অনলাইন

সে রাতে কী ঘটেছিলে বোট ক্লাবে?

স্টাফ রিপোর্টার

২০২১-০৬-১৪

ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমনির সঙ্গে বুধবার রাতে কী ঘটেছিল উত্তরার ঢাকা বোট ক্লাবে। এ নিয়ে আলোচনা সর্বত্র। পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা না নেয়ার অভিযোগ করেন তিনি। বনানী থানা পুলিশ অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে গতরাতে  রূপনগর থানা থেকে পুলিশের কর্মকর্তারা তার বাসায় যান অভিযোগ রেকর্ড করার জন্য। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

গতকাল প্রথম ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন আলোচিত এ অভিনেত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চান তিনি। পরে রাতে সংবাদ সম্মেলনে ও পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন তিনি। এসময় তিনি বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। সংবাদ সম্মেলনে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন পরীমনি। তার অভিযোগ ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য (বিনোদন ও সংস্কৃতি) নাসির ইউ মাহমুদের বিরুদ্ধে। ঢাকা বোট ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাসির একজন আবাসন ব্যবসায়ী। তিনি উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি। অভিযোগের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত নাসির ইউ মাহমুদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পরীমনি বলেন, উত্তরার বোট ক্লাবে (ঢাকা বোট ক্লাব) তার সঙ্গে ঘটনাটি ঘটে। নাসির উদ্দিন নামে একজন নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। চার মদ্যপ ব্যক্তি তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। চড়-থাপ্পড় মারেন। গায়ে আঘাত করেন।

পরীমনি বলেন, ‘আমি সুইসাইড করার মতো মেয়ে না। আমি যদি মরে যাই, আপনারা বুঝবেন আমাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি সুইসাইড করতে পারি না। আমি সুইসাইড করব না। আমি আমার বিচার নিয়ে মরব। আমার সাথে অন্যায় করা হয়েছে। আমার সাথে অন্যায় হয়েছে, বিচার চাই। আমি আজকে মরে গেলে... আমি সুইসাইড করি নাই, সবাই জেনে রাখেন। আর আমাকে যদি কেউ মারে, আমি যদি মরে যাই; ভাইয়ারা আপনারা বিচার কইরেন, আল্লাহর কসম।

বিচার না পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, চার দিন ধরে একদম সাধারণ মেয়ের মতো মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কিন্তু আমাকে কেউ সাহায্য করেনি। পরীমনি হিসেবে যখন স্ট্যাটাসটা দিলাম তখনই সবাই আসলেন।
পরীমনি বলেন, এমন ঘটনায় সাধারণ মেয়েরা প্রথমে কোথায় যায়? থানায় যায়। আমিও থানায় গিয়েছি। আমি বারবার বলেছি, ঘটনাটা যদি নিজের সঙ্গে না ঘটে তাহলে কেউ বুঝবে না।

পরীমনি আরও বলেন, সাধারণ কোনো মেয়ের হলে সে খবর হয়তো আপনাদের কাছে পৌঁছায় না। সাংবাদিকদের কাছে খবর পৌঁছানো হয় না। আমার মতো যখন কোনো মেয়েকে ভয় দেখানো হয় তখন সাধারণ মেয়ের খবর তো পাবেন না!

তিনি বলেন, বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তার এক বন্ধু (অমি) বাসায় আসেন। বাসা থেকে তাকে উত্তরার বোট ক্লাবে (ঢাকা বোট ক্লাব) নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জিমি (ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী)। বোট ক্লাবে যাওয়ার পর সেখানে সাত/আটজনের একটা গ্রুপ ছিল। তাদের মুরব্বি ছিলেন নাসির উদ্দিন (নাসির ইউ মাহমুদ)। নাসির উদ্দিনসহ উপস্থিত সাত/আটজন আমাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতে থাকে। আমাকে আটকে ফেলে। জোর করে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করার চেষ্টা করে। জিমিকে মারধর করা হয়। অশ্লীল নানা কথাবার্তা বলা হয়। মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়।

পরীমনি বলেন, আমি চার দিন আমি পাগল হয়ে গেছি ভাইয়া, আমি সুস্থ নই, আমি না ভাইয়া পাগল হয়ে গেছি... পাগল। আমার জায়গায় থাকলে আপনারা কেউ এখানে বসে কথা বলতে পারতেন না।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে পরীমনি বলেন, নাসির উদ্দিন আহমেদ। সে ঘুরে এসে প্রথমে আমারে দুটা থাপ্পড় মারছে। আমি তো এমনিতে কোনো কথা বলতে পারছিলাম না, জিমিকে দেখে চুপ করে আছি... ওয়েটার যারা ছিল, লাইট অফ করে দিতে বলছে, লাইট অফ করে দিছে। তারপর টিভির মনিটর ছিল...। আর একটা লোক ছিল শার্টটা এভাবে খুলে, বোতাম-টোতাম সরে গেছে... তারপর জিমির গলায় এভাবে প্যাঁচায় দিছে শার্টটা। প্যাঁচায় দিয়ে বলে কী মাধুরি দীক্ষিতের গানে এখন নাচবি তুই। আমি এই হরিবল (ভয়াবহ) দৃশ্য ভুলতে পারছি না। এরম-ওরম করতেছিল, আমার চোখের সামনে ভাসতেছে। আমি পাগল হয়ে গেছি ভাইয়া, সেভ মি। আমি মরতে চাই না এভাবে। ওই ক্লাব থেকে কখন বের হন জানতে চাইলে পরীমনি বলেন, আমি জানি না। যখন আমাকে এতগুলো... আমার গলা এখান থেকে এখান থেকে পুরো জ্বলে যাচ্ছিল... আমি তো জানি ভাইয়া আমি ওই সময় মরে যাব। আমি সত্যি জানি না, এখন আমি আপনাদের সাথে কথা বলতে পারব। আমি সত্যি জানি না। আমি জানতাম আমি মরে গেছি, একটু পর মরে যাব।  আনুমানিক তখন সময়টা কত হতে পারে... এমন প্রশ্নে পরীমনি বলেন, আমারে দুই ঘণ্টা-আড়াই ঘণ্টা আটকে রাখছে...। পরীমনি বলেন, নাসির ইউ মাহমুদ আমাকে লাথি মেরে চেয়ার থেকে ফেলে দেন। মুখের ভেতর জোর করে মদের বোতল ঢুকিয়ে দেন। এতে দাঁতে আঘাত লাগে এবং কিছু মদ গলায় যায়। গলা ও বুক জ্বলতে থাকে। আমি তখনই খানিকটা অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমার সঙ্গে থাকা জিমি তখন চিৎকার ও কান্না শুরু করলে আমাদের ধর্ষণের হুমকি এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন নাসির ইউ মাহমুদ। পরী জানান, সেখানে অনেকক্ষণ ধরে অচেতন অবস্থায় ছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে কী ঘটেছিল তাও তিনি জানেন না। কীভাবে তিনি সেখান থেকে এসেছেন তাও তার জানা নেই। একপর্যায়ে নিজেকে তার গাড়িতে দেখতে পান বলেও জানান।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status