বিশ্বজমিন
বলিউডের বিরুদ্ধে মোদি সরকারের যুদ্ধ
অতিশ তাসির
১৫ জুন ২০২১, মঙ্গলবার, ১২:২১ অপরাহ্ন
ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প থেকে প্রতি বছর ২০০০-এর বেশি সিনেমা মুক্তি পায়। এর মধ্যে হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্প অর্থাৎ বলিউড থেকেই মুক্তি পায় হলিউডের সমপরিমাণ সিনেমা। ভারতের জাতীয় মিথ সৃষ্টির পেছনে বলিউডই মূলত প্রধান ভূমিকা রেখেছে। এ শিল্পের চলচ্চিত্রগুলো সাধারণত নাচ-গানে ভরা থাকে। তবে এই সিনেমাগুলোর মূল ক্ষমতা হচ্ছে নারী অধিকার, সমকামী অধিকার, আন্তধর্মীয় বিয়ের মতো গুরুতর সামাজিক ইস্যুগুলোকে বিনোদনের মাধ্যমে তুলে ধরা। এক হিসেবে এই সিনেমাগুলো ভারতের বহুত্ববাদেরই চিত্রায়ন।
তবে ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে বলিউডও টার্গেটে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন হিন্দু-জাতীয়তাবাদি ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এ শিল্পের স্বাধীনতায় শেকল টানার চেষ্টা করছে। এর শিকার হচ্ছেন বিশেষ করে মুসলিমরা। পরিচালক, প্রযোজকদের বিরুদ্ধে নানা তদন্ত চালানো হচ্ছে, অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তাদের হয়রানি করা হচ্ছে, ভয় দেখানো হচ্ছে। পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার ভয়ে অনেকে এসব হয়রানির বিরুদ্ধে নীরব রয়েছেন। করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিতে সরকারের চরম ব্যর্থতা নিয়েও আওয়াজ তোলেননি বেশিরভাগ শিল্পী।
বলিউডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এক নারীর ভাষ্যমতে, ‘সবাই প্রচণ্ড ভয়ে আছে ও নজরের বাইরে থাকতে চাইছে। এ সরকার অত্যন্ত প্রতিহিংসাপরায়ণ।’
সম্প্রতি সরকারের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত বলিউডের সেরা এক পরিচালক ও অভিনেতার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে কর কর্তৃপক্ষ। এ অভিযানগুলো রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। একই সময়ে, অ্যামাজনের এক নির্বাহীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। তান্ডব নামে এক টিভি সিরিজে হিন্দু দেবতা শিবের একটি আপত্তিকর দৃশ্য নিয়ে এ মামলা করা হয়। সিরিজটির পরিচালক ওই দৃশ্যের জন্য জনসম্মুখে ক্ষমা চেয়েছেন। দৃশ্যটিও সিরিজ থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এমনকি প্রাথমিকভাবে সুপ্রিম কোর্ট তাদের মামলার সময় সুরক্ষা দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। অবশ্য পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে আদালত। একটি বড় স্ট্রিমিং সেবার এক নির্বাহী এ বিষয়ে জানান, মূল সমস্যাটা হচ্ছে সিরিজটির পরিচালক ও প্রধান অভিনেতা হচ্ছেন মুসলিম।
সরকারি রোষানলের শিকার হয়েছে বোম্বে বেগামস নামে নেটফ্লিক্সের একটি টিভি সিরিজও। ভারতের শিশু অধিকার রক্ষা বিষয়ক জাতীয় কমিশন নেটফ্লিক্সকে সিরিজটি সরিতে ফেলতেও আহ্বান জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, ‘এ সিরিজ শিশুদের মনকে কলুষিত করবে।’ তবে সিরিজটি সরানোর আহ্বানের পেছনে আরো বিশ্বাসযোগ্য কারণ হচ্ছে, এতে আন্তধর্মীয় সম্পর্ক ও সমকামিতাকে স্বাভাবিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
