শেষের পাতা

ঢাবি’র সংবাদ বিজ্ঞপ্তি নানা প্রশ্ন

পিয়াস সরকার

১৯ জুন ২০২১, শনিবার, ৯:০২ অপরাহ্ন

কিছু অসাধুচক্র কোনো অপ-তথ্যকে বারবার ব্যবহার করে সেটিকে তথ্যে পরিণত করতে চায়। কেউ যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সমালোচনার রীতিনীতি ও মূল্যবোধ উপেক্ষা করে ব্যক্তিগত আক্রমণ বা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মানহানি ঘটায়, তাহলে দেশের আইন যে তার প্রতিকার দেয়, সে বিষয়েও কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। সমপ্রতি একটি শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাকালীন ভূমিকার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে লেখা এক প্রতিবেদনে তোলা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমনটি জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এই বিজ্ঞপ্তির পরে আলোচনা সমালোচনা ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করছেন। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে টিএসসিতে নবীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাস্যরসে ক্যাফেটেরিয়ার সাধারণ, স্বল্পমূল্যের খাবার মেন্যু ও সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধার অবারিত সেবা কার্যক্রমের কথাগুলো বলা হয়। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, অক্সফোর্ড বা জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মৌলিক গবেষণা পরিচালনা করে টিকা বা ওষুধ আবিষ্কার বা টেস্টিং কিট উদ্ভাবন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারেনি। তবে এর কারণ বোধ করি অনেকেই জানেন। গঠনমূলক সমালোচনা সহ্য করার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শ্রদ্ধাশীল। একই সঙ্গে কেউ যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সমালোচনার রীতিনীতি ও মূল্যবোধ উপেক্ষা করে ব্যক্তিগত আক্রমণ বা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মানহানি ঘটায়, তাহলে দেশের আইন যে তার প্রতিকার দেয়, সে বিষয়েও কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং গণমাধ্যমেরও আছে। তবে বিষয়টি এরকম হবে আমি আশা করিনি।

বিজ্ঞপ্তিটি নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ। তিনি তার ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন, যে বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার উপাচার্য সামান্য ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ সহ্য করতে পারে না, সেই প্রতিষ্ঠান কী করে শেখাবে সহিষ্ণুতা এবং মতপ্রকাশের অধিকার? একটি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যদি স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকারকেই না সহ্য করতে পারে তবে বিশ্ববিদ্যালয় শেখাবে কী?
তিনি আরও বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়, আসলে যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও, কেবল ক্লাসরুমের চার দেয়ালের মধ্যে শেখায় না। সবচেয়ে বড় কথা, নাগরিকের করের অর্থে চলা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে নাগরিকরা কিছু বললে তার জন্য আইনি ব্যবস্থার হুমকি তো পাকিস্তানি আমলে ষাটের দশকেও শোনা যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের কি কিছুই অর্জন নেই? অবশ্যই আছে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত বলে দিচ্ছে যে, কর্তৃপক্ষের অবস্থান কী। কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন, যেন ভাবমূর্তি একটা বায়বীয় বিষয়। ভাবমূর্তি তৈরি হয় আচরণ দিয়ে, কর্মকাণ্ড দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হলগুলোতে কথিত গণরুমে শিক্ষার্থীরা অস্বাস্থ্যকর ও অমানবিকভাবে জীবনযাপন করেন, তাদের ওপরে নির্যাতনের ঘটনার কথা জানা যায়, তাদের বাধ্য করা হয় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের হয়ে কাজ করতে, এই রকমভাবে প্রাণসংহার হয় শিক্ষার্থীর- এসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি কোথায় যায় তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্বেগ নেই।

উদ্বেগ নেই এই নিয়েও যে, বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় বরাদ্দ খুব সামান্য। মোট ব্যয়ের ৫ শতাংশের মতো। আর সেই বরাদ্দ করা অর্থও ব্যয় করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সক্ষম হয় না। ২০১৯-২০ সালে বরাদ্দ করা ৪০ কোটির মধ্যে ২৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। অথচ ২০১৯-২০২০ সালে বরাদ্দ আগের বছরের তুলনায় কমানো হয়েছিল। এগুলোই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি তৈরি করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের যতটা না সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে তার থেকে বেশি সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক গোলাম রহমান। তিনি বলেন, সবকিছুই কেন ব্যক্তিগতভাবে নিতে হবে? একটা পাবলিক ফিগারের স্থানে থাকলে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়। দেশে-বিদেশে যারা পাবলিক ফিগার তাদের নিয়ে সমালোচনা, ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ হয়। এই বিষয়টি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বরং আরও সামালোচনার জন্ম দিলেন। যতটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচনা পূর্বে হয়েছে এর থেকে আরও বেশি সমালোচনার জন্ম হলো।
ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, একটি কথাই বলবো বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status