বই থেকে নেয়া

করোনায় চড়ুই, কাক, ফিঙ্গেদের খেলা

শাইখ সিরাজ

২৩ জুন ২০২১, বুধবার, ৯:৩৩ অপরাহ্ন

এখন একটানা বসে আর লেখা হয় না। ডা. জুনায়েদ বারণ করেছেন। কিন্তু লক্ষ্য করছি মাজার ব্যথাটা কমছে না। উঠে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালাম। দক্ষিণে মানিকদের আগের একতলা ভবনের ছাদটিতে তিনটি কবুতর মরে পড়ে আছে। বুঝে উঠতে পারলাম না কোথা থেকে এভাবে কবুতরগুলো মরে পড়ল। পারুকে ডাকলাম। দেখতে দেখতে আরও দুটো মরে পড়ল। করোনার এই সময়ে পশুপাখির মৃত্যুতে মনে নানান প্রশ্ন উঁকি দেয়।

পারু এসে দেখে বলল, আহ্, কবুতরগুলো কীভাবে মরল, কিছু-একটা খেয়ে বোধ হয়।
বললাম, কাদের কবুতর? আশপাশের অনেক বাসাতেই কবুতর পোষে। তবে মানিকরা কবুতর পোষে না। আমাদের বারান্দার ঠিক সামনে মানিকদের ছাদের একাংশ সকালে অনেক পাখি ও কবুতর এসে বসে। আমি সে সময়ে নাশতার টেবিলে থাকি। নাশতার ফাঁকে ফাঁকে ওই পাখিগুলিকে খাবার দেই। আসলে ওদের সঙ্গে খেলা করি। বিশেষ করে চড়ুই বসে বেশি। চড়ুইগুলো খাবার খেতে এসে ভিড় করে। তখন ছুড়ে দেওয়া খাবারে চড়ুই আর ভাগ বসাতে পারে না কাকের যন্ত্রণায়। আমি তখন খাবারের পাউরুটির টুকরাটাকে ছোট করে চড়ুইর সামনে ছুড়ে দিই। সেখানেও কাক এসে খাবার কেড়ে নেয়। ওদের মধ্যে খাবার সংগ্রহ নিয়ে মজার খেলা হয়। কাক বড়, চড়ুই তার চেয়ে অনেক ছোট। ফলে কাকের সঙ্গে চড়ুই পেরে উঠে না। এমন সময় এসে হানা দেয় ফিঙ্গে। আমি মনে মনে ফিঙ্গের অপেক্ষায় থাকি কখন সে আসবে! ও এলে চড়ুই-কাক দুজনেই হার মানে। আমি ফিঙ্গের সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে খেলা করি। ওকে খাবার দিই। আকাশে ছুড়ে। ফিঙ্গে উড়ে এসে খাবার মাটিতে পড়ার আগেই শূন্য থেকে ছো মেরে নিয়ে যায়। আমি যেমন দেখে মজা পাই, বেচারা চড়ুই দূরে বসে তা দেখে। আর কাক ফিঙ্গের সঙ্গে পেরে উঠবে না, এই ভেবে আগেই চলে যায়। আমি টেবিলে এসে বসি, আবার যাই চড়ুইকে দেখতে। ফিঙ্গে চলে গেছে। এবার চড়ই’র জন্য খাবার দিই। ওরা আনন্দে খেতে থাকে। মাঝে মধ্যে আমার পাশের বাসার কবুতরগুলো এসে বসে। ওরা পাউরুটি খুব একটা খায় না।

দোকানপাট আর মার্কেট খোলা নিয়ে গত বেশ কয়েকদিন ধরে সরকার আর দোকান মালিক সমিতির মধ্যে চোর-পুলিশ খেলা হচ্ছে। গত ৪ মে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দোকান ও শপিংমল ১০ মে থেকে খোলার কথা ঘোষণা করে সরকার। বেশ কয়েকটি মার্কেট ও শপিংমল করোনার কথা ভেবে খুলবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী নিউ মার্কেট বন্ধ রাখার ঘোষণা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ওই মার্কেটের আংশিক দোকানপাট খুলেছে। এছাড়া এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর রোড ও পুরান ঢাকার বংশাল, নয়াবাজার, ওয়ারী ও বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারের কেরাণীগঞ্জের মার্কেটগুলোও চালু করা হয়েছে। ফলে রাস্তাঘাটে হালকা আর ভারী যানবাহনে বলতে গেলে সারাদিন স্বাভাবিক দিনের মতো যানজট লেগে থাকছে। রাস্তায় মার্কেটে কেউ কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। মানছেন না সামাজিক দূরত্ব। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এদেশে করোনা ভাইরাস নামের কোনো মহামারি এখনো নাই, দুমাস আগেও ছিল না। মানুষের মুখে মাস্ক আছে। হয়তো অনেকেই ভাবতে পারেন, এই মাস্ক অনেকেই ধুলাবালি থেকে রক্ষা পেতে আগেও পরতেন এখনো পরেন। অথচ গত ২৪ ঘণ্টায় (১০ মে ২০২০) দেশে নতুন করে আরও ৪৮৭ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৫৭ জনে। এবং গত ২৪ ঘণ্টায় এই ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। এ নিয়ে মোট মৃত্যু ২২৮ জনের। এই সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২৩৬ জন। মোট সুস্থ ২ হাজার ৬৫০ জন।
১০.০৫.২০২০

অন্যদিন প্রকাশিত ‘করোনাকালে বহতা জীবন’ বই থেকে নেয়া
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status