বলিউডে মুসলিমরা বরাবরই অন্যান্য ক্ষেত্রের চেয়ে তুলনামূলক বেশি প্রভাবশালী ছিল। শাহরুখ খান, সালমান খান ও আমির খানের মতো অভিনেতারা গত ৩০ বছর ধরে ভারতীয় সিনেমা জগতের খ্যাতির শীর্ষে রয়েছেন। বলিউডের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অর্থ আয় করা ১০টি ছবির ছয়টিতেই কোনো না কোনো ‘খান’ অভিনয় করেছেন। এ শিল্পের সবচেয়ে বড় বড় কিছু স্টুডিওর মালিকরাও মুসলিম।
ভারতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে সবচেয়ে বেশি অনুসারী রয়েছে মোদীর- ৬.৮৯ কোটি। তবে তালিকার উপরের দিকেই রয়েছেন দুই মসলিম অভিনেতা শাহরুখ খান ও সালমান খান। উভয়েরই ৪ কোটির বেশি অনুসারী টুইটারে। অন্যদিকে ৪.৫৬কোটি অনুসারী নিয়ে মোদির পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন বলিউডের কিংবদন্তী তারকা অমিতাভ বচ্চন। তার ক্যারিয়ার বলিউডে মুসলিমদের সম্পৃক্ততার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সত্তুরের দশকে বিজয় নামে সমাজের অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এক যুবকের চরিত্রে অভিনয় করে বড় পর্দায় বিখ্যাত হয়ে উঠেন বচ্চন। তার ওই চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন দুইজন মুসলিম চিত্রনাট্যকার। হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের উপর ভারতের টিকে থাকা নির্ভর করে, এমন গল্পের অনেক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। বচ্চনের বাবা ছিলেন একজন হিন্দিভাষী কবি। তিনি বেড়ে উঠেন উর্দু ও পার্সিয়ান কবিতায় ভরা এক দুনিয়ায়। বলিউডের প্রাথমিক দিনগুলো ছিল এমন মিশ্র সংস্কৃতিতে ভরা। এটাই বলিউডের ডিএনএ।
কিন্তু বিজেপির উৎপত্তির ইতিহাস কিছুটা ভিন্ন। গত শতকের আশির দশকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর রাজনৈতিক শাখা হিসেবে যাত্রা শুরু করে দলটি। আরএসএস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯২৫ সালে। তৎকালীন সময়ে ইউরোপে ফ্যাসিবাদী আন্দোলন জোরদার হচ্ছিল। সংগঠনটির প্রথম দিককার নেতারা নাৎসি জার্মানির প্রতি ব্যাপক শ্রদ্ধা পোষণ করতো। এর প্রথম দিকের নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এম এস গোলওয়াকার। সম্প্রতি মোদি সরকার টুইটারে ঘোষণা দিয়ে তার জন্মদিন উদযাপন করেছে। ১৯৩৯ সালে গোলওয়াকার লিখেছিলেন, জাত ও সংস্কৃতির বিশুদ্ধতা রক্ষায় জার্মানির চেষ্টা থেকে ভারতের শেখার রয়েছে।
আরএসএস সাম্প্রতিক সময়ে শুরুর দিকের কুরুচিপূর্ণ কর্মকাণ্ড ঝাড়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু মূল বিষয়গুলো একই থেকে গেছে। এখনো সংগঠনটি জাতের বিশুদ্ধতা রক্ষায় জোর দিয়ে যাচ্ছে। আন্তধর্ম বিয়ের ঘোরবিরোধীতা করে আসছে। এ নীতি অনুসরণ করে, বিজেপি নিয়ন্ত্রিত বেশকিছু রাজ্যে আন্তধর্ম বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও এমন বিয়ে বলিউডে প্রায়ই দেখা যায়। তিন খানের দুই জনের স্ত্রী’ই হিন্দু (আরেকজন বিয়েই করেননি)।