প্রথম পাতা

সিলেটে ফ্যাক্টর বিএনপি’র ভোট

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১৮ জুলাই ২০২১, রবিবার, ৯:৩০ অপরাহ্ন

সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে ভোটে না থেকে ‘ফ্যাক্টর’ বিএনপি। আলোচনায় থাকায় তিন প্রার্থী নানা কৌশলে গোপনে বিএনপি’র ভোট টানায় ব্যস্ত। প্রার্থী না থাকায় ফ্যাক্টর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের বিএনপি’র ভোট। দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর শফি চৌধুরীও হারিয়েছেন বিএনপির ভোট ব্যাংক। ফলে এ উপনির্বাচনে আলোচনায় এসেছে বিএনপির ভোট ব্যাংক। প্রার্থীরা তলে তলে দৌড়াচ্ছেন ওই ভোট ব্যাংকের দিকেই। চালাচ্ছেন নানা ফন্দি-ফিকির। ইতিমধ্যে ভোটের মাঠে পরিষ্কার হয়েছে- বিএনপির কর্মীরা ভোটে গেলে যার দিকেই পড়বে তিনি পরবেন বিজয়ের মালা। সিলেট-৩ আসনে (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) একক কর্তৃত্ব নেই কোনো দলেরই। প্রায় দুই যুগ আগে এ আসনে আধিপত্য ছিল জাতীয় পার্টির। ওই সময় জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন আব্দুল মুকিত খান। এ আসনকে বলা হতো এরশাদের দুর্গ। কিন্তু সেই দুর্গ পরে ভেঙে দিয়েছিলেন বিএনপি প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী। টানা ৫ বছরের শাসনে এ আসনে বেড়েছিল বিএনপির ভোট ব্যাংকও। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে ওই ব্যাংককে তছনছ করে দিয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। প্রায় তিন দশকের ভোটের সমীকরণে এ আসনে একক আধিপত্য বিস্তার লাভ করতে পারেনি কোনো দলই। এবারের উপনির্বাচনকে ঘিরে সিলেটের এই আসনে নানা সমীকরণ দেখা দিয়েছে। ভোটাররা এখন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করছেন; প্রশাসনের নিরপেক্ষ নীতি। করোনাকালের এই নির্বাচন। নির্বাচনের প্রচারণায় রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা। পাশাপাশি এ উপনির্বাচনের জয়, পরাজয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের তেমন লাভ-ক্ষতি নেই। ফলে এখনো ভোটের মাঠ নিরপেক্ষ রয়েছে বলে মনে করছেন ভোটাররা। কোনো চাপ কিংবা এক তরফা কোনো কিছুই দৃশ্যমান হয়ে ওঠেনি। এ আসনে নৌকার টিকিট পেলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব নতুন। বয়সে অন্যান্য প্রার্থীর চেয়ে অনেক তরুণ। তার পক্ষে তিন উপজেলার স্থানীয় আওয়ামী লীগ মাঠে ঐক্যবদ্ধ থাকলেও প্রয়াত এমপি বলয়সহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন বলয়ের নেতাকর্মীরা কোমর বেঁধে মাঠে নামেননি। এখনো তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা। করোনার কারণে প্রচারণায়ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃত্বের রয়েছে পিছুটান। ফলে হাবিবকে একাই ভোটের মাঠে দৌড়াতে হচ্ছে। তার পক্ষে এখনো সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা জোরেশোরে মাঠে নামেননি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল শুক্রবার থেকে তার পক্ষে মাঠে নেমেছেন। আর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান প্রচারণা শুরুর পর দক্ষিণ সুরমার কয়েকটি নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনে গেছেন। তৃণমূলের নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনী মাঠ থেকে দলের সিনিয়র নেতারা করোনার দোহাই দিয়ে ধীরে ধীরে নীরব হয়ে পড়ছেন। এর পেছনে অন্য কারণও থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তারা। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন দলীয় প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিরের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক ১৯৯১ সাল থেকে সিলেট-৩ আসনের নির্বাচনে রয়েছেন। এবারো তিনি জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে লাঙল প্রতীকে নির্বাচনে নেমেছেন। শুরুতে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্যর অভাব থাকলেও জেলা নেতাদের হস্তক্ষেপে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা এক হয়ে মাঠে নেমেছেন। তবে- এখনো তিন উপজেলায় আতিক কেন্দ্র ওয়ারি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করতে পারেননি। দলের নেতারা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে ৮০ ভাগ কমিটি গঠন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এবারের নির্বাচন আতিকের জন্য সুর্বণ সুযোগ ছিল। শফি চৌধুরী দলের সিদ্ধান্ত না মেনে প্রার্থী হওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীরা তার পেছন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এরপর থেকে আতিকের পক্ষেই তাদের মৌন সমর্থন রয়েছেন। কিন্তু আতিক সেই সমর্থনকে নিজের কাছে টানতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এককভাবে চেষ্টা চালিয়েও তিনি কূলকিনারা পাচ্ছেন না। ইতিমধ্যে বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে তার ‘গোপন’ বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণায় গতি না থাকায় আতিক এখনো নিজের পক্ষে ভোটের জোয়ার তুলতে পারেননি। তবে এবারের নির্বাচন তার শেষ নির্বাচন দাবি করে আতিক ভোটের মাঠে জোয়ার তুলতে চাইছেন। সিলেট-৩ আসনে বিএনপির একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতা শফি আহমদ চৌধুরী। তার সঙ্গে নির্বাচনী দৌড়ে পিছিয়ে ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম ও যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এমএ কাইয়ূম চৌধুরী। শফি আহমদ চৌধুরীতে আস্থা ছিল এ আসনের বিএনপির কর্মীদের। কিন্তু এবারের নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত না মেনে প্রার্থী হওয়ায় তার সেই অবস্থা জিরোতে নেমে এসেছে। যদিও শফি আহমদ চৌধুরী দাবি করেছেন- বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গেই রয়েছেন। নেতারা মাঠে না নামলেও কর্মীরা তার পক্ষে ভোট প্রচারণায় নেমেছেন। কিন্তু বাস্তবে এখনো ভোটের মাঠে সেই দৃশ্য পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তবে শফি আহমদ চৌধুরী মান অভিমান ভুলিয়ে বিএনপিকেই তার সঙ্গে নেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে কোথাও কোথাও তিনি সাড়া পাচ্ছেন। শফি আহমদ চৌধুরীর নির্বাচনী প্রচারণায় চোখ রাখছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও সিলেটের নেতারা। এরই মধ্যে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে প্রচারণায় নামায় বিএনপির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এই অবস্থায় সিলেট বিএনপি বলছে- অন্য কথা। সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সিলেট-৩ আসনের নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রে বিএনপির নেতাকর্মীরা যাবে না। ইতিমধ্যে আমরা সে নির্দেশনা দিয়ে রেখেছি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস হচ্ছে, বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা প্রতিবাদ স্বরূপ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। এবং এটাই হচ্ছে বিএনপির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status