মত-মতান্তর
নেশার নাম ‘ভার্চুয়াল বিষ’!
ড. মাহফুজ পারভেজ
১৯ জুন ২০২১, শনিবার, ২:২৬ অপরাহ্ন
নেশার মতো ভার্চুয়াল বিষে আক্রান্ত তরুণ প্রজন্ম
'A strange darkness has come upon the world today', অনুবাদ করেছেন জীবনানন্দ দাশ বিশেষজ্ঞ মার্কিন পণ্ডিত ক্লিন্টন বি. সিলি। ক্লিন্টন রচিত গবেষণালব্ধ জীবনীগ্রন্থ ‘অনন্য জীবনানন্দ: জীবনানন্দের সাহিত্যিক জীবনী’ বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম একটি জীবনী, আরেকটি অবশ্যই গোলাম মুরশিদ প্রণীত মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনীগ্রন্থ ‘আশার ছলনে ভুলি’।
মূল কবিতায় জীবনানন্দ উল্লেখ করেছেন: ‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ/যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা/যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই-প্রীতি নেই-করুণার আলোড়ন নেই/পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।’
প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও পৃথিবী আবার আঁধার হয়ে এসেছে। তখন আঁধার ঘনিয়ে এসেছিল বিশ্বযুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে চরম অমানবিকা, হিংসা ও আত্মস্বার্থের প্লাবল্যে। এবার, এই ২০২০-২১ সময়কালে করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারির প্রকোপে পৃথিবীতে নেমে এসেছে ভীতি ও অনিশ্চয়তার অন্ধকার।
চলমান সঙ্কুল ও দিশাহীন পরিস্থিতির অন্ধকারাচ্ছন্ন আবহে অদ্ভুত এক নেশার দিকে ধেয়ে চলেছে তরুণ প্রজন্ম, যার নাম ‘অনলাইন গেমস’। এ যেন ভার্চুয়াল বিষ, নিত্য যা সেবন করছে কিশোর-তরুণ জনগোষ্ঠী। এমনিতে দেশে নানা ধরনের মাদকের কারণে তরুণ ও যুব সমাজ বিপথগামী। তদুপরি ভার্চুয়াল নেশায় উদ্বেগজনক হারে আক্রান্ত হচ্ছে আরও বহুজন।
বিশেষত গত দেড় বছরের করোনা মহামারিতে ঘরবন্দি সবাই। বন্ধ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। ঘুরে বেড়ানো বা মাঠে-ময়দানে খেলাধুলাও বন্ধ। এমনতাবস্থায়, ঘরে ঘরে বাড়ছে ভিডিও গেমস আর ভার্চুয়াল নানা অ্যাপে সময় কাটানোর হিড়িক, যা তীব্র নেশার মতো দিনরাত টেনে নিচ্ছে কিশোর, তরুণ, যুবকদের।
মূল্যবান সময় আর ক্যারিয়ারের বারোটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য ও চরিত্রের ভীষণ ক্ষতি করছে এই নেশা। ঘুম, খাওয়া ইত্যাদি স্বাভাবিক নিয়মে ঘটছে ব্যত্যয়। রাতের পর রাত জেগে এ নেশায় মত্ত থাকায় স্বাস্থ্যের বিপর্যয়ের পাশাপাশি চারিত্রিক অধঃপতন ও মানসিক ভারসাম্যহীনতা ঘটছে অনেকের ক্ষেত্রে। অনেকেই জড়িয়ে যাচ্ছে অপরাধমূলক তৎপরতায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক ও মনোগবেষক মোস্তফা কামাল যাত্রা এ প্রসঙ্গে আলাপকালে জানান, 'অতিরিক্ত ভার্চুয়াল গেমস নির্ভরশীলতা প্রবল মানসিক বৈকল্য ও ট্রমা ডেকে আনতে পারে। বাস্তবের সঙ্গে সম্পর্কহীন করতে পারে কাউকে কাউকে। বিশেষত, ভার্চুয়াল কল্পনার জগতের নানা বিষয়ে ও ইস্যুতে মোহভঙ্গ হলে তৈরি হতে পারে মানসিক চাপ ও বিপর্যয়।'
মোস্তফা কামাল যাত্রা আমাকে বলেছেন যে, ইতিমধ্যেই অনেকগুলো কেস তিনি পেয়েছেন, যেখানে কিশোর, তরুণ ও যুবক বয়সীরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক আচরণ করছে। তিনি বলেন, 'সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো স্কুল বন্ধ থাকায় শিশু বয়সের অনেকেই মোবাইল নির্ভর ভিডিও গেমস ও ভার্চুয়াল নানা খেলায় মত্ত হচ্ছে। মোবাইল না দিলে তাদের খাওয়ানো যাচ্ছে না এবং মোবাইল না পেলে তারা সহিংস আচরণ করছে।
‘বিপজ্জনক বিষয় হলো, এ নেশায় ডুবে গেলে উত্তরণ খুব সহজ নয়। স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এলেও নেশামুক্তি অনেকের না-ও হতে পারে। তখন চরম সঙ্কট দেখা দিতে পারে’, মন্তব্য করেন তিনি।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, সরকারের উচিত মোবাইলের নানা আপত্তিকর ও ক্ষতিকর সাইট নিয়ন্ত্রণ করা। অভিভাবকদের কর্তব্য হলো, এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া। বিশেষ করে তাদের সঙ্গে পিতামাতার বেশি সময় কাটানো এবং ঘরের মধ্যে নানা ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা করে তাদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সচল রাখা জরুরি। তাহলে প্রযুক্তি কবলিত ভার্চুয়াল জগতের গহ্বর থেকে শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক শ্রেণি রক্ষা পেতে পারে।