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির প্রথম দফায় বিজেপির আইটি সেল হিসেবে পরিচিত অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সার ও অন্যান্য কর্মীরা বলিউডের মুসলিমদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। ২০১৫ সালে আমির খান ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বাড়ন্ত অসহনশীলতা নিয়ে পোস্ট দেন। তাতে বলেন, তার স্ত্রী একবার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কথাও বলেছেন। এই পোস্ট দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমিরকে অসংখ্য ঘৃণ্য ট্রোলের শিকার হতে হয়। একই বছর বলিউডের আরেক শীর্ষ তারকা সাইফ আলি খান ও তার হিন্দু স্ত্রী কারিনা কাপুর তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম দেন। মুসলিম শাসক তাইমুরের নামে সন্তানের নামকরণ করেন। এজন্যও অনলাইনে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন তারা।
২০১৮ সালে বলিউডের শীর্ষ অভিনেত্রী দিপীকা পাডুকোন একটি ঐতিহাসিক ছবিতে অভিনয় করেন। গুঞ্জন ছড়ায় যে, ছবিটিতে এক হিন্দু রানী ও মুসলিম রাজার মধ্যে অন্তরঙ্গ দৃশ্য রয়েছে। এ গুঞ্জনের মধ্যে হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা ঘোষণা দেন, কেউ যদি পাডুকোনের নাক কাটতে পারে তাহলে তাদের পুরস্কৃত করা হবে।
ওই বছরই বলিউডের অভিজাতদের সঙ্গে এক ছবি তোলার সেশন করেন মোদি। সেটি অনেকটা তোষামোদি বা এই শিল্পে সুযোগ তৈরি করার চেষ্টার মতো ছিল। ওই ছবি তোলার ব্যবস্থা করেন মাহাবীর জৈন। সে সময় তিনি বলিউডে তেমন পরিচিত ছিলেন না। তবে কীভাবে যেন, কারান জোহারসহ এ শিল্পের বড় কিছু ব্যক্তিতে একাট্টা করে ব্যক্তিগত বিমানে চড়িয়ে দিল্লিতে মোদির সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে যান তিনি। ওই তারকাদের মোদির সঙ্গে সেলফি পোস্ট দিতে উৎসাহিত করা হয়। তবে তাদের মধ্যে কোনো মুসলিম তারকা ছিলেন না। এর বার্তা পরিষ্কার ছিল: মোদি নতুন এক বলিউড চান, যেখানে মুসলিমরা থাকবে না। এ ঘটনার কিছুদিন পর থেকেই জোহার সহ বলিউডের বেশকিছু বড় বড় প্রযোজক ও পরিচালকদের সঙ্গে মিলে জাতীয়তাবাদী থিমের চলচ্চিত্র তৈরিতে লেগে যান জৈন।
২০১৯ সালে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে নিজের সাংস্কৃতিক এজেন্ডা আরো জোরদার করার সুযোগ পান মোদি। গত বছরের গ্রীষ্মে আত্মহত্যা করেন ভারতের প্রতিভাবান তরুণ তারকা সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যাকে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে মোদি সরকার। স্বজনপ্রীতিতে ভরপুর শিল্পে নিজের দক্ষতায় বেড়ে উঠার পরিচিতি ছিল রাজপুতের। মানসিক অসুস্থতায়ও ভুগতেন তিনি। তার পরিচিত অনেকে জানিয়েছেন, মাদকাসক্ত ছিলেন এই অভিনেতা।
রাজপুতের আত্মহত্যা বিয়োগান্তক এক ঘটনা ছিল। কিন্তু নতজানু গণমাধ্যমের হাতে তার মৃত্যু ঘিরে পুরো চলচ্চিত্র শিল্পকেই বিচারের কাঠগড়ায় উঠিয়ে দেওয়া হয়। রাজপুতের জন্ম বিহারে। সে সময় রাজ্যটিতে নির্বাচন ঘনিয়ে আসছিল। বিজেপি নির্বাচনি প্রচারণায় তার আত্মহত্যাকে চলচ্চিত্র শিল্পের অভিজাত ও স্বজনপ্রেমীদের হাতে তার হত্যা হিসেবে তুলে ধরে। রাজ্যজুড়ে তার পোস্টার ছাপানো হয়। সেগুলোয় লেখা হয়, ‘আমরা ভুলিনি। আমরা তাদের ভুলতে দেবো না।’
