বই থেকে নেয়া

মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৭৫)

‘আওয়ামী লীগ মুখে যা বলে নিজেরাই তাতে বিশ্বাস করে না’

স্টাফ রিপোর্টার

১৩ জুন ২০২১, রবিবার, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন

রবিবার ২৯ জুন ২০০৮ দিন ৪৪৪
হাসনা আমার জীবনের এক অপূর্ব স্পন্দন। আমার চাইতে অনেক বেশি গুণের অধিকারী সে। তার অশেষ প্রাণশক্তি, ইচ্ছাশক্তি, ধৈর্য এবং সাহস আমাকে মাঝেমধ্যে অবাক করে দেয়। আমান ও আনার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে গিয়ে তার বছরের পর বছরের ত্যাগ ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। জ্যেষ্ঠতম সন্তানের মতো, আমানের প্রতিবন্ধকতা এবং আনার চলমান সমস্যাসমূহ হাসনার মনে যে সুগভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে তা অন্য কারো পক্ষে পরিমাপ করাও সম্ভব নয়। আমান ও আনার যত্ন নিতে গিয়ে তাদের প্রবল দুঃসময়েও আমি হাসনাকে একমুহূর্তের জন্যও ক্লান্ত কিংবা হতাশ হতে দেখিনি। হাসনা সন্তানদের উন্নতির ব্যাপারে সবসময়ই আশাবাদী এবং সে কারণেই আমান ও আনা দিনে দিনে উন্নতি করে চলেছে।
দেশ ও মানুষের জন্য তার আন্তরিকতার কোনো সীমা নেই। তরুণ বয়সে অবিবাহিত অবস্থায় আমেরিকায় যায় উচ্চশিক্ষার জন্য। অধ্যয়ন করে ডিগ্রি ও মাস্টার্স করার পর অধ্যাপনাও করেছে সেখানে। নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দফতরে ইউএনডিপি’র একজন কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির সাথে ১৯৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। ১৯৯২ সালে রিও ডি জেনিরোতে বিশ্ব শীর্ষ সম্মেলনে গ্লোবাল-৫০০ পুরস্কারে ভূষিত হয়ে সক্রিয় একজন পরিবেশবিদ হিসেবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন, সেমিনার ও ওয়ার্কশপে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করা ছাড়াও দেশে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং পানি ও পরিবেশবিষয়ক ইস্যুতে একা লড়াই করতে গিয়ে যেসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছে সেগুলো সে অতিক্রম করতে পেরেছে অতুলনীয় সাহস ও আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে। হাসনা উঁচুমানের একজন নারী, সৃষ্টিশীল একজন লেখক এবং সঙ্গী হিসেবে খুবই ভালো। আমাকে যে কোনো মুহূর্তে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হতে পারে, কিন্তু আমান ও আনার যথাযথ যত্ন নেওয়ার জন্য আমি মহান আল্লাহ্র কাছে সবসময় হাসনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করি।

সোমবার ৩০ জুন ২০০৮ দিন ৪৪৫
যেমনটি ভেবেছিলাম ঠিক তেমনটাই ঘটেছে। আওয়ামী লীগ তার আগের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গিয়ে ঘোষণা করেছে যে, তারা প্রস্তাবিত রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট- এই চারটি সিটি করপোরেশনসহ আরো নয়টি পৌরসভায় জরুরি আইনের আওতায় অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে অংশ নেবে। বিএনপি’র মহাসচিব ঘোষণা করেছেন যে, তারা এ ধরনের প্রহসনমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রতিহত করবেন। তবে এই মুহূর্তে কার্যকর কোনো প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষমতা বিএনপি’র নেই। উপরন্তু অনেক কারণে আমাদের জনগণ নির্বাচন পছন্দ করে। যাই হোক, বিএনপি নির্বাচন বয়কট করলে সে নির্বাচন হবে একদলভিত্তিক এবং তাতে থাকবে আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য।
বেগম জিয়া দেনদরবারে যে কৌশল অবলম্বন করছেন তা সঠিক। তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেলে অন্ততঃপক্ষে তার বিরুদ্ধে আনীত ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হওয়া থেকে রেহাই পাবে এবং তাতে করে পরবর্তীকালে সে আরো অনুকূল পরিবেশে রাজনীতিতে ফিরে আসতে পারবে।
তাই হোক আমাদের প্রত্যাশা।

