দেশ বিদেশ

পরিবেশের ডিডি’র বাসায় কাজের মেয়েকে নির্যাতন

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে

২৪ জুন ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:১০ অপরাহ্ন

১২ বছরের মেয়ে। বাসায় কাজ করে। গৃহকর্ত্রী ফারহানা তার শরীরে ঢেলে দেন মরিচ মেশানো পানি। এরপর জোরপূর্বক বাথরুমে নিয়ে বন্দি করে রাখেন। কাজের মেয়ে রুমা তখন বাঁচাও-বাঁচাও  চিৎকার করছিল। তবু মন গলেনি ফারহানার। বাথরুমে থাকা রুমার চিৎকার শুনেন আশপাশের লোকজন। বাথরুমের খিড়কি দিয়ে হাত দিয়ে ইশারাও দেয় রুমা। বিষয়টি তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানান স্থানীয়রা। পরে পুলিশ এসে বাথরুম থেকে কাজের মেয়ে রুমাকে উদ্ধার করেছে। গতকাল বিকালে সিলেটের উপ-শহরের ই-ব্লকের ১১ নং বাসার ফিরোজা মঞ্জিলে এ ঘটনা ঘটে। কাজের মেয়েকে উদ্ধারের সময় সেখানে শত শত মানুষ উপস্থিত ছিলেন। কাজের মেয়ের মুখে নির্যাতনের বিবরণ শুনে তারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই বাসার বাসিন্দা সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান হোসেন। স্ত্রী ফারহানা আলম ও দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে তিনি ওই বাসায় বসবাস করেন। ফারহানা পূবালী ব্যাংকের কর্মকর্তা। এক মাস আগে লোক মারফতে গাজীপুর থেকে কাজের মেয়ে রুমা আক্তারকে নিয়ে এসেছিলেন এমরান হোসেন। উদ্ধারের পর কাজের মেয়ে রুমা আক্তার সাংবাদিকদের জানিয়েছে- এক মাস আগে কাজের জন্য তাকে গাজীপুর থেকে ওই বাসাতে নিয়ে আসা হয়। আসার পর থেকে বাসার গৃহকর্ত্রী ফারহানা আলম তাকে প্রায়ই মারধর করেন। এতে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে সে। দুইদিন আগে থেকে বাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়। এতে গৃহকর্ত্রী ফারহানা তার ওপর আরও ক্ষুব্ধ হন। সকালে এমরান হোসেন অফিসে যাওয়ার পর তাকে মারধর শুরু করেন ফারহানা। চুল ধরে নাকে ও মুখে থাপ্পড় দেন। এতে তার মুখের বিভিন্ন অংশ ফুলে যায়। এক পর্যায়ে গুঁড়া মরিচ মেশানো পানি নিয়ে আসেন। ওই পানি ঢেলে দেন গায়ে। এ সময় চিৎকার শুরু করলে তাকে বাথরুমে নিয়ে বন্দি করে রাখা হয়। এর আগে গতকাল বিকালে তাকে মারধর করা হয় বলে জানায় রুমা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- দুপুর থেকে তারা এমরান হোসেনের বাসার ভেতর থেকে চিৎকার শুনতে পান। এক পর্যায়ে বাথরুমের খিড়কির মধ্যে হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে ওই মেয়ে তাকে উদ্ধারের জন্য আকুতি জানায়। স্থানীয়রা প্রথমে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। এ দৃশ্য দেখে আশপাশের লোকজনও ছুটে আসেন। খবর পেয়ে সেখানে আসেন স্থানীয় ২২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এডভোকেট সালেহ আহমদ সেলিম। তিনি এসে বিষয়টি শাহ্‌পরাণ থানা পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে শাহ্‌পরাণ থানা পুলিশ সেখানে যায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতিতে রুমা আক্তার তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দেয়। একই সঙ্গে বাথরুমে গিয়ে মরিচও দেখায়। এ সময় বার বার রুমা আক্তার পুলিশকে জানায়- ‘স্যার আমি আর ওখানে থাকবো না। ওখানে থাকলে আমাকে মেরে ফেলবে। আমি বাড়ি চলে যেতে চাই।’ এক পর্যায়ে ওই কাজের মেয়েকে নিয়ে বাসার নিচে চলে আসে। এ  সময় গৃহকর্ত্রী ফারহানাকে মহিলা পুলিশের মাধ্যমে নিচে নামাতে চাইলে তিনি জোর জবরদস্তি করেন। এক পর্যায়ে জোর করেই পুলিশ তাকে নামিয়ে নিচে নিয়ে আসে। খবর পেয়ে বাসায় আসেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- ‘কাজের মেয়েটি গত দু’দিন ধরে বাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিল। এ কারণে আমি যার মাধ্যমে এনেছিলাম তাকে খবর দিয়েছি। সে এসে বাড়ি নিয়ে যাবে বলেছে। এজন্য তার অপেক্ষায় ছিলাম। তাকে মারধর করা হয়নি বলে জানান তিনি।’ এদিকে- গৃহকর্ত্রী ফারহানা আলম কাজের মেয়েকে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন- ‘কখনোই তাকে মারধর করা হয়নি। রুমা বলেছে তাকে ভূতে ধরেছে। এর আগে কয়েকবার একই ভাবে তাকে ভূতে ধরেছিল। ওই সময় তার শরীরে মরিচ মেশানো পানি দিলে ভূত চলে যায়। এ কারণে সে নিজেই মরিচ নিয়ে এসে শরীরে দেয়। তাকে বাথরুমের ভেতরে বন্দি রাখা হয়নি। সে নিজে থেকে বাথরুমে ঢুকে চিৎকার শুরু করেছিল বলে জানান তিনি।’ সিলেটের শাহ্‌পরাণ থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান জানিয়েছেন- কাজের মেয়েকে নির্যাতনের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। ওই গৃহকর্ত্রী সহ ফারহানাকে থানায় নিয়ে আসা হচ্ছে। আইনের ব্যত্যয় হলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status