সেরা চিঠি
তোমার মতো করে কেউ আদর করে না
ইমরান
১১ জুলাই ২০২১, রবিবার, ৮:৩৪ অপরাহ্ন
আব্বা,
জানো, লাল কাগজের চারকোণা প্যাকেটটার জন্য আজও অপেক্ষায় আছি। আজও গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায় তোমার ডাকে। জেগে দেখি সবই আমার স্বপ্ন। মনে পড়ে শহরে গেলে তুমি লাল কাগজের চারকোণা প্যাকেট নিয়ে আসতে আমার জন্য। আর এ প্যাকেটের ভেতরে থাকা রসালো চমচম এমনভাবে খেতাম তুমি চেয়ে থাকতে। তোমার চোখে মুখে দেখতাম প্রশান্তির ছাপ। জানো আব্বা, বেশ ক’বছর মনে অতৃপ্তি নিয়ে দিন কাটছে আমার। আমি তো আব্বা ডাকতে পারি না। তবে, সবসময় তোমাকে দেখি আমার হৃদয়ের চোখ দিয়ে।
এই তো সেদিন গভীর রাতে ঘুমে মগ্ন। হঠাৎ তোমার গলার আওয়াজ। ‘ব্যাটা ওঠ, দরজা খুল’। হুড়মুড়িয়ে দরজা খুললাম। দেখি বাইরে অন্ধকার। বুঝতে পারলাম ঘুমের মাঝে আমাকে আদর করতে এসেছিলে। মনে পড়ে গেল তোমার রসালো চমচমের কথা। একদিনের কথা মনে আছে তোমার? আমার হাতে প্যাকেটটি দেয়ার পর পর তিনটা খেয়ে ফেললাম। অমনি পাশের রুম থেকে মা চিৎকার করে উঠলেন। মাঝরাতে কিসের খাওয়া? তুমি কি করলে? আমাকে ফিসফিস করে বললে, আরেকটা খা।
আমি তখন ক্লাস নাইনে। একদিন হুট করে স্কুলে হাজির তুমি। ক্লাসে ঢুকলে। স্যার বললেন, আরে, কি করছেন ভাই? তুমি সোজা আমার মাথায় চুমু দিয়ে বললে, স্যার আমার ছেলেটারে আদর করে গেলাম। পাঁচটা না, দশটা না, একটামাত্র ছেলে। আমি কী যে লজ্জায় পড়েছিলাম সেদিন! ক্লাসমেটরা হাসছিল। আজ বুঝি আব্বা। তোমার মতো করে কেউ আমাকে আদর করে না। ক্লাস টেনে ওঠার পরও গ্রামে হাটের দিন এলে আমার হাত ধরে ঘুরতে। লোকজন বলতো- দেখো, এত বড় ছেলের হাত ধরে ঘুরছে কেমন। আব্বা তুমি জানতে, আমি খুব লাজুক। তবু আমার হাত না ছেড়ে তাদেরকে বলতে- এমন করেন কেন? এরপর তোমার মুখে সে লাইনটা আসতো- পাঁচটা না, দশটা না, একটামাত্র ছেলে আমার।
আচ্ছা আব্বা, তোমার কি মনে আছে, মাঝে মাঝেই তুমি আমার ঘরে এসে শুতে? জোর করে কাছে ডেকে নিয়ে বলতে- ঘুমাও বাপ। পিঠ চুলকিয়ে দেই। তোমার হাতের পরশে কখন যে ঘুমিয়ে যেতাম টেরই পেতাম না।
এখন এই শহরে রোজ মাঝ রাত পেরিয়ে যায়। ঘুম ধরে না। আব্বা, তোমার মোবাইল নম্বরটা এখনো আছে। কিন্তু কল তো যায় না। বারবার ‘দুঃখিত’ বলে। সত্যিই আব্বা। জানো আমিও দুঃখ নিয়েই দিন পার করি। শয়নে, স্বপনে, কল্পনায় তোমায় দেখি। তোমার ছবি আঁকি। মাঝে মাঝে মনে হয়, মাঝরাতে দরজায় কড়া নাড়ছো, ডাকছো- ব্যাটা ওঠ, দরজা খুল। আমিও দরজা খুললাম, যেন আমার হাতে মিষ্টির প্যাকেট ধরিয়ে দিচ্ছো তুমি...।
