মত-মতান্তর

বন্ধুত্ব, মানবতার বুলি আছে, কিন্তু টিকা কই?

সাজেদুল হক

২২ জুন ২০২১, মঙ্গলবার, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন

ব্যক্তি অথবা রাষ্ট্র একই। প্রত্যেকেই স্বার্থপর। জঁ পল সার্ত্র বেঁচে থাকলে দেখতেন, করোনার পৃথিবীতে তার কথা কতটা সত্য। বন্ধুত্ব, মানবতা এগুলোতে কেবল মুখের বুলি। কিন্তু করোনাতো মহামারী। কেবল মুখের কথায় তো এটি কমছে না বা যাচ্ছে না। বছর দেড়েক হলো। আক্ষরিক অর্থেই পৃথিবীটা লড়ছে। এমন অস্বাভাবিকতা মানবসভ্যতা কি কখনো দেখেছে। দেশে দেশে হাসপাতালগুলোতে মানুষের প্রাণ রক্ষায় চিকিৎসকদের লড়াই। লকডাউনের মতো নতুন এক ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত হয়েছে দুনিয়া। মুখ ঢেকে গেছে মাস্কে। কিন্তু সব কথার সার কথা তো হলো, মানুষ আসলে চেষ্টা করছে বেঁচে থাকতে। তাদের ধাওয়া করছে ছোট্ট এক ভাইরাস।
যদিও শতভাগ কার্যকর টিকা এখনো আসেনি। দু’টি ডোজ নিয়েও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন করোনায়। কিন্তু এটিতো পরিষ্কার, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষকে কিছুটা হলেও স্বাভাবিক জীবন দিতে পারে টিকা। টিকার ব্যবহারে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার দুটিই কমছে। কিন্তু কথা হলো এ টিকার প্রায় পুরোটাই ধনী রাষ্ট্রগুলোর কব্জায়। শুরু থেকে এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু জয় হয়েছে স্বার্থপরতা এবং মুক্তবাজার অর্থনীতিরই। ধনী দেশগুলো যখন তাদের জনগণের বড় অংশকে এরইমধ্যে টিকা দিয়ে ফেলেছে গরিব অথবা উন্নয়নশীল দেশগুলো কেবল হাহাকারই করছে। আরও একবার পৃথিবী দেখছে, টাকাই নিয়ন্ত্রণ করছে সব। গরিবের জীবনের যেন কোন দামই নেই। উন্নত কয়েকটি দেশের মানুষ আগে বেঁচে নিক। গরিবের কথা পরে ভাবা যাবে। কয়েকটি দেশ এবং কোম্পানি পুরো বিশ্বকে জিম্মি করে ফেলেছে।
বাংলাদেশে করোনা টিকার শুরুটা হয়েছিল ভালোই। কিন্তু ভারতে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার পরপরই দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে। হঠাৎ করেই টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয় বড় প্রতিবেশী দেশটি। যারা আবার পৃথিবীর সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদনকারী দেশ। এরপরও থেমে থাকেনি বাংলাদেশ। করোনার টিকা পেতে বারবার অনুরোধ করেছে ভারতকে। বিশেষ করে ১৪ লাখের কিছু বেশি মানুষ টিকার প্রথম ডোজ পেলেও দ্বিতীয় ডোজ পাননি। এ টিকা পেতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে অনুরোধ জানায়। চীন ও রাশিয়ার টিকা পেতেও নেয়া হয় সর্বাত্মক উদ্যোগ। টিকা পাওয়া নিয়ে অনেক কথা, অনেক আশ্বাস এরই মধ্যে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি প্রায় বন্ধ। এমনকি ১৪ লাখ মানুষ এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ পাননি। কবে পাবেন তাও কেউ জানেন না।
এই পরিস্থিতি কেবল বাংলাদেশের নয়। দুনিয়ার বেশির ভাগ গরিব এবং উন্নয়নশীল দেশের একই অবস্থা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, ধনীরা মোটামুটি টিকা পেয়ে সারলেই কেবল অন্য দেশগুলোতে টিকা পাঠানো শুরু হতে পারে। বন্ধুত্ব, মানবতা এগুলো তো কেবল কথার কথা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status