দেশ বিদেশ

বিশ্বের অনলাইনভিত্তিক শ্রমবাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাংলাদেশ -সিপিডি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২০২১-০৭-০৬

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সারের দেশ, যা বিশ্বের অনলাইনভিত্তিক শ্রমবাজারের মোট ১৬ শতাংশ এখন বাংলাদেশের দখলে। এ ছাড়া সম্প্রতি সৃষ্টিশীল ও মাল্টিমিডিয়া প্ল্যাটফরমে তরুণদের ঝোঁক আরও বেড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ২০০০ ওয়েবভিত্তিক উদ্যোক্তা এবং প্রায় ৫০ হাজার ফেসবুকনির্ভর উদ্যোক্তা রয়েছেন। চলমান করোনাকালেও অন্তত ১ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করেছে ই-কমার্স। আগামী এক বছরে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে প্রায় ৫ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ দেশে ডিজিটাল জনশক্তির এখনো কোনো স্বীকৃত সংজ্ঞা নেই।
সিপিডির এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল ‘ডিজিটাল প্ল্যাটফরম: ইকোনমি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই ভার্চ্যুয়াল সংলাপ যৌথভাবে আয়োজন করে সিপিডি এবং জার্মানির সমাজ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান দফ্রিডরিচ-এবার্ট-স্টিফটুং’ এর বাংলাদেশ অফিস। সংলাপে গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহকারী সৈয়দ ইউসুফ সাদাত। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, গবেষক ড. মো. আসাদুজ্জামান, বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফারহানা এ রহমান, পাঠাও লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হোসাইন এম ইলিয়াস, সেবা প্ল্যাটফরম লিমিটেডের সিইও ইলমুল হক সজীবসহ অন্যরা।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশের ডিজিটাল প্ল্যাটফরমকে এগিয়ে নিতে হলে এর সঙ্গে জড়িত জনশক্তির স্বার্থ রক্ষায় শ্রম অধিকার আইনকে যুগোপযোগী করে সংশোধন করতে হবে। যাতে গতানুগতিক জনশক্তির পাশাপাশি ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের সঙ্গে যুক্ত জনবলের শ্রম অধিকার রক্ষা হয়। দেশের অর্থনীতিতে ক্রমান্বয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য রাজস্ব নীতিতে সমন্বয় আনার কথা বলেন তিনি। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে হাজার হাজার যুবক আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে আসছে। কিন্তু এই অর্থ দেশে গ্রহণের সঠিক কোনো উপায় নেই। তাই শেষ পর্যন্ত এই অর্থ অপ্রদর্শিত টাকা হিসেবে যুক্ত হচ্ছে। মোস্তাফিজুর বলেন, আবার ডিজিটাল প্ল্যাটফরমকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় অনলাইন ক্রয়-বিক্রয়ে অনেক সময় ভোক্তাকে ঠকানো হচ্ছে। সরকার এসব নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের সমন্বিত অবকাঠামো তৈরির ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবেশী ভারত এখন প্রায় ১৪৫ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার রপ্তানি করছে। সেখানে আমাদের তো ১৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করা উচিত। কিন্তু আমরা ব্যর্থ হয়েছি।
ফারহানা এ রহমান বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সারের দেশ। এই বিপুলসংখ্যক ফ্রিল্যান্সার বিদেশ থেকে পেইপালের মাধ্যমে অর্থ নেন। কিন্তু আমাদের দেশ এখনো পেইপাল থেকে অর্থ নেয়ার অবকাঠামো উন্নয়ন করতে পারেনি। তাই ফ্রিল্যান্সারদের বিদেশ থেকে টাকা আনতে সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, করোনার এই মহামারির সময়ে সবচেয়ে উপযোগী ছিল অনলাইনভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা ও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারতো। কিন্তু আমাদের সেই অবকাঠামো এখনো গড়ে না ওঠায় এই সুযোগ আমরা নিতে পারিনি। তিনি অনলাইন ব্যবসায় ভোক্তার অধিকার রক্ষায় প্রত্যেকটা কোম্পানি ও অনলাইনে বেচাকেনায় যুক্ত সকলকে তালিকাভুক্ত করার পরামর্শ দেন। হোসাইন ইলিয়াস বলেন, বাংলাদেশে উচ্চমানের প্রোগ্রামার তৈরি করতে পারছে না। যা পারছে তাও সিস্টেম ভালো না থাকায় দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।
আব্দুল মতিন ইমন বলেন, আমাদের দেশের অর্থনীতিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের অংশগ্রহণ কত সে হিসাবটাও সঠিক পাওয়া যায় না। তাই কী করতে হবে সে বিষয়ে সঠিক কিছু বলাও মুশকিল। দেশের অর্থনীতিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের আনুপাতিক হার বাড়ানোর জন্য একটি যুগোপযোগী নীতিমালা তৈরির সুপারিশ করেন তিনি।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধাগুলো কাজে লাগাতে হলে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। মানবসম্পদের দক্ষতা বাড়ানো, আর্থিক সুবিধা এবং নীতিমালা তৈরি করে এই খাতটি থেকে আমরা লাভবান হতে পারবো। উদ্যোক্তা ও ভোক্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফরম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ফেলিক্স কোলবিৎজ বলেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফরমভিত্তিক অর্থনীতি একটি সম্ভাবনাময় খাত। প্রভাবশালী স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে এ ধরনের গবেষণা ও আলোচনা এই নতুন খাতগুলোর প্রসারের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করবে।
প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন সৈয়দ ইউসুফ সাদাত। এরমধ্যে রয়েছে- বাজারভিত্তিক দক্ষ জনবল গড়ে তোলা, কোন্‌ কোন্‌ খাতে আর্থিক সম্ভাবনা আছে তা খুঁজে বের করা এবং ৫ বছর মেয়াদি একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট পরিকল্পনা গ্রহণ। একইসঙ্গে ডিজিটাল বিপণনে ক্রেতা-বিক্রেতা সবার অধিকার রক্ষায় নীতিমালা গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ইন্টারনেট সেবা সহজলভ্য হওয়ায় ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশ ঘটছে প্রতিনিয়ত। দেশে এখন ক্রিয়েটিভ ও মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন ১৯ হাজার ৫৫২ জন। ই-ক্যাবের সদস্য আছে ১ হাজার ৩০০ জন, ওয়েবসাইটভিত্তিক উদ্যোক্তার সংখ্যা দুই হাজার।
আলোচনায় বক্তারা ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যবসার কিছু সমস্যাও তুলে ধরেন। তারা বলেন, দেশে কম্পিউটার ব্যবহার এখনো কম। মোট জনসংখ্যার ৫.৬ শতাংশের কম্পিউটার রয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে ৩৭.৬ শতাংশ। এই হার বৃদ্ধির জন্য সরকারের ইনেশিটিভির কথা বলেন তারা।
সিপিডি ডিজিটাল ব্যবসার কিছু সমস্যার দিক চিহ্নিত করে। এরমধ্যে রয়েছে মানহীন বিদ্যুৎ, ধীরগতির ইন্টারনেট, ডিজিটাল প্রযুক্তিতে দক্ষতার অভাব, ইংরেজি ভাষা না জানা, কার্ডে লেনদেন কম করা, সরকারের আইনি দুর্বলতা, এই খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের অভাব।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status