ইতি
তোমারই ছেলে
জানো, লাল কাগজের চারকোণা প্যাকেটটার জন্য আজও অপেক্ষায় আছি। আজও গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায় তোমার ডাকে। জেগে দেখি সবই আমার স্বপ্ন। মনে পড়ে শহরে গেলে তুমি লাল কাগজের চারকোণা প্যাকেট নিয়ে আসতে আমার জন্য। আর এ প্যাকেটের ভেতরে থাকা রসালো চমচম এমনভাবে খেতাম তুমি চেয়ে থাকতে। তোমার চোখে মুখে দেখতাম প্রশান্তির ছাপ। জানো আব্বা, বেশ ক’বছর মনে অতৃপ্তি নিয়ে দিন কাটছে আমার। আমি তো আব্বা ডাকতে পারি না। তবে, সবসময় তোমাকে দেখি আমার হৃদয়ের চোখ দিয়ে।
এই তো সেদিন গভীর রাতে ঘুমে মগ্ন। হঠাৎ তোমার গলার আওয়াজ। ‘ব্যাটা ওঠ, দরজা খুল’। হুড়মুড়িয়ে দরজা খুললাম। দেখি বাইরে অন্ধকার। বুঝতে পারলাম ঘুমের মাঝে আমাকে আদর করতে এসেছিলে। মনে পড়ে গেল তোমার রসালো চমচমের কথা। একদিনের কথা মনে আছে তোমার? আমার হাতে প্যাকেটটি দেয়ার পর পর তিনটা খেয়ে ফেললাম। অমনি পাশের রুম থেকে মা চিৎকার করে উঠলেন। মাঝরাতে কিসের খাওয়া? তুমি কি করলে? আমাকে ফিসফিস করে বললে, আরেকটা খা।
আমি তখন ক্লাস নাইনে। একদিন হুট করে স্কুলে হাজির তুমি। ক্লাসে ঢুকলে। স্যার বললেন, আরে, কি করছেন ভাই? তুমি সোজা আমার মাথায় চুমু দিয়ে বললে, স্যার আমার ছেলেটারে আদর করে গেলাম। পাঁচটা না, দশটা না, একটামাত্র ছেলে। আমি কী যে লজ্জায় পড়েছিলাম সেদিন! ক্লাসমেটরা হাসছিল। আজ বুঝি আব্বা। তোমার মতো করে কেউ আমাকে আদর করে না। ক্লাস টেনে ওঠার পরও গ্রামে হাটের দিন এলে আমার হাত ধরে ঘুরতে। লোকজন বলতো- দেখো, এত বড় ছেলের হাত ধরে ঘুরছে কেমন। আব্বা তুমি জানতে, আমি খুব লাজুক। তবু আমার হাত না ছেড়ে তাদেরকে বলতে- এমন করেন কেন? এরপর তোমার মুখে সে লাইনটা আসতো- পাঁচটা না, দশটা না, একটামাত্র ছেলে আমার।
আচ্ছা আব্বা, তোমার কি মনে আছে, মাঝে মাঝেই তুমি আমার ঘরে এসে শুতে? জোর করে কাছে ডেকে নিয়ে বলতে- ঘুমাও বাপ। পিঠ চুলকিয়ে দেই। তোমার হাতের পরশে কখন যে ঘুমিয়ে যেতাম টেরই পেতাম না।
এখন এই শহরে রোজ মাঝ রাত পেরিয়ে যায়। ঘুম ধরে না। আব্বা, তোমার মোবাইল নম্বরটা এখনো আছে। কিন্তু কল তো যায় না। বারবার ‘দুঃখিত’ বলে। সত্যিই আব্বা। জানো আমিও দুঃখ নিয়েই দিন পার করি। শয়নে, স্বপনে, কল্পনায় তোমায় দেখি। তোমার ছবি আঁকি। মাঝে মাঝে মনে হয়, মাঝরাতে দরজায় কড়া নাড়ছো, ডাকছো- ব্যাটা ওঠ, দরজা খুল। আমিও দরজা খুললাম, যেন আমার হাতে মিষ্টির প্যাকেট ধরিয়ে দিচ্ছো তুমি...।
ইতি
তোমারই ছেলে