এক্সক্লুসিভ

জালনোট তৈরিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থী

মরিয়ম চম্পা

২৫ জুন ২০২১, শুক্রবার, ৭:২২ অপরাহ্ন

নাইমুল হাসান তৌফিক। বয়স ২০ বছর। রাজধানীর বসুন্ধরায় অবস্থিত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ। এইচএসসি পাস করে ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও করোনার কারণে পড়ালেখা বন্ধ রয়েছে। এইচএসসিতে ভর্তি হওয়ার পর এক বন্ধুর মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি সংঘবদ্ধ মুদ্রা জালকারি চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে তৌফিক। তারা ফেসবুকের মাধ্যমে জালনোট বেচাকেনার পাশাপাশি হোম ডেলিভারিও দিয়ে থাকে। বর্তমানে সে এই চক্রের একজন অন্যতম সদস্য। সম্প্রতি র‌্যাব’র হাতে আটক হওয়া এই শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদে এমনই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ইমো, অনলাইনসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তৌফিক প্রথমে জাল টাকার অর্ডার নিয়ে থাকেন। পরবর্তীতে জাল টাকার গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী যে পরিমাণ অর্ডার আসে ঠিক সমপরিমাণ জালনোট প্রস্তুত করে তাদের নির্ধারিত ডেলিভারিম্যানদের দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করে। প্রতি এক লাখ টাকা জালনোট ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে তারা। এখন পর্যন্ত তৌফিক ১০০-১২৫টি জালনোটের চালান বিক্রি করেছে।  
এ ছাড়া ক্ষেত্র বিশেষে তারা হোম ডেলিভারিও দেয়। যাদেরকে দিয়ে জালনোট গ্রাহকদের কাছে পাঠানো হয় তারা সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা সময়ের মধ্যে নোট ডেলিভারি দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে দ্রুত চলে আসে। এক্ষেত্রে, জালনোট ক্রেতা এবং বিক্রেতারা পরস্পরের সঠিক নাম পরিচয় কখনোই জানতে পারে না। ছদ্মনাম এবং অস্থায়ী মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে তারা নোট আদান-প্রদান শেষে মোবাইল ফোন নম্বর পরিবর্তন করে ফেলে। সূত্র জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গ্রুপের মাধ্যমে ঢাকার নিকটবর্তী একজন জালনোট প্রস্তুতকারী ব্যক্তির সঙ্গে ইন্টারমিডিয়েটে পড়াকালীন পরিচয়ের মাধ্যমে তৌফিকের এই জালনোট তৈরির হাতেখড়ি। জালনোট তৈরিতে প্রযুক্তিগত ব্যবহারের খুটিনাটি ওই ব্যক্তির কাছ থেকেই রপ্ত করে তৌফিক। পরবর্তীতে নিজের জমানো ১৪ হাজার টাকা দিয়ে একটি প্রিন্টার ক্রয় করে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিতো সে। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী হওয়ায় দ্রুতই সে জালনোট প্রস্তুতের পুরো প্রক্রিয়াটি শিখে যায়। এখন পর্যন্ত তার চক্রের একাধিক সদস্যের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে সূত্র জানায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাধারণত ধর্মীয় কোনো বড় উৎসবকে কেন্দ্র করে নোট তৈরিতে সক্রিয় হয় তারা। এ ছাড়া সারা বছর তাদের কমবেশি কার্যক্রম চলে। তৌফিক এবং চক্রটি কোরবানির ঈদে গরু ক্রয়কে টার্গেট করে সক্রিয় হয়েছিল। তৌফিক মূলত জালনোটের প্রিন্টিংয়ের বিষয়টি দেখতো। সূত্র জানায়, রাজধানীর একটি অভিজাত এলাকায় যে ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন তার ফার্নিচার থেকে শুরু করে পুরো বাসাটি দেখলে যে কারোর কাছে ব্যয়বহুল বলে মনে হবে। যেটা একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর পক্ষে বহন করা অকল্পনীয়। পুরো ফ্ল্যাটটিতে সে একা থাকে। ওই শিক্ষার্থীর সেমিস্টার ফি,  দৈনন্দিন খরচ থেকে শুরু করে পুরো বিষয়টিই জালনোট বেচাকেনার অর্থ থেকেই বহন করে। এ বিষয়ে র‌্যাব-১০ এর পরিচালক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মাহফুজুর রহমান বলেন, জালনোট প্রস্তুতের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আমাদের অবাক করেছে। জালনোট প্রস্তুতকারী চক্রের মূলহোতা তৌফিকের সঙ্গে আরও কোনো শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা তাকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে হয়তো আরও তথ্য পাওয়া যেতে পারে। বড় অঙ্কের নোট আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে সতর্ক হতে পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে জালনোট প্রস্তুতকারী চক্রগুলো ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status