দেশ বিদেশ

এমপি পরিচয়ে অভিনব প্রতারণা

‘আপনারা ওনার কাজটা করে দিলে খুশি হবো’

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ থেকে

২৫ জুন ২০২১, শুক্রবার, ৯:৩০ অপরাহ্ন

জহির উদ্দিন বাবুল (৫৫)। কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার হালিমপুর গ্রামের প্রয়াত ডা. মাহতাব উদ্দিন আহাম্মদের ছেলে। তিনি ফোনে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াত রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের ছেলে সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের এমপি তানভীর ইমাম পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন। বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের ফোন করে তিনি নানা তদবির করতেন। আর তাতে প্রশাসনের বড় বড় কর্মকর্তারাও বিভ্রান্তির শিকার হয়েছেন। রাজধানীর ফকিরেরপুল এলাকার হোটেল ‘শেল্টার’-এ তিন বছর ধরে অবস্থান করে এভাবেই প্রতারণা করে আসছিলেন এই কথিত এমপি। সবশেষ ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে একটি তদবির আসে তার। এরপরই গত ২৩শে জুন সকালে ঢাকার ফকিরেরপুল থেকে তাকে আটক করে মংমনসিংহ গোয়েন্দা বিভাগ। তার দেয়া তথ্যমতে, তার সহযোগী ময়মনসিংহ নগরীর সেনবাড়ি এলাকার গুলশান আরা খানমকেও (৪৫) আটক করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ। পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, জহির উদ্দিন বাবুল বিভিন্ন দপ্তরে ফোন করে বলতেন গুলশান আরা খানম আমার বোন। আপনারা ওনার কাজটা করে দিলে খুব খুশি হবো। প্লিজ, অলমাইটি আল্লাহ।’ তিনি জানান, এই প্রতারণার মাঠপর্যায়ে কাজ করতেন শুলশান আরা খানম। তিনি নারীদের ফাঁদে ফেলে তাদের আত্মীয়স্বজন ও ছেলে-মেয়েদের চাকরি দেয়ার কথা বলে ‘ভুয়া এমপি’ জহির উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিতেন। এতে সাধারণ মানুষ চাকরির আশায় শুলশান আরা খানমকে টাকার অঙ্ক ছাড়াই চেক প্রদান করতেন। পরে গুলশান আরা চেক-এ ইচ্ছেমতো টাকার অঙ্ক বসিয়ে উত্তোলনের জন্য সরকারি বিভিন্ন অফিসে অভিযোগ করতেন। আর জহির উদ্দিন বাবুল এমপি পরিচয়ে ফোন দিয়ে সেসব অভিযোগ গুলশান আরার পক্ষে নিষ্পত্তি করতে তদবির করতেন। চক্রটি সম্প্রতি ৬ জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে সাড়ে ৯ লাখ টাকা। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ৮টি চেকে বসানো হয়েছে ৪৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকার অঙ্ক। প্রতারণার শিকার আফরোজা আক্তার ডালিয়া নামে এক নারী বলেন, গুলশান আরা খানমের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। তার বাসায় যাতায়াত ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমার ভাসুরের ছেলে ও মেয়েকে সেনাবাহিনীর সিভিলে চাকরি দেয়ার কথা বলেছিল সে। বলেছিল তানভীর ইমাম এমপি তার খালাতো ভাই। আমরা তাকে বিশ্বাস করি এবং ১৭ লাখ টাকার চুক্তি করি। ৬ লাখ টাকা নগদ দেই। একইসঙ্গে ৫টি চেক নেয় সে। কিন্তু চাকরি ও টাকা ফেরত না দিয়ে ব্ল্যাংক চেকে ২০ লাখ টাকা বসিয়ে সে আমাদের উকিল নোটিশ পাঠায়। আমাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করে। আমরা এই প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, প্রতারক বাবুল আমাদের কাছে এমপি পরিচয়ে ফোন দিয়ে তদবির করেন। এতে আমাদের সন্দেহ হয়। পরে অনুসন্ধানে জানতে পারি, এমপি পরিচয় দানকারী আসলে ভুয়া ব্যক্তি। এরপর তাকে ঢাকা থেকে আটক করা হয়। তিনি বলেন, এই প্রতারক চক্রটি মূলত নারীদের টার্গেট করে। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে চেক নেয়। পরে সেটি তাদের পাওনা টাকা বলে দাবি করে এবং না দিলে পুলিশের সহযোগিতা চায়।


 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status