প্রথম পাতা

যে কারণে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি ঢাকা

মিজানুর রহমান

২০ জুন ২০২১, রবিবার, ৯:৩২ অপরাহ্ন

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ, থার্ড কমিটি কিংবা হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল- গত ৩ বছরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব ক’টি রেজ্যুলেশনে সায় ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু এবারই প্রথম মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের ভোটাভুটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে ভোট প্রদান থেকে বিরত (অ্যাবস্টেইন) থেকেছে ঢাকা। অর্থাৎ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ সংক্রান্ত ওই প্রস্তাবে সায় দেয়নি বাংলাদেশ। কিন্তু কেন? কি কারণে জাতিসংঘে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ওই অবস্থান পরিবর্তনের যুক্তিটা কি? তা নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। অবশ্য এ নিয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যায় মানবজমিনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপেও বাংলাদেশের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। বলেন, প্রথমত এটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির ওপর আনা রেজ্যুলেশন, এটা ভিন্ন এক প্রস্তাব। দ্বিতীয়ত: মিয়ানমার পরিস্থিতির সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, যা রেজ্যুলেশনে আরও শক্তভাবে প্রতিফলন চেয়েছিল বাংলাদেশ। কারণ রোহিঙ্গা সংকট বা মিয়ানমার পরিস্থিতির বড় ভুক্তভোগী আমরা। কিন্তু বাংলাদেশের চেষ্টা সত্ত্বেও শুক্রবারের প্রস্তাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি জোরালো ভাষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ কারণে অনেকটা প্রতিবাদ হিসেবেই বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়ে অ্যাবস্টেইন বা প্রস্তাবের পক্ষে ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে বলে ধারণা দেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বর্তমানে নিউ ইয়র্কে রয়েছেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা কেন অ্যাবস্টেইন করেছি তা নিয়ে জাতিসংঘে একটি বিবৃতি দিয়েছি। তাছাড়া এখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় থাকায় আমরা সরাসরি তার নির্দেশনা পেয়েছি। ফলে দেশের স্বার্থ এবং অন্যান্য ইস্যু বিবেচনায় আমরা ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। রাষ্ট্রদূত বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জোরালো দাবি জানিয়ে একটি স্বতন্ত্র রেজ্যুলেশন আনা হচ্ছে। যার প্রস্তাব রাখছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, পাস হওয়া ‘প্রিভেনশন অব আর্ম কনফ্লিক্ট’ শীর্ষক শুক্রবারের রেজ্যুলেশনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বর্তমান অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের আসল কারণ উদ্‌ঘাটন এবং মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে আবারো রোহিঙ্গা উচ্ছেদ থেকে বিরত থাকতে রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ওই নন-বাইন্ডিং বা গ্রাহ্য করার বাধ্যবাধকতা না থাকা ওই রেজ্যুলেশনে ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, ভুটান, চীন, লাওস, নেপাল, থাইল্যান্ড ও রাশিয়া সহ ৩৬টি দেশ। আর এর পক্ষে ভোট দেয় ১১৯টি দেশ। প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে একটি মাত্র রাষ্ট্র বেলারুশ। পাস হওয়া রেজ্যুলেশনে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচি, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিক এবং খেয়ালখুশিমতো যেসব ব্যক্তিকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের সবার মুক্তির দাবি জানানো হয়। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বলছে, ওই রেজ্যুলেশনে সদস্য সব দেশকে মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান ছাড়াও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রতি জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার এবং দেশের মানুষের সব মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে সেখানে টেকসই একটি গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরকে অনুমোদন দিতে সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status