প্রথম পাতা

রহস্যঘেরা অমির কর্মকাণ্ড

নাসিরকে নিয়ে বিব্রত স্বজনরা

মরিয়ম চম্পা

১৬ জুন ২০২১, বুধবার, ৯:৫৬ অপরাহ্ন

নাসির ইউ মাহমুদ। পুরো নাম নাসির উদ্দিন মাহমুদ। দেশের প্রথম শ্রেণির ঠিকাদারদের একজন। ব্যক্তিগত জীবনে দুই সন্তানের জনক। বড় ছেলে তারই নিজস্ব আবাসন প্রকল্পের পরিচালক। রাজধানীর উত্তরাসহ অভিজাত এলাকাতে তার একাধিক নিজস্ব ফ্ল্যাট এবং বাড়ি রয়েছে। কুঞ্জ ডেভেলপারস লিমিটেড নামে আবাসন ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তিনি। তার প্রতিষ্ঠিত আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মাহমুদ বিল্ডার্স অ্যান্ড এসোসিয়েট লিমিটেড’। ছিলেন একাধিকবার উত্তরা ক্লাবের সভাপতি। বরিশালের ঝালকাঠি সদর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের চেয়ারম্যান বাড়িতে নাসিরের জন্ম। তার বাবা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। চাচা বেলায়েত হোসেন সদর পৌরসভায় বর্তমান ক্ষমতাসীন দল এবং বিএনপি’র টিকিটে দুই দফা নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। সূত্র জানায়, নাসির উদ্দিন মাহমুদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তিনি মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগে এমএসসি ডিগ্রি নেয়ার পাশাপাশি এমবিএ করেন। তৎকালীন জাসদের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন। ছাত্রাবস্থায় এরশাদের শাসনামলে তিনি জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন ‘নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের’ নেতা ছিলেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য। এরশাদের সময় জাতীয় পার্টিতে যোগ দেয়ায় তার ঠিকাদারি ব্যবসা প্রসার লাভ করে। দেশের সরকারি, আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদার হিসেবে পরবর্তীতে তার উত্থান ঘটে। ১৯৯৩ সালে যুক্ত হন আবাসন ব্যবসায়। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া অভিনয়শিল্পী পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগের কারণে সবার নজর এখন স্বল্প পরিচিত এই ব্যবসায়ীর দিকে। কুঞ্জ ডেভেলপারস লিমিডেটের ওয়েবসাইটের দেয়া তথ্য বলছে, নাসির উদ্দিন মাহমুদ ১৯৮১-৮২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে তিনি ওই আবাসিক হলের স্টুডেন্টস অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তিনি ঢাকা ফার্স্ট ডিভিশন ফুটবল লীগের সাবেক ফুটবলার ছিলেন। পরবর্তীতে রাজধানীর উত্তরা ক্লাব সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দেন।
সূত্র জানায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার নিজস্ব তত্ত্বাবধায়নে অনেক আবাসন প্রকল্প রয়েছে। পিডব্লিউডি ও এলজিইডিসহ দেশের সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও ক্রয়কাজে ঠিকাদার হিসেবে সেবা সরবরাহ করেন তিনি। তার গঠন করা কুঞ্জ ডেভেলপারস লিমিটেড নামে আবাসন প্রতিষ্ঠানটি দেশে আবাসন ব্যবসায়ী মালিকদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশনের (রিহ্যাব) সদস্যভুক্ত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০১ সালে জাতীয় পার্টি ভেঙে গেলে তিনি নাজিউর রহমান মঞ্জুরের বাংলাদেশের জাতীয় পার্টি (বিজেপি) অংশে যোগ দেন। পরবর্তীতে যে দলটি বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের শরিক হয়েছিল। এদিকে অভিযুক্ত নাসিরের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু এবং ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা রীতিমতো বিব্রতবোধ করেন। ঘনিষ্ঠ একজন জানান, তাকে আমরা পরম শ্রদ্ধেয় বলেই জানি। এই ঘটনা জানার পর থেকে আমরা অনেকটাই বিব্রত এবং হতাশ। এর আগে তার বিষয়ে এরকম কোনো অভিযোগ আমরা শুনিনি। তাছাড়া তিনি কেন যে এটা করতে গেলেন বুঝতে পারছি না। নাসির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকেন। পারিবারিক জীবন যাপন করেন। তার ক্লাব কর্মকাণ্ডের বিষয়ে পরিবারের সবাই জানেন। তবে সর্বশেষ ঘটনাটি নিয়ে তার স্বজনরা বিব্রত বোধ করছেন। বরিশালে নিজ এলাকার অনেকে নাসিরের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কারণ তারা তাকে সজ্জন এবং ভালো মানুষ হিসেবে জানেন।
এদিকে গ্রেপ্তার তুহিন সিদ্দিকী অমির কর্মকাণ্ড অনেকটা রহস্যে ঘেরা। তাকে অনেকে ব্যবসায়ী হিসেবে চেনেন। তিনি প্রভাবশালীদের নারী সঙ্গের ব্যবস্থা করে দেন- এমন আলোচনাও আছে। রাজধানীর উত্তরার আশকোনাতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করে তার পরিবার। অভিনেত্রী পরীর পোশাক ডিজাইনার জিমির বন্ধু অমি। ঘটনার দিন অমিই মিথ্যা কথা বলে বোট ক্লাবে নিয়ে যান পরীকে। তিনি কেন তাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন তা এখনো স্পষ্ট নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এক সময় ঢাকা মহানগর যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অমি। অমির বাবা তোফাজ্জল হোসেনও বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারা জনশক্তি রপ্তানির ব্যবসা করেন। সূত্র জানায়, অমি মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। এক সময় অমির বাবা তোফাজ্জলের কিছুই ছিল না।
সূত্র জানায়, অমিদের আশকোনায় দেড় বিঘা জমির ওপর সিঙ্গাপুর ট্রেনিং স্কুল নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া আশকোনা হুদা মসজিদ রোডে ৫ কাঠার জমির ওপর রয়েছে আলিশান বাড়ি। এ বাড়ির সংলগ্ন ৫ কাঠা জমি, দক্ষিণখানের দৌবাইদা এলাকায় দেড় বিঘার ওপর সিঙ্গাপুর নামে আরেকটি ট্রেনিং স্কুল, উত্তরখানের হেলান মার্কেট সংলগ্ন বিশাল গেস্ট হাউজ, টাঈাইলের করটিয়ার বাইপাসে অট্টালিকা, রেস্টুরেন্ট, মাদ্রাসা, হাসপাতাল ও ঢাকার উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে দুটি নিজস্ব ফ্ল্যাট রয়েছে। গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টার্গেটকৃত নারীদের রাজধানীর বিভিন্ন পার্টি সেন্টারে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গ দিতে নিয়ে যেতেন অমি। অমির নেতৃত্বে চলছে রাজধানীর একাধিক পার্টি সেন্টার। পরীমনি কাণ্ডে অভিযুক্ত নাসিরের সঙ্গে একাধিক ব্যবসা রয়েছে অমির। বিদেশেও অনেক স্থানে যাতায়াত রয়েছে অমির। পরীমনির ঘটনায় অমির উত্তরার বাসা থেকেই নাসির ও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখান থেকে আরও তিন নারীকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status