প্রথম পাতা

কারখানার কমপ্লায়েন্সের জন্য নতুন সংস্থার কথা ভাবছে সরকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৭ জুলাই ২০২১, শনিবার, ৯:২৫ অপরাহ্ন

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, দেশের সব শিল্প কারখানার অগ্নি-নির্বাপণ, ভবনের কাঠামো ও পরিবেশগত কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমন্বয়ে আলাদা একটি সংস্থা করার কথা ভাবছে সরকার। এজন্য যদি বিদ্যমান আইনের সংশোধন করতে হয়, প্রয়োজনে তাও করা হবে। এ ছাড়া সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বড় ধরনের সংস্কার অভিযান চালানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব, শ্রম ও কমসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএম আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
দেশের কলকারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করতেই এই অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সালমান এফ রহমান বলেন, কমপ্লায়েন্সে দেখার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান রিপোর্ট দেয়, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের কারখানাগুলোর শ্রম পরিস্থিতি, আইনগত বিষয়সহ সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে কমিটি দ্রুত প্রতিবেদন দেবে। এর ভিত্তিতে পরবর্তী উদ্যোগ নেয়া হবে।
কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ইচ্ছায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে সিরিয়াস সমস্যা হিসেবে নিয়েছেন। অতিদ্রুত আমরা কারখানা পরিদর্শন শেষে সংস্কারের রেকমেন্ডেশনগুলো তৈরি করে ফেলবো। এরপর স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আলোকে সংস্কার কাজ শুরু হবে।
দেশের বিভিন্ন কারখানায় দুর্ঘটনার বিষয়গুলো দেখভাল করার কথা শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর বা ডাইফির। তাদের ব্যর্থতার কারণে বেশি বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে কি না? এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সিস্টেমে কী কী শর্টফল আছে আমরা এগুলো আগে অ্যাড্রেস করবো। কারণ নতুন করে কাজ করতে হলে অতীতের ভুল-ত্রুটি অবশ্যই চিহ্নিত করতে হবে।
সালমান এফ রহমান বলেন, অতীতের সমস্যাগুলো পর্যালোচনা করেই সামনের দিকে অগ্রসর হতে চাই। ডাইফির সমস্যাগুলো পরীক্ষা করা হবে। প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে নতুন আইন নিয়ে আসা হবে। সে ধরনের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে।
দেশের কোনো কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটলে কেউ দায়িত্ব নেয় না কেন? জবাবে সালমান এফ রহমান বলেন, এগুলো দেখার জন্যই তো এই কমিটি গঠন। অনেকগুলো সরকারি এজেন্সি বা সংস্থা জড়িত থাকায় পরস্পরের ওপর দায় চাপানোর সুযোগ থাকে। এফবিসিসিআই সভাপতি ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানের পরামর্শের আলোকে প্রয়োজনে সব এজেন্সিকে একত্র করে নিরাপত্তা বিষয়ক একটা সিঙ্গেল এজেন্সি করা যায় কিনা সেটাও ভাবা হচ্ছে। আর যখন একটি সংস্থা গড়ে উঠবে তখন ওই সংস্থা যেকোনো দুর্ঘটনার জবাবদিহি করবে। সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডাকে এই সংস্কার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের হাসেম ফুডসের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাব ফেলেছে। বিষয়টি নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস একটি সম্পাদকীয় ছেপেছে।
সালমান এফ রহমান বলেন, আমরা এখন নির্দিষ্ট সময় ধরে এগুবো। ফায়ার, স্ট্রাকচার ও এনভায়রনমেন্ট হলো আমাদের মূল আলোচ্য বিষয়। এর বাইরে শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়গুলোও আমরা দেখবো।
বিডা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, আগামী ১৯শে জুলাই সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসবো। সেখানে এসওপি বা কর্মপন্থা ঠিক করা হবে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনায় এগিয়ে যাবো। প্রয়োজনে ডিজিটাল প্লাটফর্ম তৈরি করে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হবে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ তৈরিতে গঠিত হয় বিদেশি ক্রেতাদের দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স। পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় রিমেডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল (আরসিসি) গঠন করে সরকার। এরপর বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে ব্যাপকভিত্তিক সংস্কার কাজ শুরু হয়। ফলে সামপ্রতিক সময়ে বিশ্বে কারখানার নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশের সুনাম বেড়েছে। সে প্রসঙ্গ ধরে শ্রম সচিব কেএম আব্দুস সালাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পোশাক শিল্পের দিকে নজর দিতে গিয়ে এর বাইরের কলকারখানার দিকে নজর দেয়া যায়নি। নারায়ণগঞ্জের এই দুর্ঘটনা নিরাপত্তার বিষয়ে সবাইকে নাড়া দিয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, নারায়ণগঞ্জে হাসেম ফুডস ফ্যাক্টরিতে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানি দুর্ভাগ্যজনক। এটি আমাদের দেশীয় ভাবমূর্তির বিশাল ক্ষতি করেছে। আমাদের ব্যবসা যেভাবে বেড়েছে, অর্থনীতি যেভাবে বড় হয়েছে, সেই তুলনায় সরকারি তদারক সংস্থার সক্ষমতা বাড়েনি। এখন এই দিকে নজর দিতে হবে। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে জসিম বলেন, তাদের অভিজ্ঞতা ও জনবলকে দেশীয় বাজারভিত্তিক শিল্পের সংস্কার উদ্যোগে কাজে লাগানো যেতে পারে। বেসরকারি আরও পরিদর্শন প্রতিষ্ঠানকেও কাজে লাগানো যেতে পারে।
এর আগে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক প্রজ্ঞাপনে উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটি গঠনের কথা জানানোর পাশাপাশি অবিলম্বে সব শিল্প কলকারখানা সরজমিনে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করতে বলা হয়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নেতৃত্বে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে অবিলম্বে সকল শিল্প কলকারখানা সরজমিনে পরিদর্শনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ২৪ সদস্যের এই কমিটিতে সদস্য সচিব করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবকে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কল-কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহে অগ্নি-দুর্ঘটনা এবং অন্যান্য দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নেতৃত্বে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে অবিলম্বে সকল শিল্প-কারখানা সরজমিন পরিদর্শনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং এসব পরিদর্শনের আলোকে শিল্প-কারখানাসমূহের অবকাঠামোগত, অগ্নি ও অন্যান্য দুর্ঘটনা নিরোধের বিদ্যমান অবস্থা পর্যালোচনা এবং করণীয় নির্ধারণে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নের জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করবে।
প্রজ্ঞাপনে কল-কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণে গঠিত কমিটির কার্যপরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে, কল-কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনারোধ এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষও কমিটি কর্তৃক সরজমিন পরিদর্শনে প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশমালা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
এই কমিটি কল-কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনানুগ কর্তৃপক্ষসমূহের কার্যক্রমপরিবীক্ষণ; কল-কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অবকাঠামোর বিষয়ে প্রায়োগিক আইন, বিধি, নীতিমালা, গাইডলাইন ও নির্দেশনাসমূহ পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
কমিটি সংশ্লিষ্ট আইন, বিধি, নীতিমালা, গাইডলাইন ও নির্দেশনাসমূহ পালনের বিষয়টি পরিবীক্ষণ; কল-কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহে অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনা সম্পর্কে কর্মী ও ব্যবস্থাপনার সহিত সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এই কমিটি প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাব-কমিটি গঠন করতে পারবে এবং এই সকল সাব-কমিটির পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশমালার আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এই কমিটিতে প্রয়োজনে যেকোনো (সংখ্যক) সরকারি- বেসরকারি ব্যক্তিকে সদস্য হিসেবে কো-অপ্ট করা যাবে এবং কমিটি সরকারের বিবেচনার জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা প্রণয়ন করবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট সংসদীয় এলাকার সংসদ সদস্য, সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার মেয়র, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান,  অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন), গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, এফবিসিসিআই’র সভাপতি এবং বিজিএমইএ’র সভাপতিকে এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে। সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status