কলকাতা কথকতা

কলকাতা কথকতা

তরুণীকে বিবস্ত্র করে মুণ্ডিত মস্তকে ঘোরানো হলো গ্রাম

জয়ন্ত চক্রবর্তী, কলকাতা

১৬ জুন ২০২১, বুধবার, ১০:০০ পূর্বাহ্ন

প্রগতি নাকি এই বাংলায়, এই ভারতে খামের গায়ে ডাকটিকিটের মতো। এই নিদারুণ প্রগতির হদিস মিলল পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ারের একটি গ্রামে। পশ্চিম চ্যাংমারিতে এক আদিবাসী তরুণীকে মুণ্ডিত মস্তকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে ঘোরানো হলো গ্রামে। তরুণীটির অপরাধ? অবশ্যই পরকীয়া করার। স্বামী থাকতে অন্য এক যুবকের সঙ্গে পালিয়ে ৬ মাস সহবাস করে এই তরুণী। ৬ মাস পরে বোধোদয় হলে সে ফিরে আসে স্বামীর ঘরে। প্রথমে অভিমান হলেও ভালোবাসার জয় হয় অবশেষে। স্বামী ঘরে ফিরিয়ে নেয় তরুণীকে। অতীত ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করে দম্পতি। কিন্তু, গ্রামের মোড়লরা এই অবিচার মানতে নারাজ। এ কেমন অনাচার! মেয়ে পরপুরুষের বিছানায় উঠেছে, আবার সুখে সংসার করছে। গ্রামের একমাত্র বটগাছের নিচে সালিশি সভা বসলো। আদিবাসী তরুণীর সম্পর্কে মোড়লদের সিদ্ধান্ত হলো, এই কুলটা রমণীকে মাথা মুড়িয়ে বিবস্ত্র করে গ্রামে ঘোরানো হবে। যেমন সিদ্ধান্ত, তেমন কাজ। ডেকে পাঠানো হলো নরসুন্দরকে। কাঁচি চালিয়ে কুচকুচ করে চুল কেটে দিলো সে ওই আদিবাসী নারীর। এবার বস্ত্রহরণের পালা। গ্রামের মোড়লদের কোনো লোলুপ হাত এই কাজ করেছিল কিনা জানা নেই। বিবস্ত্র, মুণ্ডিতমস্তক, লজ্জায় অবনত মস্তকে ওই তরুণীকে ঘোরানো হলো গ্রামে।

ব্যভিচারিকে শাস্তি দিয়ে পুলকিত মোড়লদের স্বেদ, কম্পন অনুভূত হয়েছিল কিনা জানা নেই। কিন্তু যা জানা আছে তা হলো স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে সোজা আলিপুরদুয়ার থানায় তরুণীর লিখিত এফআইআর-এর কাহিনী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নারী যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সেই রাজ্যে নারীর এই অবদমন, এই অপমান সহ্য করেনি পুলিশও। পশ্চিম চ্যাংমারি গ্রামে হানা দিয়ে তিন মোড়ল ভবেশ টুডু, সুজিত লাকরা ও দীপন টোগগোকে তারা আগে গ্রেপ্তার করে। তারপর আরও ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের ১১ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়েছে। এই কাহিনী পশ্চিমবঙ্গের একটি গ্রামের। যে পশ্চিমবঙ্গে সাক্ষরতার হার বাড়ছে, ফাইভ জি পরিষেবা গ্রামেও আসছে, কন্যাশ্রী প্রকল্প আশার আলো জ্বালাচ্ছে। আবার সেই গ্রামেই অসতী হওয়ার জন্য নগ্ন করে এই মানসিক অত্যাচার। কি নিদারুণ বৈপরীত্য!
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status