শেষের পাতা

টিকাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর, বললেন সবাই মুলা দেখাচ্ছে

কূটনৈতিক রিপোর্টার

২৩ জুন ২০২১, বুধবার, ৯:২৮ অপরাহ্ন

টিকাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এ নিয়ে সবাই মুলা দেখাচ্ছে। বড় বড় পণ্ডিতরা টিকার বিষয়ে কত কী বলছে। আদতে তারা মুলা দেখিয়ে যাচ্ছে। জি-৭ দেশগুলো কিছুদিন আগে বৈঠক করে বলেছে তারা ১০০ কোটি ডোজ টিকা দরিদ্র দেশগুলোকে দিবে। কিন্তু কই? এই নিয়ে তো শুধু গল্পই শুনছি। কেউ তো টিকা দিচ্ছে না। গতকাল নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে অব্যাহত চেষ্টার পরও টিকা না পাওয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রী এভাবেই খেদোক্তি করেন। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সবাই কেবল আশ্বাস দিচ্ছে, কিন্তু টিকা কবে পাঠাবে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো রাষ্ট্রই এ নিয়ে কিছু বলছে না। তাহলে সমাধান কি, কীভাবে মিটবে বাংলাদেশের টিকা সংকট? জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বড় সমাধান হবে যখন আমরা নিজেরা টিকা উৎপাদন করতে পারবো। নিজেরা টিকা তৈরি করলে আর অন্যের দিকে চেয়ে থাকতে হবে না। বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট-৭ এর নেতারা মহামারি নিয়ন্ত্রণে করোনাভাইরাসের টিকার ১০০ কোটি ডোজ দরিদ্র দেশগুলোকে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ১৩ই জুন জি-৭ সম্মেলন শেষে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ ঘোষণা দেন। বৃটেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কর্নওয়ালের কারবিস বেতে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেল ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি অংশ নেন।
টিকাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ: টিকাকে বিভিন্ন দেশ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে এমন অভিযোগ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অনেক রাষ্ট্র টিকা দেয়ার অঙ্গীকারের পর পরই বলে যে আমাকে অমুক জিনিসে সমর্থন দিতে হবে। দেখা যাচ্ছে টিকাকে তারা কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। এ সময় ধনী দেশগুলোর প্রতি অভিযোগের আঙ্গুল উঁচিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ধনী দেশগুলো টিকা নিয়ে বসে রয়েছে। তারা জনসংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি টিকা মজুত করেছে, এটা অন্যায়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী মোমেন জানান, অনেক ধনী দেশই মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। তারা মুখে মুখে মানবতার কথা বললেও গত চার বছরে মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য ৩ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। অতি সম্প্রতি ওই ধনী দেশগুলো ২৪ বিলিয়ন ডলারের ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সবাই এখন টিকা ব্যবসায়ী!: সাংবাদিক, সাহিত্যিক, গায়ক- সবাই এখন টিকা ব্যবসায়ী এমন মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, সবাই আমাদের কাছে ভ্যাকসিন বিক্রি করতে চায়। মন্ত্রী বলেন, ‘একটা মজার কাহিনী বলি। আমেরিকার অনেক ব্যক্তিবিশেষ আমাদের জানিয়েছেন যে, অমুক লোক অনেক টিকা দিতে পারবেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে আমেরিকার লোক আমাদের জানিয়েছে, তারা রাশিয়ান টিকার ডিলারশিপ পেয়েছে কিন্তু রাশিয়া সরকার আমাদের জানিয়েছে তাদের কোনো ডিলারই নেই।’ মন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন এখন একটা মজার জিনিস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ী তো বটেই, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, গায়ক- সবাই এখন টিকা ব্যবসায় নেমে পড়েছেন। টিকা কবে নাগাদ পাওয়া যেতে পারে? এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, টিকা নিয়ে সুখবর পাবো কিন্তু কবে পাবো সেটি এখন বলতে পারছি না।

যুক্তরাষ্ট্রের টিকা প্রদানের আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত: ওদিকে বাংলাদেশকে করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন সহায়তা দেবে বলে চিঠি পাঠিয়ে নিজেদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে চিঠি লিখেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থোনি ব্লিনকেন। গতকাল নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে অন্য ভ্যাকসিনের পাশাপাশি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কিছু ভ্যাকসিনও সরবরাহ করবে। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলো প্রয়োজনের বেশি ভ্যাকসিন নিয়ে বসে আছে। সেজন্য তাদের বলেছি যে, বাড়তি ভ্যাকসিন নষ্ট না করে আমাদের দিয়ে সহযোগিতা করতে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আগেই চেয়েছি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা আশাবাদী তারা আমাদের এই ভ্যাকসিন দেবে। ওদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউস গত সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৮ দেশের পাশাপাশি এশিয়ার ১৮টি দেশকে নতুন করে ১ কোটি ৬০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে গত ৬ই মে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যাকসিন পাওয়া নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমেরিকার ভ্যাকসিন আমাদের আশা দেখাচ্ছে। তারা বলেছে, তাদের ৬০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন আছে, যা তারা ব্যবহার করছে না। এটা জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আমেরিকাকে ভ্যাকসিনের জন্য অনুরোধ করেছি, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে বলেছি, আবার ওয়াশিংটনে নিযুক্ত আমাদের রাষ্ট্রদূত বাইডেন প্রশাসনকে অনুরোধ করেছেন। এসব ঘটনা পুনরুল্লেখ করে মন্ত্রী গতকালও বলেন, আশা করি আমেরিকা আমাদের প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে।

প্রবাসীরা বন্দুক নিয়ে দেশে আসতে চান: ওদিকে প্রবাসীরা দেশে আসার পর নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় থাকেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ কারণে তারা বন্দুক নিয়ে দেশে আসতে চান। ড. মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অনেকে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, দেশে আসার পর তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। বিদেশ থেকে আসার পর সবাই মনে করে, টাকা-পয়সা নিয়ে এসেছেন। তাই নিরাপত্তার কারণে তারা বন্দুক নিয়ে দেশে আসতে চান। মন্ত্রী বলেন, প্রবাসী নাগরিকরা বিদেশে থেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র চান। আমরা এটা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করবো। প্রবাসীরা এক কোটি টাকার বন্ড ক্রয়সীমা তুলে দেয়ার আবেদন জানিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, এটা হলে, তারা বেশি টাকা দেশে পাঠাতে পারবেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status