বাংলারজমিন

হকার উপেন্দ্রের জীবন সংগ্রাম

আজিজুর রহমান চৌধুরী, নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেক

২০ জুন ২০২১, রবিবার, ৯:১১ অপরাহ্ন

৩৪ বছর ধরে পত্রিকা নিয়ে ছুটেছেন হকার উপেন্দ্র। কাকডাকা ভোরে পাখির কিচির-মিচির শব্দে ঘুম ভাঙতেই ব্যস্ততা বেড়ে যায় উপেন্দ্রের। পত্রিকা সরবরাহকারী এই হকার বাইসাইকেল নিয়ে ছুটেন উপজেলা সদর নাসিরনগরে। বছরের ৩৬৫ দিনই তার ব্যস্ততা। চৈত্রের খর দুপুর, কালবৈশাখীর ঝড়, আষাঢ়ের মুষলধারার বৃষ্টি, মাঘের বাঘ পালানো শীতেও নেই তার ক্লান্তি। তার এ মহৎ কাজে প্রথম থেকেই সেবা দিয়ে আসছে তার শ্যালক তাপস (৪৫)।
উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের চটিপাড়া গ্রামে ১৯৬০ সালে তার জন্ম। ১৯৮৬ সাল থেকে মাত্র ৩০ কপি পত্রিকা নিয়ে তার যাত্রা শুরু। আজ তার গ্রাহক সংখ্যা ৫ শতাধিক। যদিও কোভিড-১৯ এ শতাধিক ব্যবসায়ী পত্রিকা পড়া ছেড়ে দিয়েছেন।
২০০৪ সালে সেভ দ্যা সিলড্রেন (ইউএসএ)-এর এরিয়া ম্যানেজার কলিমুল্লা কলির নির্দেশে জাবেদ আহমেদ তাকে একটি ভালো বাইসাইকেল উপহার দেন। এতে উপেন্দ্রের গতি আরও বেড়ে যায়। মাঝে-মধ্যে তার ছেলে পিয়াসও তাকে সাহায্য করে আসছিল। সেই সময় জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল হিসেবে নাসিরনগর উপজেলার পরিচিতি ছিল। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন নাসিরনগরে ভালো কর্মকর্তা-কর্মচারী আসতে অনীহা প্রকাশ করতেন। আবার আসলে কেউ যেতেও চাইতেন এই প্রতিকূল অবস্থা পেরিয়ে উপেন্দ্র দ্বারে দ্বারে পত্রিকা বিলি করতেন। এক সময় সরাইল বিশ্বরোড থেকে বাইসাইকেলে পত্রিকা নিয়ে আসতে হতো। বর্তমানে বিশ্বরোড থেকে এজেন্ট কর্তৃপক্ষ সিএনজি যোগে পত্রিকার গাঁইট নাসিরনগর সদরে পৌঁছিয়ে দেন। পূর্বে যেখানে তিনি প্রায় একশ’ কিলোমিটার রাস্তা দৌড়িয়ে পত্রিকা বিলিয়ে রাতে বাড়ি ফিরতেন, সেখানে বর্তমানে মাত্র ৩০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে দুপুর ১২টার মধ্যেই বাড়ি ফিরতে পারেন। কৈশর পেরিয়ে যৌবন অতিক্রম করে স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েকে নিয়ে যখন একটু স্বস্তি পেলেন, তখনই আত্মীয়-স্বজনের আহ্বানে মেয়ে ভারতী রাণীকে ভৈরব বাজার ব্যবসায়ী অনন্ত পালের নিকট বিয়ে দিয়ে প্রশান্তি লাভ করেন।
কিন্তু বিধি বাম। করোনাকালে একমাত্র ছেলে পিয়াস (২৮) স্ট্রোক করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ২০২০ সালের ২০শে ২০২০ ছেলেকে হারিয়ে উপেন্দ্র কিংকর্তব্যবিমূঢ হয়ে পড়েন। পিতা হয়ে মৃত ছেলেকে কাঁধে বহনের জ্বালা উপেন্দ্র অনুভব করেছেন।
উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নসহ প্রায় সমগ্র নাসিরনগরেই পত্রিকা নিয়ে তার বিচরণ। হকারী জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, সময়ে-অসময়ে অট্টহাসি, পুত্র হারানোর বেদনা সবই জীবনের অংশ বলেই মেনে নিয়েছেন। তবে তিনি সুস্থ আছেন। শেষ জীবন পর্যন্ত এ পেশায় থেকে মানুষের সেবা করে যেতে চান বলে জানান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status