শেষের পাতা

কল্যাণ বোর্ডই ভরসা প্রবাসীদের

রোকনুজ্জামান পিয়াস

২৩ জুন ২০২১, বুধবার, ৯:২৭ অপরাহ্ন

করোনাকালে সবচেয়ে সংকটে রেমিট্যান্স যোদ্ধাখ্যাত প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবার। গত এক বছরে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন প্রায় ৬ লাখ কর্মী। এদের বেশির ভাগই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর এখন তারা ওইসব দেশে ফিরতে মরিয়া। কিন্তু করোনায় অনেক দেশ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অন্যদিকে ফ্লাইট জটিলতা ও ভিসা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। এরই মধ্যে সৌদি আরবে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও কিছু বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। দেশটিতে সাতদিন হোটেল কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এজন্য প্রত্যেককে গুনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। বিমান টিকিটের জন্যও প্রয়োজন সমপরিমাণ অর্থ। সেই সঙ্গে ফ্লাইট ও টিকিট সংকট। আর এসব টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে কর্মীরা পড়েছেন মহাসংকটে। এই অবস্থায় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড প্রবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া দেশে পুনর্বাসন এবং আটকে পড়া কর্মীদের ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় সহায়তাসহ নানা সমস্যায় এগিয়ে এসেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এ প্রতিষ্ঠানটি।
সূত্রমতে, গত বছরের জানুয়ারিতে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে মো. হামিদুর রহমান যোগদানের তিন মাস পরই বিশ্বব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। করোনার দোহায় দিয়ে অনেক সরকারি সংস্থা যখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তখন তিনি ও তার টিম পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রবাসীদের। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ও সচিবের দিকনির্দেশনায় এ বিপর্যয় মোকাবিলায় ছুটির মধ্যেও অফিস খোলা রেখে নানা সেবা দিয়ে চলেছেন।
সূত্র মতে, বর্তমান প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার কর্মী সৌদি আরব যাচ্ছেন। এই কর্মীদের কোয়ারেন্টিন বাবদ ইতিমধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড জনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। চলতি সপ্তাহ থেকে এই টাকা দেয়া শুরু হবে। ২০শে মে থেকে ৩০শে জুন পর্যন্ত যারা সৌদি আরব যাবেন, তারা এই টাকা পাবেন। প্রথমবারের মতো যারা সৌদিতে যাচ্ছেন তারাও পাবেন। এছাড়া ঘোষণার আগে যারা চলে গেছেন, দূতাবাসে আবেদন সাপেক্ষে তাদেরকেও দেয়া হবে এই অর্থ।
কল্যাণ বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এই খাতে খরচ হতে পারে কয়েকশ’ কোটি টাকা। করোনার এই মহামারিতে যত টাকা প্রয়োজন তার পুরোটাই বরাদ্দ দেবে প্রতিষ্ঠানটি। কর্মীদের নানা সমস্যা সমাধানে প্রতিষ্ঠানটি গঠন করেছে কুইক রেসপন্স টিম।  
গত বছরের এপ্রিলে করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করলে বিদেশে কাজ হারাতে থাকেন কর্মীরা। এ সময় তাৎক্ষণিকভাবে বোর্ড বিদেশস্থ ৩২টি মিশনের মাধ্যমে ১১ কোটি টাকার খাদ্য সহায়তা দেয়। ওই সময় পরিবহন বন্ধ থাকায় দলে দলে দেশে ফেরা কর্মীরা বাড়ি পৌঁছানো নিয়েও জটিলতায় পড়েন। কল্যাণ বোর্ড বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক তাদের জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে দেয়। এ খাতে বোর্ডের খরচ হয় তিন কোটি টাকা। নারী কর্মীদেরও একই পরিমাণ টাকা দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, দেশে