শেষের পাতা

নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট

বাহরাইন, চিলি ও মঙ্গোলিয়ায় নতুন সংক্রমণ

তানজির আহমেদ রাসেল

২৫ জুন ২০২১, শুক্রবার, ৯:৩৯ অপরাহ্ন

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় চীনের তৈরি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। পৃথিবীর যেসব দেশে চীনের তৈরি ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা 
হয়েছে। ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সঠিক হলে এমনটি হওয়ার কথা নয় বলেও মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ খবর দিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। 
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নিরাপদ ও কার্যকর হবে- এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে চীন গত বছর তার ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসি শুরু করেছিল। বর্তমানে নব্বইটিরও বেশি দেশে চীনা ভ্যাকসিন ব্যবহৃত হচ্ছে। চিলি, বাহরাইন, মঙ্গোলিয়ায় চীনের তৈরি ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। এই দেশগুলোতে ইতিমধ্যেই ৫৮ থেকে ৬০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে যা আমেরিকার চেয়েও বেশি। কিন্তু গত দুই সপ্তাহে যে সব দেশে করোনা সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধি পেয়েছে তার মধ্যে অন্যতম বাহরাইন, চিলি ও মঙ্গোলিয়া। তাই চীনা ভ্যাকসিনে কতোটা প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে? আর এটি কতোটুকু কার্যকর- তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ইউনিভার্সিটি অফ হংকংয়ের খ্যাতিমান ভাইরোলজিস্ট জিন ডোংগান বলেন, ভ্যাকসিন ভালো হলে আর এর কার্যকারিতা সঠিক হলে এমনটি হওয়ার কথা নয়।
ডাটা ওয়ার্কিং প্রকল্পের ওয়ার্ল্ড ইন ডেটার তথ্য অনুসারে চিলি, বাহরাইন এবং মঙ্গোলিয়ায় জনসংখ্যার ৫০ থেকে ৬৮ শতাংশ মানুষকে পুরোপুরি ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনা হয়েছে, যা আমেরিকাকে ছাড়িয়ে গেছে। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে চিলি, বাহরাইন এবং মঙ্গোলিয়ার নাম রয়েছে যাদের বেশির ভাগই? চীনের সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক বায়োটেকের তৈরি ভ্যাকসিন ব্যবহার করেছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, বেশ কয়েকটি দেশের উদাহরণ থেকে জানা যায় যে, করোনাভাইরাসের বিস্তার বিশেষ করে এই ভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট প্রতিরোধে চীনা ভ্যাকসিনগুলো খুব একটা কার্যকর হতে পারে না। এই দেশগুলোর অভিজ্ঞতা করোনা পরবর্তী বিশ্বে একটি কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। তুলনামূলকভাবে উচ্চ ভ্যাক্সিনেশন হারের কিছু দেশ কেন নতুন করে সংক্রমণ হচ্ছে তা বিজ্ঞানীরা নির্দিষ্ট করে জানেন না। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৫ শতাংশ জনগণকে সম্পূর্ণরূপে ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনা হয়েছে যাদের বেশির ভাগকেই ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্নার ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। ফলে গত ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণের হার ৯৪ শতাংশ কমেছে। ইসরাইল ফাইজারের ভ্যাকসিন ব্যবহার করার পর প্রতিদিন নিশ্চিত কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি মিলিয়নে এখন ৪.৯৯ এর কাছাকাছি। আর অন্যান্য দেশ যারা বেশির ভাগ চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিনের উপর নির্ভর করেছিল এই সংখ্যাটি সেখানে প্রতি মিলিয়নে ৭১৬ থেকেও বেশি।
বাহরাইন, চিলি ও মঙ্গোলিয়া চীনা ভ্যাকসিনের উপর ভরসা করে তাদের জনগণকে করোনা মোকাবিলায় আশ্বস্ত করেছিল। কিন্তু সামপ্রতিক সংক্রমণ তাদের সেই ভরসায় চিড় ধরিয়েছে। তারপরও মঙ্গোলিয়া সিনোফার্মের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা বলেছে যে, এটি রোগ প্রতিরোধে কার্যকর। মঙ্গোলিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা গ্রুপের প্রধান গবেষক বাতবায়ার ওচিরবাত বলেছেন, মঙ্গোলিয়ার চীনা ভ্যাকসিন নেয়ার সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল। কারণ এটি দেশে মৃত্যুর হার কম রাখতে সাহায্য করেছে। মঙ্গোলিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী সিনোফার্ম ভ্যাকসিন অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং স্পুতনিক ভ্যাকসিনের চেয়ে বেশি প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ছিল। অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটির কলেজ অফ মেডিসিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথের অধ্যাপক নিকোলাই পেট্রোভস্কি বলেছেন, সমস্ত প্রমাণ বিশ্লেষণ করে এটা ধরে নেয়া যুক্তিসঙ্গত হবে যে, সিনোফার্মের ভ্যাকসিন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ন্যূনতম প্রভাব ফেলেছিল। তবে তিনি বলেন, চীনা ভ্যাকসিনের একটি বড় ঝুঁকি হলো ভ্যাকসিন নেয়া লোকদের মধ্যে খুব কম বা কোনো লক্ষণই থাকবে না কিন্তু তারা অন্যের মধ্যে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিতে পারে।
ইন্দোনেশিয়ান মেডিকেল এসোসিয়েশনের রিস্ক মিটিগেশন টিমের মতে, ইন্দোনেশিয়ায় যেখানে করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানে সমপ্রতি ৩৫০ জনেরও বেশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা সিনোভ্যাকের
টিকা গ্রহণ করেছিলেন। দেশজুড়ে ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ই জুনের মধ্যে ৬১ জন চিকিৎসক মারা গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ১০ জন চীনা তৈরি ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। সিঙ্গাপুরের চিকিৎসাসেবার পরিচালক কিনেথ মেক বলেন, সিনোভ্যাকের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন করার জন্য এই সংখ্যাগুলোই যথেষ্ট। এটি ফাইজারের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো সমস্যা নয়। এটি আসলে সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের সঙ্গে জড়িত একটি সমস্যা।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ডেটা প্রকাশের আগেই বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সিনোফার্মকে অনুমোদন দিয়েছিল। তারপর থেকে দু’দেশেই ভ্যাকসিন নেয়া লোকেরা অসুস্থ হওয়ার ব্যাপক খবর পাওয়া গেছে। এক বিবৃতিতে বাহরাইন সরকারের মিডিয়া অফিস বলেছে যে, তাদের ভ্যাকসিন রোলআউট আজ পর্যন্ত কার্যকর এবং সফল ছিল। মঙ্গোলিয়ায় ৫২ শতাংশ মানুষ এ পর্যন্ত চীনের ভ্যাকসিন নিয়েছে, অথচ গত রোববার একদিনেই সে দেশে আক্রান্ত হয়েছে ২৪শ’ মানুষ। যদিও চীন এই ধরনের ঘটনার দায় অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি এর সঙ্গে চীনা ভ্যাকসিনের কোনো সম্পর্ক নেই। চীন বলেছে, এমন অনেক দেশ আছে যারা চীনা ভ্যাকসিন নিয়ে সুরক্ষিত আছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status