রাজপুতের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীকে তার আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ এনে কারাগারে পাঠানো হয়। কয়েকদিনের মধ্যেই ভারতের মাদক নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো রিয়ার বাড়িসহ চলচ্চিত্র শিল্পের শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের বাড়িতে মাদকের সন্ধানে অভিযান চালায়। তবে আদতে এ অভিযান ছিল তাদের ভয় দেখানো ও সম্মানহানির জন্য।
রাজপুতের আত্মহত্যাকে বলিউডের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বগুলো তীব্র করে তুলতে ব্যবহার করেন মোদি। এ শিল্পের উপর সাংস্কৃতিক যুদ্ধ চালু করেন। আর এ যুদ্ধে বিশেষভাবে নেতৃত্ব দেন একজন অভিনেত্রী। তার নাম কঙ্গনা রানাউত।
কঙ্গনা রানাউতের হোয়াটসঅ্যাপ প্রোফাইল ছবিতে তাকে নীল শাড়ি পরে শিবের কাছে প্রার্থনা করতে দেখা যায়। ২০১৯ সালে কাশ্মীরা পাকিস্তান-ভিত্তিক চরমপন্থী একটি দল এক আত্মঘাতী হামলা চালায়। এ ঘটনার পর পাকিস্তানের ধ্বংস চেয়ে প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। বলেন, তার ইচ্ছে করছে সীমান্তে গিয়ে পাকিস্তানিদের হত্যা করতে। পরবর্তীতে অবশ্য সরকারি নির্বাহী কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের সামনে নিজের ওই মন্তব্যের পক্ষে সাফাই গান তিনি। আরেকবার তিনি বলেন, ভারতের চলচ্চিত্র শিল্প ‘জাতীয়তাবাদ-বিরোধী ব্যক্তি দিয়ে ভরে গেছে যারা নানাভাবে শত্রুদের মানসিক বল জোরদার করে করে।’ বিভিন্ন মন্তব্যে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার কারণে সম্প্রতি টুইটার থেকে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত বছর, অজ্ঞাত-অস্পষ্ট হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। নানা সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, এই মাত্রার নিরাপত্তা মূলত সরকার বা নাগরিক সমাজে উচ্চ পদধারীদের জন্য বরাদ্দ থাকে।
বলিউডের চরিত্র ভবিষ্যতে অক্ষুণ্ণ থাকবে কিনা তা বলা কঠিন। জোহারের মতো ব্যক্তিত্বরাও নিজেদের মোদির ভারতের আদলে গড়তে শুরু করেছেন। তবে গত বর্ষায়, কয়েক মাস আক্রমণের শিকার হওয়ার পর, বিরল এক প্রতিবাদ দেখা গেছে ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প থেকে। জয়া বচ্চন (অমিতাভ বচ্চনের স্ত্রী ও পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের সদস্য) সম্প্রতি বলেছেন, চলচ্চিত্র শিল্পের মানহানি করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এর কয়েক সপ্তাহ পর প্রযোজকদের একটি দল সরকারপন্থি ক্যাবল চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে একটি মানহানির মামলা দায়ের করেন। ভারতের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা বিবেচনায়, বলিউডের বাঁচার একমাত্র পথ এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে তারকা শক্তি খাটানো।
বলিউডের প্রভাব ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে অনেক দূর পৌঁছায়। বিজেপি সরকার এটা জানে। আর এজন্যই এই শিল্পকে তাদের কাতারে আনতে চায়। ১৯৩৫ সালে নাৎসি প্রচারমন্ত্রী জোসেফ গোয়েবলস ‘ইট হ্যাপেন্ড ওয়ান নাইট’ দেখে নিজের ডায়েরিতে লিখেছিলেন, ‘আমেরিকানরা কত সহজাত। আমাদের চেয়ে অনেক উপরে তারা।’ কর্তৃত্ববাদীরা সবসময় ওই তকমা নিজেদের জন্য চায়। আর এটা অর্জনের সহজ উপায় হচ্ছে, কয়েকজনের বিরুদ্ধে শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বাকিদের মধ্যে ভীতি ও সেল্ফ-সেন্সরশিপ ঢুকিয়ে দেওয়া।