ফেরত আসা কর্মীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কল্যাণ বোর্ড তার তহবিল থেকে বিনাসুদে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা দিয়েছে। প্রসঙ্গত, ব্যাংকটি স্থাপনেও পরিশেধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে ৯৫ শতাংশ অর্থাৎ ৪৭৫ কোটি টাকা দেয় বোর্ড। এ থেকে লভ্যাংশের কোনো অর্থও কল্যাণ বোর্ড পায় না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার মহামারিতে ব্যাংকটি প্রবাসীদের কল্যাণে এক টাকাও সহায়তা করেনি। করোনাকালে ভিয়েতনাম, সৌদি আরব, লেবাননসহ কয়েকটি দেশে আটকেপড়া কর্মীদের বোর্ডের সহায়তায় দেশে ফেরত আনা হয়েছে। সরকার মালদ্বীপে খাদ্য পাঠালেও বিমানভাড়া বহন করেছে কল্যাণ বোর্ড।
করোনার কবলে পড়ে ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ হাজার নারী কর্মী দেশে ফেরত এসেছে। প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের রি-ইন্টিগ্রেশন ও পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। বোর্ড জানিয়েছে, পর্যায়ক্রমে ১০ হাজার কর্মী এই কর্মসূচির আওতায় আসবে। প্রত্যককে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। ইতিমধ্যে ঢাকা ও পাশ্ববর্তৗ জেলার ৮১ জনকে এই অর্থ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া কাজ হারিয়ে ফেরত আসা ২ লাখ কর্মীর রি-ইন্টিগ্রেশনের জন্য একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে এর কার্যক্রম শুরু হবে।
নিয়মানুযায়ী শুধুমাত্র বৈধভাবে বিদেশগমনকারী কর্মী প্রবাসে মারা গেলে বোর্ড থেকে ৩ লাখ টাকা পান। কিন্তু বৈশ্বিক বিপর্যয়ে সারা বিশ্বে যেসব বাংলাদেশি নাগরিক করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন, তাদের পরিবারকেও সমপরিমাণ টাকা করে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রতিবন্ধী ভাতা নামে নতুন একটি সেবা চালু করেছে বোর্ডে। এই সেবার আওতায় প্রবাসী কর্মীর প্রতিবন্ধী সন্তানদের মাসিক ১ হাজার টাকা করে ভাতা দেয়া হবে। ২০১২ সাল থেকে কর্মীর মেধাবী সন্তানদের ৬ষ্ঠ থেকে স্নাতক শেষ বর্ষ পর্যন্ত শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে যাচ্ছে কল্যাণ বোর্ড। এ পর্যন্ত এ খাতে প্রায় ৩০ কোটি টাকা শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হয়েছে। বৃত্তির পরিমাণ বাৎসরিক ১৪ হাজার থেকে ৩৪৫০০ টাকা পর্যন্ত। একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে কল্যাণ বোর্ড বিমানবন্দরের কাছে বিদেশগামী ও প্রত্যাগত কর্মীদের জন্য ডরমেটরি বা শেল্টার হাউজ নির্মাণ এবং কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এই হাসপাতালের নামকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে হাসপাতাল ও ডরমেটরি চালু হবে। বিমানবন্দরে ২৪ ঘণ্টা বিশেষ সেবা দিচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক। বিদেশে নারী কর্মীদেরও নিরাপত্তায় পাঁচটি সেফ হোম পরিচালিত হচ্ছে বোর্ডের অধীনে।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন) মুশাররাত জেবিন প্রবাসীদের কল্যাণার্থে নেয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চাই। এজন্য চলমান সেবার পাশাপাশি আরও কিছু উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, তাদের সেবায় নতুন নতুন প্রজেক্ট নিতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- সারা দেশে ফিল্ড অফিস করা। এটা করা না গেলে তৃণমূল পর্যায়ে সেবা দেয়া সম্ভব হবে না। এ ছাড়া এই প্রতিষ্ঠানে আমরা অনেকেই ডেপুটেশনে আছি। আমাদের বেতন-ভাতাও হয় কল্যাণ ফান্ডের টাকায়। সরকার বেতন-ভাতা দিলে ফান্ডের অর্থ প্রবাসী কল্যাণে ব্যয় করে সেবার মান বাড়ানো যেতো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status