়টি নেই। পক্ষান্তরে গবেষকরা সব রকম মৃত্যুকে আমলে নিয়েছেন এবং তা আগের বছরের মৃত্যুহারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বিশ্বজুড়ে এই পদ্ধতিকে যথাযথ বলে বিবেচনা করা হয়। গবেষকরা আরো বলেছেন, তারা যে ভাইরাস সংক্রমণ এবং সাতটি রাজ্যে করোনায় মৃত্যুর বিষয় আমলে নিয়েছেন, তা ভারতের সব রাজ্যের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য নয়। অন্য দেশগুলোর তুলনায় ভারতে মৃত্যুর সংখ্যা কম করে দেখানোর কিছু কারণও থাকতে পারে। গবেষকরা বলেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দিক দিয়ে ভারত দ্বিতীয়। সেখানে বসবাস করেন প্রায় ১৪০ কোটি মানুষ। এ ছাড়া পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। করোনা মহামারির আগের সব মৃত্যু রেকর্ড করা হয়নি।

দক্ষিণ ভারতের ভেলোরে অবস্থিত ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজে ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করেন ড. জ্যাকব জন। তিনি এই রিপোর্ট রিভিউ করেছেন। বলেছেন, ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা করোনার জন্য ছিল অপ্রস্তুত। এ জন্য এখানে করোনার ভয়াবহতা বেশি হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, গত বছর প্রথম যখন করোনা সংক্রমণ হয়, তখন প্রায় ২০ লাখ ভারতীয় মারা গিয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ মারা যাওয়ার পর গত কয়েক মাসে ভারতের কিছু রাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আগে মারা যাওয়া মানুষদের বিষয়ে রিপোর্ট করা হয়নি। ফলে অনেক মৃত্যু সরকারিভাবে রেকর্ডেড না। সরকারি ডাটা ব্যবহার করে ভারতের অনেক সাংবাদিক কিছু রাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি বলে রিপোর্ট করেছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন এসব তথ্য তাদেরকে ভারতে করোনা সংক্রমণ বিস্তারের বিষয়ে ভালভাবে বুঝতে সহায়তা করবে।

মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটিতে গণিত নিয়ে গবেষণা করেন মুরাদ বানাজি। তিনি ভারতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যার দিকে দৃষ্টি রেখেছেন। মুরাদ বলেছেন, সম্প্রতি কিছু ডাটা মিলেছে, যা দিয়ে মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেখা হচ্ছেবলে সন্দেহ হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status