(দ্য আটলান্টিকে প্রকাশিত অতিশ তাসিরের লেখা প্রতিবেদনের সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত অনুবাদ)
তবে ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে বলিউডও টার্গেটে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন হিন্দু-জাতীয়তাবাদি ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এ শিল্পের স্বাধীনতায় শেকল টানার চেষ্টা করছে। এর শিকার হচ্ছেন বিশেষ করে মুসলিমরা। পরিচালক, প্রযোজকদের বিরুদ্ধে নানা তদন্ত চালানো হচ্ছে, অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তাদের হয়রানি করা হচ্ছে, ভয় দেখানো হচ্ছে। পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার ভয়ে অনেকে এসব হয়রানির বিরুদ্ধে নীরব রয়েছেন। করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিতে সরকারের চরম ব্যর্থতা নিয়েও আওয়াজ তোলেননি বেশিরভাগ শিল্পী।
বলিউডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এক নারীর ভাষ্যমতে, ‘সবাই প্রচণ্ড ভয়ে আছে ও নজরের বাইরে থাকতে চাইছে। এ সরকার অত্যন্ত প্রতিহিংসাপরায়ণ।’
সম্প্রতি সরকারের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত বলিউডের সেরা এক পরিচালক ও অভিনেতার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে কর কর্তৃপক্ষ। এ অভিযানগুলো রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। একই সময়ে, অ্যামাজনের এক নির্বাহীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। তান্ডব নামে এক টিভি সিরিজে হিন্দু দেবতা শিবের একটি আপত্তিকর দৃশ্য নিয়ে এ মামলা করা হয়। সিরিজটির পরিচালক ওই দৃশ্যের জন্য জনসম্মুখে ক্ষমা চেয়েছেন। দৃশ্যটিও সিরিজ থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এমনকি প্রাথমিকভাবে সুপ্রিম কোর্ট তাদের মামলার সময় সুরক্ষা দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। অবশ্য পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে আদালত। একটি বড় স্ট্রিমিং সেবার এক নির্বাহী এ বিষয়ে জানান, মূল সমস্যাটা হচ্ছে সিরিজটির পরিচালক ও প্রধান অভিনেতা হচ্ছেন মুসলিম।
সরকারি রোষানলের শিকার হয়েছে বোম্বে বেগামস নামে নেটফ্লিক্সের একটি টিভি সিরিজও। ভারতের শিশু অধিকার রক্ষা বিষয়ক জাতীয় কমিশন নেটফ্লিক্সকে সিরিজটি সরিতে ফেলতেও আহ্বান জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, ‘এ সিরিজ শিশুদের মনকে কলুষিত করবে।’ তবে সিরিজটি সরানোর আহ্বানের পেছনে আরো বিশ্বাসযোগ্য কারণ হচ্ছে, এতে আন্তধর্মীয় সম্পর্ক ও সমকামিতাকে স্বাভাবিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
বলিউডে মুসলিমরা বরাবরই অন্যান্য ক্ষেত্রের চেয়ে তুলনামূলক বেশি প্রভাবশালী ছিল। শাহরুখ খান, সালমান খান ও আমির খানের মতো অভিনেতারা গত ৩০ বছর ধরে ভারতীয় সিনেমা জগতের খ্যাতির শীর্ষে রয়েছেন। বলিউডের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অর্থ আয় করা ১০টি ছবির ছয়টিতেই কোনো না কোনো ‘খান’ অভিনয় করেছেন। এ শিল্পের সবচেয়ে বড় বড় কিছু স্টুডিওর মালিকরাও মুসলিম।
ভারতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে সবচেয়ে বেশি অনুসারী রয়েছে মোদীর- ৬.৮৯ কোটি। তবে তালিকার উপরের দিকেই রয়েছেন দুই মসলিম অভিনেতা শাহরুখ খান ও সালমান খান। উভয়েরই ৪ কোটির বেশি অনুসারী টুইটারে। অন্যদিকে ৪.৫৬কোটি অনুসারী নিয়ে মোদির পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন বলিউডের কিংবদন্তী তারকা অমিতাভ বচ্চন। তার ক্যারিয়ার বলিউডে মুসলিমদের সম্পৃক্ততার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সত্তুরের দশকে বিজয় নামে সমাজের অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এক যুবকের চরিত্রে অভিনয় করে বড় পর্দায় বিখ্যাত হয়ে উঠেন বচ্চন। তার ওই চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন দুইজন মুসলিম চিত্রনাট্যকার। হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের উপর ভারতের টিকে থাকা নির্ভর করে, এমন গল্পের অনেক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। বচ্চনের বাবা ছিলেন একজন হিন্দিভাষী কবি। তিনি বেড়ে উঠেন উর্দু ও পার্সিয়ান কবিতায় ভরা এক দুনিয়ায়। বলিউডের প্রাথমিক দিনগুলো ছিল এমন মিশ্র সংস্কৃতিতে ভরা। এটাই বলিউডের ডিএনএ।
কিন্তু বিজেপির উৎপত্তির ইতিহাস কিছুটা ভিন্ন। গত শতকের আশির দশকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর রাজনৈতিক শাখা হিসেবে যাত্রা শুরু করে দলটি। আরএসএস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯২৫ সালে। তৎকালীন সময়ে ইউরোপে ফ্যাসিবাদী আন্দোলন জোরদার হচ্ছিল। সংগঠনটির প্রথম দিককার নেতারা নাৎসি জার্মানির প্রতি ব্যাপক শ্রদ্ধা পোষণ করতো। এর প্রথম দিকের নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এম এস গোলওয়াকার। সম্প্রতি মোদি সরকার টুইটারে ঘোষণা দিয়ে তার জন্মদিন উদযাপন করেছে। ১৯৩৯ সালে গোলওয়াকার লিখেছিলেন, জাত ও সংস্কৃতির বিশুদ্ধতা রক্ষায় জার্মানির চেষ্টা থেকে ভারতের শেখার রয়েছে।
আরএসএস সাম্প্রতিক সময়ে শুরুর দিকের কুরুচিপূর্ণ কর্মকাণ্ড ঝাড়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু মূল বিষয়গুলো একই থেকে গেছে। এখনো সংগঠনটি জাতের বিশুদ্ধতা রক্ষায় জোর দিয়ে যাচ্ছে। আন্তধর্ম বিয়ের ঘোরবিরোধীতা করে আসছে। এ নীতি অনুসরণ করে, বিজেপি নিয়ন্ত্রিত বেশকিছু রাজ্যে আন্তধর্ম বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও এমন বিয়ে বলিউডে প্রায়ই দেখা যায়। তিন খানের দুই জনের স্ত্রী’ই হিন্দু (আরেকজন বিয়েই করেননি)।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির প্রথম দফায় বিজেপির আইটি সেল হিসেবে পরিচিত অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সার ও অন্যান্য কর্মীরা বলিউডের মুসলিমদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। ২০১৫ সালে আমির খান ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বাড়ন্ত অসহনশীলতা নিয়ে পোস্ট দেন। তাতে বলেন, তার স্ত্রী একবার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কথাও বলেছেন। এই পোস্ট দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমিরকে অসংখ্য ঘৃণ্য ট্রোলের শিকার হতে হয়। একই বছর বলিউডের আরেক শীর্ষ তারকা সাইফ আলি খান ও তার হিন্দু স্ত্রী কারিনা কাপুর তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম দেন। মুসলিম শাসক তাইমুরের নামে সন্তানের নামকরণ করেন। এজন্যও অনলাইনে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন তারা।
