শিক্ষাঙ্গন

সন্ধান মিলছে না উত্তর পত্রের!

নোবিপ্রবি প্রতিনিধি

১১ জুলাই ২০২১, রবিবার, ৭:৫০ অপরাহ্ন

ফলাফল আটকে থাকা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষার খাতার সন্ধান মিলছে না। পরীক্ষা শুরুর ১৬ মাসেও রেজাল্ট প্রকাশ করতে পারে নি বিভাগটি। অভিযোগ আছে, আইন লঙ্ঘন করে ফলাফল প্রকাশের নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রম করে অতিরিক্ত সময় নিচ্ছে এই বিভাগ। পরীক্ষার নোটিশ অনুযায়ী, ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী শুরু হয়ে ১১ মার্চ পর্যন্ত ৬ কোর্সের এই পরীক্ষার ৩টি কোর্স সম্পন্ন হয়। কোভিড ১৯ পরিস্থিতিতে স্থগিত হয়ে গেলে ১ বছর বিরতি দিয়ে অবশিষ্ট ৩ কোর্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় চলতি বছর ৭ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। আইন অনুযায়ী ৪০ দিনে ফল প্রকাশের কথা থাকলেও অতিরিক্ত চার মাসের অধিক সময়ক্ষেপণ হলেও ফলাফল এখনো অপ্রকাশিত। উক্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ার পিছনে কারণ খুঁজতে গেলে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। দেশে করোনা সংক্রমণের আগে তথা ২০২০ সালের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত হওয়া তিন কোর্স এমবিপিজি ১১০৯, এমবিপিজি ১১১৭ ও এমবিপিজি ১১১৯ পরীক্ষার উত্তরপত্রের সন্ধ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মতে বিভাগ খাতা নিয়ে গিয়েছে, অস্বীকার করে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান জানিয়েছে ওই পরীক্ষার এই খাতা গুলো বিভাগ পর্যন্ত আসে নি। এই কোর্স সমূহের পরীক্ষকদের অভিযোগ, এই তিনটি কোর্সের উত্তরপত্র তথা পরীক্ষার খাতা দিতে পারে নি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর। দেশে মহামারীর কারণে পরীক্ষার পরপর খাতা সংগ্রহ করা হয়নি তাদের। পরবর্তীতে ২০২০ এর আগষ্ট মাসের দিকে লকডাউন উঠে গেলে পরীক্ষকদের পক্ষ থেকে একাধিকবার এই দপ্তরে যোগাযোগ করলে তারা পরীক্ষার খাতা সমূহ দিতে পারে নি। বারবার যোগাযোগ করলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর জানায়, খাতা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ওই তিন কোর্সের পরীক্ষকরা তাদের নির্ধারিত কোর্স পরীক্ষার উত্তরপত্র সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়। নিয়ম অনুযায়ী বিষয়টি জানিয়ে পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরকে তারা মেইল প্রেরণ করে। মেইল পাঠানোর দশ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তারা মেইলের রিপ্লাই পান নি এবং বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী কোন ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারেও জানানো হয়নি তাদের। এ বিষয়ে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রভাষক ও এমবিপিজি ১১১৯ কোর্সের পরীক্ষক মাহীন রেজা বলেন, অন্য একজন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে গেলে তারা উত্তরপত্র দিতে পারে নি। বিষয়টি জানতে পেরে আমি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর ও সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যানকে মেইল প্রেরণ করেছি। এখন পর্যন্ত প্রেরিত মেইলের কোন রিপ্লাই পাওয়া যায় নি বলে জানিয়েছেন এই শিক্ষক। এ বিষয়ে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রভাষক ও এমবিপিজি ১১০৯ কোর্সের পরীক্ষক সাদিকুর রহমান শুভ বলেন, দেশে করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পূর্বে আমার কোর্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মহামারী পরিস্থিতির কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়াতে তখন উত্তরপত্র সংগ্রহ করা হয়নি। প্রথম লকডাউন উঠে যাওয়ার পর খাতা সংগ্রহ করতে গেলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর জানিয়েছে, উত্তরপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। পরবর্তীতে বিষয়টি জানিয়ে আমাদের পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে মেইল করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই মেইলের কোন উত্তর আসে নাই। এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা আমার জানা নাই। এদিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানিয়েছে, পরীক্ষার হল থেকেই পরীক্ষকদের উত্তরপত্র দেওয়া হয়েছে। খাতা দেখা শেষে ফলাফল রেডি করে তারা আমাদের কাছে একটি কপি পাঠাবেন এবং উত্তরপত্র পাঠিয়ে দিবেন। বিষয়টি অস্বীকার করে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও উক্ত পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. ফিরোজ আহমেদ বলেছেন, আমার এই কোর্স সমূহের শিক্ষকরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে উত্তরপত্র পায় নি। পরবর্তীতে আমি বলার পর তারা মেইল করে বিষয়টি জানিয়েছে। আপাতত লকডাউনের জন্য কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। লকডাউন উঠে গেলে এটি নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি জানালে বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম বলেন, আমার শিক্ষার্থীদের দ্রুত বের করা দরকার। আমরা দ্রুত সমস্যাটির সমাধান বের করে শিক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশের চেষ্টা করব। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সচিব অধ্যাপক ড. ফেরদৌস জামান বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী হল থেকে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি যেকোনভাবে উত্তরপত্র সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষরিত পেপার সহ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে প্রেরণ করবেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে খাতা সংগ্রহ করবেন পরীক্ষকরা। পরীক্ষার খাতা সংক্রান্ত দায়িত্ব থাকে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উপর। এ নিয়ে কোন বিতর্ক সৃষ্টি হলে তা সভাপতির উপরেই বর্তাবে। বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের অবসানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান। তিনি আরো বলেন, কমিটি সঠিক ভাবে তদন্ত করলেই আসল সত্য উদঘাটিত হয়ে যাবে।
 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status