মূল কবিতায় জীবনানন্দ উল্লেখ করেছেন: ‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ/যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা/যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই-প্রীতি নেই-করুণার আলোড়ন নেই/পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।’
প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও পৃথিবী আবার আঁধার হয়ে এসেছে। তখন আঁধার ঘনিয়ে এসেছিল বিশ্বযুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে চরম অমানবিকা, হিংসা ও আত্মস্বার্থের প্লাবল্যে। এবার, এই ২০২০-২১ সময়কালে করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারির প্রকোপে পৃথিবীতে নেমে এসেছে ভীতি ও অনিশ্চয়তার অন্ধকার।
চলমান সঙ্কুল ও দিশাহীন পরিস্থিতির অন্ধকারাচ্ছন্ন আবহে অদ্ভুত এক নেশার দিকে ধেয়ে চলেছে তরুণ প্রজন্ম, যার নাম ‘অনলাইন গেমস’। এ যেন ভার্চুয়াল বিষ, নিত্য যা সেবন করছে কিশোর-তরুণ জনগোষ্ঠী। এমনিতে দেশে নানা ধরনের মাদকের কারণে তরুণ ও যুব সমাজ বিপথগামী। তদুপরি ভার্চুয়াল নেশায় উদ্বেগজনক হারে আক্রান্ত হচ্ছে আরও বহুজন।
বিশেষত গত দেড় বছরের করোনা মহামারিতে ঘরবন্দি সবাই। বন্ধ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। ঘুরে বেড়ানো বা মাঠে-ময়দানে খেলাধুলাও বন্ধ। এমনতাবস্থায়, ঘরে ঘরে বাড়ছে ভিডিও গেমস আর ভার্চুয়াল নানা অ্যাপে সময় কাটানোর হিড়িক, যা তীব্র নেশার মতো দিনরাত টেনে নিচ্ছে কিশোর, তরুণ, যুবকদের।
মূল্যবান সময় আর ক্যারিয়ারের বারোটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য ও চরিত্রের ভীষণ ক্ষতি করছে এই নেশা। ঘুম, খাওয়া ইত্যাদি স্বাভাবিক নিয়মে ঘটছে ব্যত্যয়। রাতের পর রাত জেগে এ নেশায় মত্ত থাকায় স্বাস্থ্যের বিপর্যয়ের পাশাপাশি চারিত্রিক অধঃপতন ও মানসিক ভারসাম্যহীনতা ঘটছে অনেকের ক্ষেত্রে। অনেকেই জড়িয়ে যাচ্ছে অপরাধমূলক তৎপরতায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক ও মনোগবেষক মোস্তফা কামাল যাত্রা এ প্রসঙ্গে আলাপকালে জানান, 'অতিরিক্ত ভার্চুয়াল গেমস নির্ভরশীলতা প্রবল মানসিক বৈকল্য ও ট্রমা ডেকে আনতে পারে। বাস্তবের সঙ্গে সম্পর্কহীন করতে পারে কাউকে কাউকে। বিশেষত, ভার্চুয়াল কল্পনার জগতের নানা বিষয়ে ও ইস্যুতে মোহভঙ্গ হলে তৈরি হতে পারে মানসিক চাপ ও বিপর্যয়।'
মোস্তফা কামাল যাত্রা আমাকে বলেছেন যে, ইতিমধ্যেই অনেকগুলো কেস তিনি পেয়েছেন, যেখানে কিশোর, তরুণ ও যুবক বয়সীরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক আচরণ করছে। তিনি বলেন, 'সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো স্কুল বন্ধ থাকায় শিশু বয়সের অনেকেই মোবাইল নির্ভর ভিডিও গেমস ও ভার্চুয়াল নানা খেলায় মত্ত হচ্ছে। মোবাইল না দিলে তাদের খাওয়ানো যাচ্ছে না এবং মোবাইল না পেলে তারা সহিংস আচরণ করছে।
‘বিপজ্জনক বিষয় হলো, এ নেশায় ডুবে গেলে উত্তরণ খুব সহজ নয়। স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এলেও নেশামুক্তি অনেকের না-ও হতে পারে। তখন চরম সঙ্কট দেখা দিতে পারে’, মন্তব্য করেন তিনি।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, সরকারের উচিত মোবাইলের নানা আপত্তিকর ও ক্ষতিকর সাইট নিয়ন্ত্রণ করা। অভিভাবকদের কর্তব্য হলো, এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া। বিশেষ করে তাদের সঙ্গে পিতামাতার বেশি সময় কাটানো এবং ঘরের মধ্যে নানা ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা করে তাদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সচল রাখা জরুরি। তাহলে প্রযুক্তি কবলিত ভার্চুয়াল জগতের গহ্বর থেকে শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক শ্রেণি রক্ষা পেতে পারে।