২০১৮ সালে বলিউডের শীর্ষ অভিনেত্রী দিপীকা পাডুকোন একটি ঐতিহাসিক ছবিতে অভিনয় করেন। গুঞ্জন ছড়ায় যে, ছবিটিতে এক হিন্দু রানী ও মুসলিম রাজার মধ্যে অন্তরঙ্গ দৃশ্য রয়েছে। এ গুঞ্জনের মধ্যে হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা ঘোষণা দেন, কেউ যদি পাডুকোনের নাক কাটতে পারে তাহলে তাদের পুরস্কৃত করা হবে।
ওই বছরই বলিউডের অভিজাতদের সঙ্গে এক ছবি তোলার সেশন করেন মোদি। সেটি অনেকটা তোষামোদি বা এই শিল্পে সুযোগ তৈরি করার চেষ্টার মতো ছিল। ওই ছবি তোলার ব্যবস্থা করেন মাহাবীর জৈন। সে সময় তিনি বলিউডে তেমন পরিচিত ছিলেন না। তবে কীভাবে যেন, কারান জোহারসহ এ শিল্পের বড় কিছু ব্যক্তিতে একাট্টা করে ব্যক্তিগত বিমানে চড়িয়ে দিল্লিতে মোদির সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে যান তিনি। ওই তারকাদের মোদির সঙ্গে সেলফি পোস্ট দিতে উৎসাহিত করা হয়। তবে তাদের মধ্যে কোনো মুসলিম তারকা ছিলেন না। এর বার্তা পরিষ্কার ছিল: মোদি নতুন এক বলিউড চান, যেখানে মুসলিমরা থাকবে না। এ ঘটনার কিছুদিন পর থেকেই জোহার সহ বলিউডের বেশকিছু বড় বড় প্রযোজক ও পরিচালকদের সঙ্গে মিলে জাতীয়তাবাদী থিমের চলচ্চিত্র তৈরিতে লেগে যান জৈন।
২০১৯ সালে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে নিজের সাংস্কৃতিক এজেন্ডা আরো জোরদার করার সুযোগ পান মোদি। গত বছরের গ্রীষ্মে আত্মহত্যা করেন ভারতের প্রতিভাবান তরুণ তারকা সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যাকে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে মোদি সরকার। স্বজনপ্রীতিতে ভরপুর শিল্পে নিজের দক্ষতায় বেড়ে উঠার পরিচিতি ছিল রাজপুতের। মানসিক অসুস্থতায়ও ভুগতেন তিনি। তার পরিচিত অনেকে জানিয়েছেন, মাদকাসক্ত ছিলেন এই অভিনেতা।
রাজপুতের আত্মহত্যা বিয়োগান্তক এক ঘটনা ছিল। কিন্তু নতজানু গণমাধ্যমের হাতে তার মৃত্যু ঘিরে পুরো চলচ্চিত্র শিল্পকেই বিচারের কাঠগড়ায় উঠিয়ে দেওয়া হয়। রাজপুতের জন্ম বিহারে। সে সময় রাজ্যটিতে নির্বাচন ঘনিয়ে আসছিল। বিজেপি নির্বাচনি প্রচারণায় তার আত্মহত্যাকে চলচ্চিত্র শিল্পের অভিজাত ও স্বজনপ্রেমীদের হাতে তার হত্যা হিসেবে তুলে ধরে। রাজ্যজুড়ে তার পোস্টার ছাপানো হয়। সেগুলোয় লেখা হয়, ‘আমরা ভুলিনি। আমরা তাদের ভুলতে দেবো না।’
রাজপুতের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীকে তার আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ এনে কারাগারে পাঠানো হয়। কয়েকদিনের মধ্যেই ভারতের মাদক নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো রিয়ার বাড়িসহ চলচ্চিত্র শিল্পের শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের বাড়িতে মাদকের সন্ধানে অভিযান চালায়। তবে আদতে এ অভিযান ছিল তাদের ভয় দেখানো ও সম্মানহানির জন্য।
