শেষের পাতা

অসুস্থ মাকে নিয়ে ৯ ঘণ্টায় ৬ হাসপাতালে ঘুরলেন ছেলে

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

২৩ জুন ২০২১, বুধবার, ৯:২৫ অপরাহ্ন

অসুস্থ মাকে নিয়ে নয় ঘণ্টায় ছয় হাসপাতাল ঘুরেছেন ছেলে। বেসরকারি হাসপাতালে করোনা শনাক্তের পর সরকারি হাসপাতালে যান। ভর্তি হওয়ার পর হাসপাতালে শয্যার অপেক্ষায় অ্যাম্বুলেন্সে কেটে যায় দুই ঘণ্টা। পরে অক্সিজেন সংকটের কথা বলে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। এভাবে ছয় হাসপাতালে ঘুরতে কেটে যায় নয় ঘণ্টা। এমন অভিযোগ খুলনা মহানগরীর খালিশপুর নয়াবাটি এলাকার বাসিন্দা জুলেখা বেগমের (৬৫) ছেলে মো. লিটনের। তিনি বলেন, ছয় হাসপাতালে দৌড়ে হলেও মাকে বাঁচাতে পারলাম, সেজন্য শুকরিয়া।
লিটনের মতো একই অবস্থায় পড়তে হয় খুলনায় শ্বাসকষ্ট ও করোনা আক্রান্ত রোগীর স্বজনদের। রোগী নিয়ে একাধিক হাসপাতালে ছুটলেও মিলছে না শয্যা। অনেক রোগী পান না চিকিৎসা ও অক্সিজেন। এজন্য অধিকাংশ রোগী বাড়িতে চিকিৎসা নেন। তবে রোগীদের এসব অভিযোগ আমলে না নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, হাসপাতালে শয্যার সংকট আছে। কিন্তু অক্সিজেনের সংকট নেই। সব রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করি আমরা।
মো. লিটন বলেন, মায়ের জ্বর, সর্দি-কাশি ছিল না। গত রোববার রাত ৩টার দিকে হঠাৎ তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। মাকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে নিয়ে যাই ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে। শ্বাসকষ্ট থাকায় ভর্তি নেয়নি তারা। পরে সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখান থেকেও ফেরত পাঠানো হয়। এরপর গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানেও ভর্তি নেয়নি। সেখান থেকে ফরটিস হাসপাতালে পৌঁছাই ভোর ৬টায়। এই হাসপাতালে তিন ঘণ্টায় বিভিন্ন পরীক্ষা করানো হয়। খরচ হয় ১২ হাজার টাকা। এখানে মায়ের নমুনা পরীক্ষা করলে করোনা শনাক্ত হয়। পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
লিটন আরও বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর ভর্তি করানো হয়। কিন্তু শয্যা না পেয়ে মাকে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে অক্সিজেন দিয়ে শুইয়ে রাখা হয়। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় মাকে অ্যাম্বুলেন্সে রাখা হয়। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে অক্সিজেন নেই, তাকে দ্রুত খুলনা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে ভর্তি করানো হয়।
একই অভিযোগ করেছেন মহানগরীর পূর্ববানিয়া খামার চৌধুরী গলির বাসিন্দা মহিদুল হক শান্ত। তিনি বলেন, চৌধুরী গলির বাসিন্দা মাহমুদুল হক রুবেল আমার আত্মীয়। এক সপ্তাহ ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছে। বাসায় অক্সিজেনের মাধ্যমে শ্বাস নিচ্ছিল। গত সোমবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তাকে নেয়া হয় খুলনা সদর হাসপাতালে। কিন্তু করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেট না থাকায় তাকে ফেরত পাঠানো হয়। পরে আরেক হাসপাতালে নিলে ফেরত পাঠানো হয়। নিরুপায় হয়ে তাকে মহানগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করি। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী বলেন, রোগীর স্বজনদের কিছু অভিযোগ সত্য নয়। আমাদের এখানে অক্সিজেন সিলিন্ডারের এখন পর্যন্ত ঘাটতি নেই। অক্সিজেন সিলিন্ডার পর্যাপ্ত রয়েছে। তবে শয্যা নেই। এজন্য সব রোগীকে ভর্তি রাখা যায় না। সবাইকে চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করি। এরপরও নানা সমস্যায় রোগীদের অন্য হাসপাতালে পাঠাতে হয়।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, খুলনা জেনারেল হাসপাতালে শুধুমাত্র করোনা পজেটিভ রোগী ভর্তি রাখা হয়। শ্বাসকষ্ট কিংবা করোনার উপসর্গ দেখা দিলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অক্সিজেন সিলিন্ডার পর্যাপ্ত থাকলেও শয্যার সংকট আছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status