শেষের পাতা

ভিড় বাড়ছে দেশের সব আদালত প্রাঙ্গণে

রাশিম মোল্লা

২২ জুন ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:১৫ অপরাহ্ন

দীর্ঘ দুই মাস ১৫ দিন পর অধস্তন আদালতের ভার্চ্যুয়াল বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে। রোববার থেকে শারীরিক উপস্থিতিতে স্বাভাবিক বিচারকাজ শুরু হয়। সোমবার বিচারপ্রার্থীদের আনাগোনা বেড়েছে দেশের ৬৪ নিম্ন আদালতে। ঢাকার নিম্ন আদালতে সরজমিনে দেখা যায়, শারীরিক উপস্থিতিতে বিচারকাজ শুরু হওয়ায় আদালত ফিরে পেয়েছে আগের সেই ব্যস্ত রূপ। শুরুর দ্বিতীয় দিন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিচারপ্রার্থীরা মামলার খোঁজ নেয়ার জন্য সকাল থেকেই ভিড় করছেন। সকাল থেকেই আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের চাপ বেড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা এজলাসে হাজির হচ্ছেন।
তবে গত দুইদিনে দেশে করোনা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। বাড়ছে মৃত্যু, বাড়ছে সংক্রমণ। বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের পরিস্থিতি দিন দিন মারাত্মক আকার ধারণ করছে। রোগী বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা। রোববার করোনা আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে একদিনে আবার শনাক্ত সাড়ে ৪ হাজার ছাড়িয়েছে। সোমবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩ হাজার ৬২৬ জনে। নতুন শনাক্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৬৩৬ জন। করোনা বাড়ায় আইনজীবী-বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এভাবে করোনা বাড়তে থাকলে আদালত আবার ভার্চ্যুয়াল সিস্টেমে না যেয়ে উপায় থাকবে না।
কথা হয় ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক অফিস সেক্রেটারি এইচএম মাসুমের সঙ্গে। তিনি মানবজমিনকে বলেন, রোববার থেকে নিয়মিত আদালত খুলেছে। এতে আইনজীবীরা ব্যাপক খুশি। সবার মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে। বিচারপ্রার্থীরা মামলার খোঁজ নিতে আদালতে ভিড় করছেন। আইনজীবীদের আদালত খুলে দেয়ার আন্দোলনে সংবাদমাধ্যম পাশে থেকে নিউজ প্রকাশ করায় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রমাণ করেছেন। তবে প্রথমদিন চাপ একটু কম ছিল। কিন্তু আজ থেকে চাপ বাড়তে শুরু করেছে। আমরা চাই, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা আদালতের এজলাসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাজির হোক। বিষয়টি যেন কর্তৃপক্ষ ভালোভাবে নজরদারি রাখেন।
এছাড়া কথা হয় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের নাজির মো. মামুন এর সঙ্গে। তিনি মানবজমিনকে বলেন, কোর্ট খোলায় বিচারপ্রার্থীরা সকাল থেকেই আদালতে আসতে শুরু করেছেন। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিচারপ্রার্থী বিল্লাল হোসেন বলেন, আদালত স্বাভাবিক হওয়ায় মামলার খবর নিতে আদালতে এসেছি। মামলার বিষয়ে আইনজীবীর সঙ্গে কথা হয়েছে। পরবর্তী দিনে হাজিরা দিতে আসবো।
রোববার শুধু জামিন শুনানি হয়েছে আসামি আর আইনজীবীর শারীরিক উপস্থিতিতে। অন্যান্য ক্ষেত্রে আদালত দিন ধার্য করে আদেশ দিয়েছেন। আইনজীবীরা বলছেন, দু’-একদিন পর আগের চেহারায় দেখা যেতে পারে নিম্ন্ন আদালত। দুই মাস পর বিচার কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ায় আইনজীবীদের মাঝেও উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার মো. হযরত আলী গণমাধ্যমকে বলেন, আদালত খুলে দেয়ার দাবি ছিল আইনজীবীদের। আদালত বন্ধ থাকায় আইনজীবীরা একটা খারাপ অবস্থার ভেতরে ছিল। এতে শুধু আইনজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত না, বিচারপ্রার্থীরাও সমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন শারীরিক উপস্থিতিতে বিচারকাজ শুরু হওয়ায় আদালত কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে। এতে সবাই উপকৃত হবে।
আইনজীবী নয়ন মিয়া বলেন, আদালতে স্বাভাবিক বিচারকাজ বন্ধ থাকায় মামলার জট বাড়ার পাশাপাশি বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি ও হয়রানি চরমে পৌঁছেছিল। এখন আদালত খুলে দেওয়ায় সব স্বভাবিক হয়ে যাবে। এডভোকেট খাদেমুল ইসলাম বলেন, ঢাকার আদালত স্বভাবিক অবস্থায় ফেরেনি। তবে গত সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা বেড়েছে। এর কারণ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী রোববার থেকে আসামিদের উপস্থিতিতেই জামিন আবেদনের শুনানি হয়েছে। এ কারণে জামিন আবেদনকারী ও আইনজীবীদের উপস্থিতি দেখা গেছে। তিনি জানান, ঢাকার আদালতপাড়ার উপচেপড়া ভিড় দেখতে হলে কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে।
ঢাকার মতো দেশের অন্যান্য জেলার জজ কোর্ট খুলেছে। সেখানেও বাড়তে শুরু করেছে ভিড়। ভার্চ্যুয়াল জামিন শুনানিগুলো সরাসরি এজলাসে হওয়ায় কিছুটা ভিড় বেড়েছে। খোলার প্রথমদিনে খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। শুধু ভার্চ্যুয়াল আদালতের পরিবর্তে জামিন শুনানিগুলো এজলাসে হয়েছে। আইনজীবীরা যথাসম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বিচারকাজে অংশ নিয়েছেন। এ বিষয়ে চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের নাজির মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে জানান, আদালতে নিয়মিত কার্যক্রম চালুর প্রথমদিন রোববার মামলার ধার্য তারিখ না থাকার কারণে বিচার অঙ্গনে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেনি। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এএইচএম জিয়াউদ্দিন জানান, শারীরিক উপস্থিতিতে কার্যক্রম শুরু হলেও আদালত পুরোপুরি সচল হয়ে উঠতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। তবে আদালত চালু হওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিচার কাজে অংশগ্রহণ করবো।
গত শনিবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শারীরিক উপস্থিতিতে অধঃস্তন আদালতের কার্যক্রম চালুর বিষয়টি জানানো হয়। এতে বলা হয়, অধঃস্তন সব দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালগুলোতে রোববার থেকে শারীরিক উপস্থিতিতে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এতে আরো বলা হয়, স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক দেশের কোনো জেলা সদর বা মহানগরে করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোডিড-১৯ এর বিস্তার রোধকল্পে সার্বিক কার্যাবলী বা চলাচলে বিধিনিষেধ জারি করা হলে সংশ্লিষ্ট জেলার বা মহানগরের দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালগুলোতে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়াই ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে জামিন ও জরুরি দরখাস্ত শুনানি করা যাবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status