রাজপুতের আত্মহত্যাকে বলিউডের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বগুলো তীব্র করে তুলতে ব্যবহার করেন মোদি। এ শিল্পের উপর সাংস্কৃতিক যুদ্ধ চালু করেন। আর এ যুদ্ধে বিশেষভাবে নেতৃত্ব দেন একজন অভিনেত্রী। তার নাম কঙ্গনা রানাউত।
কঙ্গনা রানাউতের হোয়াটসঅ্যাপ প্রোফাইল ছবিতে তাকে নীল শাড়ি পরে শিবের কাছে প্রার্থনা করতে দেখা যায়। ২০১৯ সালে কাশ্মীরা পাকিস্তান-ভিত্তিক চরমপন্থী একটি দল এক আত্মঘাতী হামলা চালায়। এ ঘটনার পর পাকিস্তানের ধ্বংস চেয়ে প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। বলেন, তার ইচ্ছে করছে সীমান্তে গিয়ে পাকিস্তানিদের হত্যা করতে। পরবর্তীতে অবশ্য সরকারি নির্বাহী কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের সামনে নিজের ওই মন্তব্যের পক্ষে সাফাই গান তিনি। আরেকবার তিনি বলেন, ভারতের চলচ্চিত্র শিল্প ‘জাতীয়তাবাদ-বিরোধী ব্যক্তি দিয়ে ভরে গেছে যারা নানাভাবে শত্রুদের মানসিক বল জোরদার করে করে।’ বিভিন্ন মন্তব্যে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার কারণে সম্প্রতি টুইটার থেকে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত বছর, অজ্ঞাত-অস্পষ্ট হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। নানা সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, এই মাত্রার নিরাপত্তা মূলত সরকার বা নাগরিক সমাজে উচ্চ পদধারীদের জন্য বরাদ্দ থাকে।
বলিউডের চরিত্র ভবিষ্যতে অক্ষুণ্ণ থাকবে কিনা তা বলা কঠিন। জোহারের মতো ব্যক্তিত্বরাও নিজেদের মোদির ভারতের আদলে গড়তে শুরু করেছেন। তবে গত বর্ষায়, কয়েক মাস আক্রমণের শিকার হওয়ার পর, বিরল এক প্রতিবাদ দেখা গেছে ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প থেকে। জয়া বচ্চন (অমিতাভ বচ্চনের স্ত্রী ও পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের সদস্য) সম্প্রতি বলেছেন, চলচ্চিত্র শিল্পের মানহানি করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এর কয়েক সপ্তাহ পর প্রযোজকদের একটি দল সরকারপন্থি ক্যাবল চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে একটি মানহানির মামলা দায়ের করেন। ভারতের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা বিবেচনায়, বলিউডের বাঁচার একমাত্র পথ এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে তারকা শক্তি খাটানো।
বলিউডের প্রভাব ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে অনেক দূর পৌঁছায়। বিজেপি সরকার এটা জানে। আর এজন্যই এই শিল্পকে তাদের কাতারে আনতে চায়। ১৯৩৫ সালে নাৎসি প্রচারমন্ত্রী জোসেফ গোয়েবলস ‘ইট হ্যাপেন্ড ওয়ান নাইট’ দেখে নিজের ডায়েরিতে লিখেছিলেন, ‘আমেরিকানরা কত সহজাত। আমাদের চেয়ে অনেক উপরে তারা।’ কর্তৃত্ববাদীরা সবসময় ওই তকমা নিজেদের জন্য চায়। আর এটা অর্জনের সহজ উপায় হচ্ছে, কয়েকজনের বিরুদ্ধে শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বাকিদের মধ্যে ভীতি ও সেল্ফ-সেন্সরশিপ ঢুকিয়ে দেওয়া।
(দ্য আটলান্টিকে প্রকাশিত অতিশ তাসিরের লেখা প্রতিবেদনের সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত অনুবাদ)