অনলাইন

বিভিন্ন দেশে ফোনে আড়িপাতার ঘটনা ফাঁস

ইসরাইলি ‘পেগাসাস’ দিয়ে বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক, রাজনীতিক, মানবাধিকারকর্মীদের ফোন হ্যাক

তারিক চয়ন

১৯ জুলাই ২০২১, সোমবার, ৯:৫৪ পূর্বাহ্ন

বিভিন্ন দেশের রাজনীতিক, সাংবাদিক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্মার্টফোনে ইসরাইলের তৈরি হ্যাকিং সফটওয়্যার 'পেগাসাস' ব্যবহার করে আড়িপাতার ঘটনা ফাঁস হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। প্যারিসভিত্তিক অলাভজনক সংবাদ সংস্থা ফরবিডেন স্টোরিজ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর অনুসন্ধানে এ ঘটনা বেরিয়ে আসে। সংগঠন দুটি নাম ফাঁস হওয়া ব্যক্তিদের (যাদের স্মার্টফোনে আড়িপাতা হয়েছিল) তালিকা বৃটেনের গার্ডিয়ান, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট, ভারতের দ্য ওয়্যার সহ বিশ্বের ১০ টি দেশের মোট ১৭টি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে শেয়ার করে। তারা সবাই মিলে এই অনুসন্ধানের নাম দিয়েছে ‘পেগাসাস প্রজেক্ট’ যাতে ৮০ জনেরও বেশি সাংবাদিক যুক্ত ছিলেন। তাদের দাবি, পেগাসাস নামের স্পাইওয়ার অ্যাপ যা সাধারণত জঙ্গি কার্যকলাপের উপর নজরদারি চালাতে বা সামরিক গোয়েন্দাদের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সেই অ্যাপ দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গোপন নজরদারি চলছিল।

বৃটিশ প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পেগাসাস ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো 'টার্গেট' করে নিজ দেশের বিভিন্ন ব্যক্তিদের উপর নজরদারি চালাচ্ছিল যাদের তারা হুমকি বলে মনে করে। এসব সরকার কোন না কোন সময় নাগরিক অথবা বিরোধী রাজনৈতিক নেতা অথবা সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতদের উপরে গোপন নজরদারির জন্য অভিযুক্ত হয়েছে। এই দেশগুলোর মধ্যে বেশকিছু দেশের সরকার আবার পেগাসাস অ্যাপ-এর নির্মাতা সংস্থা এনএসও-র কাছ থেকে মিলিটারি ইনটেলিজেন্সির প্রযুক্তি কেনার গ্রাহক। ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ পেগাসাস নামে ওই স্পাইওয়ারের নির্মাতা সংস্থা এবং এই অ্যাপটিকে মিলিটারি ইনটেলিজেন্সের লাইসেন্সও দিয়েছে ইসরাইল সরকার। এটা দিয়ে আইফোন কিংবা অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ঢুকে ব্যবহারকারীর অজান্তে তার বার্তা, ছবি, ইমেইল পাচার; কল রেকর্ড, মাইক্রোফোন চালু রাখা সক্ষম। এনএসও গ্রুপ অবশ্য বলছে, অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের উপর নজরদারি চালানো তাদের ওই স্পাইওয়্যার তৈরির লক্ষ্য। কিন্তু গোপনে ব্যবহার করতে বিভিন্ন দেশের সরকার এনএসও-র গ্রাহক হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অ্যামনেস্টির সাইবার সিকিউরিটি ল্যাব পরিচালনাকারী ক্লডিও গার্নিয়েরি বলেছেন, “যদি কোনো ফোনে (স্মার্টফোন) পেগাসাস সফটওয়্যারটি ঢোকানো যায়, তবে এনএসও-র গ্রাহক পুরো ফোনটির দখলই পেয়ে যাবে। ফোনের মালিকের মেসেজ, কল, ছবি, ইমেইল সবই দেখতে পাবে, এমনকি হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, সিগন্যালের বার্তাগুলোও পড়তে পারবে। গোপনে ক্যামেরা কিংবা মাইক্রোফোন চালুও করতে পারবে। স্মার্টফোন ব্যবহার না করলেও এটি আশপাশ থেকে শব্দ গ্রহণ করতে থাকে।"

পেগাসাস প্রজেক্ট বলছে ৫০ হাজারেরও বেশি ফোন নম্বরের তালিকা তাদের অনুসন্ধানে সামনে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৬ সাল থেকে এনএসও–এর গ্রাহকরা এসব নম্বরে আড়ি পেতেছে। সেখানে অন্তত ৩৭টি (সিনিয়র সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, বিজনেস এক্সিকিউটিভস, সৌদি আরবের খুন হওয়া সাংবাদিক জামাল খাসোগি-র সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দুই নারী) এমন সেলফোন নম্বর রয়েছে যাদের উপর গোপন নজরদারি চালানোর একদম যথাযথ প্রমাণ রয়েছে।

টার্গেট করা ব্যক্তিদের তালিকা ধাপে ধাপে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে পেগাসাস প্রজেক্ট এর সাথে জড়িত সংবাদমাধ্যমগুলো। প্রথম ধাপে প্রকাশিত তালিকায় বিশ্বের ২১ দেশের (কমপক্ষে ১২ এনএসও গ্রাহক দিয়ে) ১৮০ জন সাংবাদিককে 'টার্গেট' করার কথা বলা হয়েছে যাদের মধ্যে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস এর মতো বিশ্বখ্যাত পত্রিকার সাংবাদিকরা রয়েছেন। এনএসও গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকারঃ বাহরাইন, মরক্কো, সৌদি আরব, ভারত, মেক্সিকো, হাঙ্গেরি, আজারবাইজান, টোগো, রুয়ান্ডা।

ওই ১৮০ জনের মধ্যে ৩৮ জনই ভারতীয় সাংবাদিক যাদের অনেকেই হিন্দুস্তান টাইমস, নিউজ ১৮, দ্য হিন্দু এবং দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের মতো প্রথিতযশা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত। এর আগে রোববার সকালেই পেগাসাস আড়ি পাতছে এমন বিস্ফোরক দাবি করে এক টুইটে বিজেপি-র রাজ্যসভার সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী লিখেন, "আড়ি পাতা হচ্ছে দেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ফোনে, মোদীর মন্ত্রিসভার সদস্যদের ফোনে, আরএসএস নেতাদের ফোনেও।" ভারত সরকার অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসেও আলোচনায় এসেছিল পেগাসাস। তখন পেগাসাসের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বের অন্তত ১৪০০ ব্যক্তির ফোনে ইজরায়েলি প্রযুক্তি দিয়ে আড়ি পাতার অভিযোগ উঠেছিল। বলা হয়েছিল- চারটি মহাদেশের কূটনীতিক, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে যার মধ্যে ছিল ভারত-ও। ২০১৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপও পেগাসাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status