দেশ বিদেশ

২২ ভাগ পোশাক কারখানা এখনো পরিদর্শনের বাইরে: সিপিডি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১২ জুলাই ২০২১, সোমবার, ৯:১৫ অপরাহ্ন

 বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিবি) মনে করে, বাংলাদেশের পোশাক খাতের কারখানাগুলোর মধ্যে এখনো প্রায় ২২ শতাংশ পরিদর্শনের বাইরে রয়ে গেছে। একই সঙ্গে মাঝারি মানের কারখানাগুলোতে বেশি দুর্ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। এসব কারখানা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
গতকাল রোববার সিপিডি আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন কালে এসব কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম। ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেফটি অব দ্য আরএমজি সেক্টর ডিউরিং দ্য পোস্ট-অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স পিরিয়ড’ শীর্ষক ওই সংলাপের আয়োজন করে সিপিডি ও এফইএস।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং সিপিডির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর সভাপতিত্বে এ সময় তৈরি পোশাক শিল্পের মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি ছাড়াও উন্নয়ন সহযোগী ও আইএলও’র প্রতিনিধিরা শ্রম খাতে শ্রমিকের নিরাপত্তার বর্তমান অবস্থা এবং এ থেকে উত্তরণে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে তৈরি পোশাক খাতের বাইরে অন্যান্য খাতের শ্রমিকের নিরাপত্তা ও দায়িত্ববোধের অবহেলা রয়েছে। নিরাপত্তা ও দায়িত্ববোধের অবহেলার প্রমাণ হলো নারায়ণগঞ্জে সেজান গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ডে বড় হতাহতের ঘটনা। তারা জানান, কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতের পরও পোশাক কারখানাগুলোতেও দুর্ঘটনা থামছে না। মাঝারি মানের গার্মেন্টে বিপদ ঘটছে সবচেয়ে বেশি। গবেষকরা বলেন, স্থানীয় সব শিল্পে একই কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা গেলে সেজান ফ্যাক্টরির মতো দুর্ঘটনা ঘটতো না। এ অবস্থায় সেফটি কমিটির তদারকি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সিপিডি।
বক্তব্যে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, পোশাক খাতে নিরাপত্তার বিষয়ে ক্রেতাদের চাপ থাকে। সেজন্য এখানে নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক চাপ না থাকলে কমপ্লায়েন্স এবং নিরাপত্তায় উন্নতি করব না, তা তো হতে পারে না। এ ধরনের নিরাপত্তা যারা নিশ্চিত করবেন, তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সিপিডির চেয়ারম্যান প্রফেসর রেহমান সোবহান বলেন, রানা প্লাজার ঘটনা নিরাপত্তা রক্ষার যে শিক্ষা দিয়েছে, পোশাকের বাইরে অন্যান্য খাত সেই শিক্ষা নিয়েছে কি? উত্তর হলো, না। পোশাকের বাইরে রপ্তানিমুখী অন্যান্য শিল্প এবং স্থানীয় শিল্পের নিরাপত্তায় এখনো নজর দেয়ার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
বাংলাদেশ নিটওয়ার ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টারস এসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সেজান কারখানার ঘটনা দেখিয়েছে, আমরা এতদিন পোশাক খাত নিয়েই ভেবেছি, অন্য খাত নিয়ে নয়। এই ঘটনার পর সময় এসেছে পোশাক খাতের বাইরে স্থানীয় অন্যান্য শিল্পের নিরাপত্তার আওতায় আনা। স্থানীয় শিল্পগুলোর ৯০ শতাংশই সেফটির বিষয়ে কনসার্ন নয়।
এ সময় শ্রমিক প্রতিনিধিরা পোশাক খাতসহ অন্যান্য খাতে শ্রম নিরাপত্তায় বিভিন্ন পক্ষের দুর্বলতার চিত্র তুলে ধরেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সিপিডির গবেষণ পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রায় চার হাজার পোশাক কারখানার মধ্যে এখনো প্রায় ২২.৫% কারখানা কোনো ধরনের ইন্সপেকশনের বাইরে রয়ে গেছে। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর পোশাক খাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কার্যক্রমের কারণে এ খাতের শ্রম নিরাপত্তায় উন্নতি হয়েছিল। তবে একই সময়ে সরকার গঠিত ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভ ও রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেলের (আরসিসি) কার্যক্রমে প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি। এছাড়া অ্যাকর্ডের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর গঠিত আরএমজি সাসটেইনেবল কাউন্সিলের (আরএসসি) কিছু দুর্বলতাও তিনি তুলে ধরেন।

প্রতিবেদনে তিনি ২০১৮ সালের পূর্ববর্তী তিন বছর ও ২০১৮ সালের পরবর্তী সময়ে পোশাক খাতের দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরে বলেন, পোশাক খাতে দুর্ঘটনা আবার বিস্তৃত হচ্ছে। দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষত আগে অগ্নি দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি হলেও সামপ্রতি দুর্ঘটনায় বৈদ্যুতিক ও কারখানা ভবনের অবকাঠামোগত বিষয়ও যুক্ত হচ্ছে। দুর্ঘটনা কমানোর ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কতটুকু দায়িত্ব পালন করছে, সে প্রশ্ন তুলে, পুরো কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সমন্বয় জোরদার করা এবং এক্ষেত্রে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিপার্টমেন্ট অব ইন্সপেকশন ফর ফ্যাক্টরিজ অ্যান্ড এস্টাবলিশমেন্টকে (ডিআইএফই) মূল দায়িত্ব দেয়ার কথা বলা হয়।
সিপিডির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের উদ্যোগের ফলে পোশাক খাতের অগ্রগতিতে অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু সমপ্রতি বেশকিছু শিল্প দুর্ঘটনা দেখা দেয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের মাধ্যমে অর্জিত অগ্রগতি ধরে রাখতে পারছি কিনা।
ডিআইএফ ইন্সপেক্টর জেনারেল মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ৯০ লাখ নিবন্ধিত কারখানা, দোকান ও প্রতিষ্ঠানের বাইরে আরও সাড়ে চার লাখ প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের বাইরে রয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে ইন্সপেকশনের ক্ষেত্রে তাদের জনবলের ঘাটতির বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।
এ সময় বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তার, বাবুল আক্তারসহ অন্যরা বক্তৃতা করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status