শেষের পাতা
উন্নয়নই প্রতিশ্রুতি আতিক ও শফির
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২০ জুলাই ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:১২ অপরাহ্ন
সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থীদের মুখে মুখে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। যেখানেই যাচ্ছেন দিচ্ছেন আশ্বাসও। প্রতিশ্রুতি নিয়েও চলছে প্রতিযোগিতা। তবে, গোছানো উন্নয়ন প্রতিশ্রুতিতে এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। ইতিমধ্যে তিনি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। এখনো জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক ও শফি আহমদ চৌধুরী ইশতেহার ঘোষণা করেননি। তারা উন্নয়ন সংবলিত ইশতেহার ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতারা। তারা জানিয়েছেন- ঈদের পর হয়তো ইশতেহার ঘোষণা করা হতে পারে। আবার লকডাউনের কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে ইশতেহার ঘোষণা নাও হতে পারে। সেই ইশতেহার তারা ভোটারের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন। সিলেট-৩ আসনের এবারের উপ-নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে উন্নয়নের বিষয়টি। কারণ- প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী সমানভাবে তিন উপজেলায় সম উন্নয়ন করতে পারেননি। কয়েকটি উন্নয়ন হচ্ছে বিশাল ব্যয়ের। এ কারণে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত চেষ্টা-তদবির করে আলোচনায় রাখলেও তিনি সেগুলো করে যেতে পারেননি। এ কারণে বাকি থাকা ওই উন্নয়নগুলোর কথা রটছে মানুষের মুখে মুখে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব এসব উন্নয়ন তুলে ধরে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ আসনে বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি ছিলেন শফি আহমদ চৌধুরী। তার হাত ধরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ সহ নানা উন্নয়ন সম্পন্ন হয়েছে এ আসনে। এবার স্বতন্ত্র হওয়ার পর তার টার্গেট ভিন্ন। খুব কম প্রতিশ্রুতিও তার। আর সেটি হচ্ছে সিলেট-৩ আসনের মানুষের ঘরে ঘরে গ্যাস পৌঁছে দিতে চান। নির্বাচনে নামার মূহূর্তে তিনি ঘরে ঘরে গ্যাস পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট প্রচারণা শুরু করেন। জানিয়েছেন- ‘তার ৬ বছরের শাসনে এলাকার উন্নয়নে অনেক কিছুই করেছেন। কিন্তু গ্যাস পৌঁছে দিতে পারেননি। সময়ও পাননি। এ কারণে এবার এসে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনী এলাকা এখনো গ্যাসবঞ্চিত। সিলেট শহরের পাশাপাশি এলাকা হলেও গ্যাস না থাকায় মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে। নির্বাচিত হলে ঘরে ঘরে গ্যাস পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবেন। খেলাধুলায় উন্নত ছিল সিলেট-৩ আসনের দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা। কিন্তু একটি স্টেডিয়াম নেই। নির্বাচিত হলে তিন উপজেলায় তিনটি স্টেডিয়াম নির্মাণ করবেন বলে জানিয়েছেন। মূলত এই দুই প্রতিশ্রুতি তার মুখ্য হলেও এ আসনে যোগাযোগ, নারী শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, গ্রামে গ্রামে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছানোই থাকবে মূল লক্ষ্য।’ তিনি জানিয়েছেন- ‘১৯৮৬ সাল থেকে নির্বাচনী এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সবকিছুই তার জানা। মানুষের সেবা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। করেছেনও। আবার নির্বাচিত হলে তিনি মানবসেবায়ই করবেন। জীবনের শেষ বয়সে এখন আর মানবসেবা ছাড়া তার মাথায় অন্য কোনো চিন্তা নেই বলে জানান শফি আহমদ চৌধুরী।’ সুযোগের অপেক্ষায় চার দশক ধরে এক নাগাড়ে প্রার্থী হওয়া জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এবারের উপ-নির্বাচনের প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি এ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন। কিন্তু এখনো জয়ের দেখা পাননি। আতিক ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন; এই নির্বাচনই হচ্ছে তার জীবনের শেষ নির্বাচন। এ কারণে তিনি শেষবারের নির্বাচনে জয়ের মুখ দেখতে চান। তবে- আতিকের উন্নয়ন ফর্মুলায় চমক রয়েছে। জানান- তার নির্বাচনী আসনের গ্রামীণ জনপদ এখনো অবহেলিত। এই জনপদে গ্রামের মানুষের কাছে এখনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এ কারণে তিনি গ্রামকে উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। মানুষের উন্নয়নের জন্য তিনি কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাকে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আতিক জানিয়েছেন- তার দল জাতীয় পার্টি উন্নয়নে বিশ্বাসী। সিলেট-৩ আসনের মানুষকে এরশাদ মনে-প্রাণে ভালোবাসতেন। আর এর প্রতিদানও এ আসনের মানুষ দিয়েছেন। জাতীয় পার্টির এমপি এ আসন থেকে বার বার নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে এরশাদের প্রতীক লাঙ্গলের প্রতি মানুষের আকর্ষণ রয়েছে। কিন্তু এ আসনের মানুষ এখনো সেই উন্নয়ন কাঙ্ক্ষিত ফেরিওয়ালা পায়নি। তিনিই হতে চান এ আসনের উন্নয়নের ফেরিওয়ালা। তিনি গ্রামকে প্রাধান্য দিলেও এ আসনকে অতীতের ধারাবাহিকতায় শিল্প উন্নত এলাকা হিসেবে উপহার দিতে চান। উন্নয়নের ধারবাহিকতায় কর্মস্থান বাড়াতে এ আসনকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা হিসেবে গড়ে তোলাই হবে তার মূল লক্ষ্য বলে জানান। একই সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এ আসনের মানুষ অনেক পিছিয়ে। নদীভাঙনের কারণে মানুষ ঘরবাড়ি হারাচ্ছেন। নদীকেন্দ্রিক এ আসনকে ব্যবসাবান্ধব এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি কাজ করবেন বলে জানান। আতিক জানান- বালাগঞ্জে কুশিয়ারা নদী, বড়ভাগা নদী, দক্ষিণ সুরমায় বাসিয়া নদীতে সেতু স্থাপন সহ গ্রামীণ রাস্তাকে পাকা করে মূল রাস্তার সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।