এক্সক্লুসিভ
মায়ের মৃত্যু নিয়ে সিলেটে ব্যবসায়ীর ‘তিক্ত’ অভিজ্ঞতা
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৪ জুলাই ২০২১, বুধবার, ৭:৫২ অপরাহ্ন
মায়ের মৃত্যুর ‘তিক্ত’ অভিজ্ঞতা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ব্যবসায়ী নুরুল আমীন সিদ্দিকীকে। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা। নানা তদবির, অনুনয় করেও তিনি তার মায়ের জন্য আইসিইউ বেড পাননি। বললেন- ‘আইসিইউ সাপোর্ট পেলে হয়তো মাকে বাঁচানো সম্ভব হতো। কিন্তু কোথাও পেলেন না একটি আইসিইউ বেড।’ সিলেট নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নুরুল আমীন সিদ্দিকী। তিনি নগরীর আল হামরা মার্কেটের জুয়েলারি ব্যবসায়ী। নগরীর হাতিমবাগ বি-১০২ নম্বর বাসার বাসিন্দা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তার মায়ের মৃত্যুর করুণ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন তিনি। পরিবারের বড় ছেলে নুরুল আমীন। প্রায় ১৫ দিন আগে তার বৃদ্ধা মা মেহেরুন্নেছা চৌধুরীর (বয়স ৮৫) শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। দেরি না করে নুরুল আমীন তার মাকে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ভর্তির দু’দিন পর মাকে নিয়ে যান বাসায়। তবে বাসায় যাওয়ার আগে তারা করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে যান। বাসায় যাওয়ার একদিন পর তার মায়ের করোনার পজেটিভ রিপোর্ট আসে। এরপর তাকে নিয়ে আসেন সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে। নুরুল আমীন সিদ্দিকী জানিয়েছেন, গত ৪ঠা জুলাই করোনা চিকিৎসার জন্য শামসুদ্দিনে এনে ভর্তি করার পর চিকিৎসকরা ভালোই চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। চিকিৎসার সময়ই চিকিৎসকরা তার মায়ের জন্য আইসিইউ সাপোর্টের কথা বলেন। অক্সিজেন লেভেল কমে যাওয়ার কারণে আইসিইউ প্রয়োজন। বিষয়টি জানার পর তারা ডাক্তারদের কাছে একটি আইসিইউ বেড দেয়ার অনুনয় করেন। কিন্তু শামসুদ্দিনে আইসিইউ বেড সংকট। সিরিয়ালে রোগী থাকার কারণে কোনোভাবেই আইসিইউ বেড ম্যানেজ করা যাচ্ছিল না। এই অবস্থায় নুরুল আমীন সিদ্দিকী সাহায্য চান সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনের কাছে। বিষয়টি নিয়ে জাকির হোসেন কথা বলেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। কিন্তু বেড খালি না থাকার কারণে আইসিইউতে জায়গা মেলেনি। একদিকে মায়ের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছিল, অন্যদিকে আইসিইউ সংকট- এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন নুরুল আমীন। এরই মধ্যে শামসুদ্দিন হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি হলেও অন্য রোগী সিরিয়ালে থাকায় আইসিইউ পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় আবারো ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। কিন্তু আইসিইউ বেড জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়ের নির্দেশে মাকে নিয়ে শামসুদ্দিন থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান নুরুল আমীন। জানান, তার মাকে ওসমানী হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডের চিকিৎসাসেবা দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন তারা। কারণ শামসুদ্দিনে আইসিইউ বেড না পেলে তার মাকে সব সময় দেয়া হতো ২০ লিটার অক্সিজেন সাপোর্ট। অক্সিজেনের কোনো সংকট হয়নি। কিন্তু ওসমানীতে নিয়ে আসার পর ১৫ লিটার অক্সিজেন দেয়া হয়। এতে করে তার মায়ের অবস্থাও শোচনীয় হয়ে পড়ে। খোঁজ নিয়েও ওসমানীতে আইসিইউ বেড খালি মেলেনি। রোগী ভর্তি থাকার কারণে মেলেনি আইসিইউ বেড। নুরুল আমীন সিদ্দিকী জানান, ৭ই জুলাই সকালে মারা যান তার মা। কিন্তু মারা যাওয়ার আগের রাতে ওসমানীতে হঠাৎ করে ওয়ার্ড বয় তার মায়ের মুখ থেকে অক্সিজেন সাপোর্ট খুলে অন্য রোগীর কাছে নিয়ে যায়। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তারা। তাৎক্ষণিক তারা বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের অবগত করলে পরে এনে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হয়। নুরুল আমীন জানান, ‘আইসিইউ না পাওয়ার কারণে তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। একটি আইসিইউ বেডের জন্য তারা অনেক ধর্ণা, অনেক অপেক্ষা করেছেন; কিন্তু কোথাও মেলেনি একটি আইসিইউ বেড।’ তিনি অভিযোগ করেন, ওসমানী মেডিকেল থেকে শামসুদ্দিন হাসপাতালে করোনা রোগীদের ভালো চিকিৎসা দেয়া হয়। শামসুদ্দিনে রোগীদের যে যত্ন নেয়া হয় ওসমানী হাসপাতালে এখনো করোনা চিকিৎসার সেই সেবা গড়ে ওঠেনি। এদিকে গত শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপিত করেছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনও। এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান তিনি। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন, ‘যে মহিলার মৃত্যু হয়েছে তার চিকিৎসার কোনো গাফিলতি ছিল না। একে তো ছিল বয়স, অন্যদিকে অক্সিজেন লেভেল চলে এসেছিল ৪০’র নিচে। এছাড়া লাঞ্জে ইনফেকশনের মাত্রা ছিল ৮০ শতাংশের উপরে। শুধু এই রোগিণীই নয়, এ ধরনের অনেক রোগীকে হাসপাতালে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়ে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। আইসিইউ সংকটের এই সময়ে এ ধরনের রোগীকে আগেভাগে হাসপাতালে নিয়ে এলে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া সহজ হয় বলে জানান তিনি।’