বাংলারজমিন

শাল্লায় গৃহনির্মাণে অনিয়ম

৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা ফেরত দিলেন ইউএনও

শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

১৭ জুন ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৮:০২ অপরাহ্ন

 মুজিববর্ষে গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের গৃহ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক। গত ৭ই জুন ওই নোটিশ দেয়া হয়। এর আগে দরিদ্র গৃহহীনদের দেয়া পরিবহন খরচের ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গত ৬ই জুন ফেরত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। শাল্লার ১৪৩৫ গৃহহীন পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার গৃহনির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। গেল জানুয়ারি মাসেই এই উপজেলার ঘর প্রদানে স্থানীয়ভাবে অনিয়মের অভিযোগও ওঠে। ঘরের মেঝেতে ইট না দিয়ে যেনতেনভাবে বালু-সিমেন্টের মিশ্রণের মসলা দিয়ে ফ্লোর করে দেয়া, নিম্নমানের ইট, বালু, পাথর ব্যবহার, নির্মাণের মালামাল পরিবহনের টাকা গৃহহীনদের ওপর চাপিয়ে দেয়া, মিস্ত্রির টাকা গৃহহীনদের দিতে বাধ্য করাসহ নানাভাবে অসহায় মানুষজনের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় সংবাদ  প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, ৩ জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও ২০ জন ম্যাজিস্ট্রেটকে সঙ্গে নিয়ে শাল্লায় তদন্তে যান। একাধিক দলে ভাগ হয়ে নির্মাণাধীন গৃহহীনদের ঘর সরজমিন তদন্ত করেন। ২০শে ফেব্রুয়ারি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণ ২৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট ওখানকার নির্মাণাধীন প্রত্যেক ঘরে ঘরে যান। এরপর আরও দুই দফায় জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ ২৪ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিনব্যাপী তদন্ত করেন। তদন্তকালে গৃহনির্মাণের দায়িত্বে থাকা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মামুনুর রহমানকে ১৮ই ফেব্রুয়ারি স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। তদন্ত শেষে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন যেসব ঘরে ইট সলিং না করে মেঝে পাকা করা হয়েছে, সেগুলোতে ইট সলিং করে মেঝে পাকা করার নির্দেশ দেন। পরিবহন খরচ এবং মিস্ত্রি খরচের টাকা দরিদ্র মানুষজন যারা নিজেরা দিয়েছে, ওই টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী শাল্লার অনিয়ম হওয়া ঘরগুলোতে এখন পুনরায় কাজ চলছে। উপজেলার নারকিলা গ্রামের নজরুল ইসলাম গত মঙ্গলবার বিকালে এ প্রতিবেদককে বললেন, তাদের ঘরে মেঝের বালু-সিমেন্টের আস্তরণ তুলে ইট সলিং করে ঢালাই করে দেয়া হচ্ছে। পরিবহন ও মিস্ত্রি খরচের জন্য যে টাকা তারা দিয়েছিলেন, সেই ৭ হাজার টাকা স্থানীয় ইউনিয় পরিষদ সদস্য এলাছ মিয়া তাদেরকে এনে দিয়েছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য এলাছ মিয়া বললেন, আমি টাকা দেবো কোথা থেকে, আমি হুকুম পালন করি, আগে যেভাবে বলা হয়েছিল সেভাবে করেছিলাম, এখন ইউএনও সাহেবসহ কর্মকর্তারা যেভাবে বলছেন নারকিলা ও আশপাশের গ্রামের ১৯ গৃহহীনের ঘরে সেভাবে কাজ করে দিচ্ছি। স্যারদের কথামতোই কাজ করছি। শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মুক্তাদীর হোসেন বললেন, গৃহহীনদের ঘর নির্মাণে অন্যান্য উপজেলা এবং শাল্লার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। অন্য উপজেলায় ঠিকাদাররা গৃহনির্মাণ করেছে। এই উপজেলা প্রত্যন্ত হওয়ায় এখানে বেশিরভাগ ঘর উপকারভোগীরা করেছে। পরিবহনের বরাদ্দ শুরুতে আসেনি, এজন্য দিতে পারিনি, এখন এসেছে। ১৪৩৫ ঘরের প্রত্যেককেই ৪ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকাই গেল ৬ই জুন গৃহহীনদের দিয়েছি আমরা। জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমি যোগদানের পরই শাল্লায় গৃহনির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। আমরা কয়েক দফায় সরজমিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে তদন্ত করেছি। আমাদের চোখে নানাবিধ ত্রুটি বিচ্যুতি ধরা পড়েছে। সেগুলো সংশোধন করিয়েছি, এখনো সংশোধনের কাজ চলছে। শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা প্রদানে বাধ্য করা হয়েছে। তাকে ৭ই জুন শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাব পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা প্রশাসক জানান, প্রথম দফার দেয়া ৩৯০৮টি ঘরের মধ্যে ৩৫০০ ঘরের কাজ শেষ। বেশিরভাগ ঘরেই উঠেছেন গৃহহীনরা। দ্বিতীয় দফায় আগামী ২০শে জুন ২০৯টি ঘরের চাবি প্রদান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status