মঙ্গলবার ১ জুলাই ২০০৮ দিন ৪৪৬
উন্নয়নশীল সমাজ ব্যবস্থায় যেসব রাজনীতিবিদ ক্ষমতার রাজনীতিতে জড়িত হন তারা প্রায় ক্ষেত্রেই কতকগুলো সাধারণ ভ্রান্তির শিকার হন। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আসন জিততে গিয়ে তারা উচ্চকণ্ঠে কিছু সেøাগান তুলে বলেন যে, অমুক বছরের মধ্যে দেশের সবাইকে শিক্ষিত করে তোলা হবে কিংবা অমুক অমুক পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের সবার জন্য কর্মসংস্থান বা স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা হবে। সঙ্গত কারণেই ক্ষমতায় অভিষিক্ত হওয়ার পর তারা আর সেসব প্রতিশ্রুতির কোনোটাই পূরণ করতে পারেন না। কারণ সেসব লক্ষ্য অর্জন মোটেই সহজসাধ্য নয়। তারা আরেকটি ভুল করেন, যখন তারা বিরোধী দলে থেকে সরকারকে চরমপত্র দিয়ে বলেন যে, অমুক তারিখের মধ্যে সরকার পদত্যাগ না করলে জনগণ কঠোর এক আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে উৎখাত করবে। কিংবা অমুক দিনের মধ্যে সরকার সকল রাজবন্দিকে মুক্তি না দিলে বিরোধী দল অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারকে অচল করে দেবে কিংবা অমুক অমুক তারিখের মধ্যে সরকার সকল শর্ত মেনে না নিলে দল নির্বাচনে অংশ নেবে না। অবশ্য সেই সব রাজনৈতিক দল বলতে চাইবে যে, এসব ধরনের চরমপত্র দেওয়ার অর্থ হলো আংশিকভাবে নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। কিন্তু এরপরে মোটেও তা সঠিক পদক্ষেপ হতে পারে না। এসব চরম ধরনের সেøাগান ও চরমপত্র ব্যবহার করে রাজনৈতিক দলগুলো পক্ষান্তরে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতাই নষ্ট করেন এবং নিজেদের অদক্ষতা ও অন্তঃসারশূন্য দুর্বলতাই প্রকাশ করেন। এগুলো সবই নেতিবাচক রাজনীতির দৃষ্টান্ত।

বুধবার ২ জুলাই ২০০৮ দিন ৪৪৭
এটা একদিক দিয়ে ভালো যে, আমার হৃদয়ের একাংশ পুত্র আমান খবরের কাগজ পড়তে পারে না। তা না হলে পত্রিকার পাতায় তার বাবা সম্পর্কে প্রতিদিন যেসব মিথ্যা, অপমানজনক, মুখরোচক, অতিরঞ্জিত ও বানোয়াট খবর, ছবি ও কার্টুনসহকারে ছাপা হচ্ছে সেগুলো দেখে সে আরো দুঃখিত, হয়তো বা উন্মত্ত হয়ে যেতে পারতো। তার প্রতিক্রিয়া হতে পারতো যে কোনো ধারণার বাইরে। কিন্তু তারপরও তার বাবা এখন জেলে এবং এ কারণে সে অনেক উদ্বেগ বোধ করে। আবার সে উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারে না বলে সে ভেতরে জ্বলে পুড়ে ছাই হতে থাকে। হয়তো এ কারণেই গত এক বছরে সে এতোটা ওজন হারিয়েছে।

বৃহস্পতিবার ৩ জুলাই ২০০৮ দিন ৪৪৮
বেগম জিয়ার সাথে ক্ষমতাসীনদের দেনদরবার অব্যাহত রয়েছে। তারেক রহমানের জন্য সরকারিভাবে গঠন করা হয়েছে একটি মেডিক্যাল বোর্ড।
আওয়ামী লীগ আজ সরকারের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপে বসার ঘোষণা দিয়েছে। অথচ এই কিছুদিন আগেও দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমান জানিয়েছিলেন যে, শেখ হাসিনাকে ছাড়া তারা সংলাপে অংশ নেবেন না ।
চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখে সরকার তেলের মূল্য ৩৬ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছেন যার ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে। জনগণের কাছে জবাবদিহিতাবিহীন একটি সরকারই কেবল এ ধরনের কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে দাম এক লাফে এতোটা বাড়িয়ে দিতে পারে। এরপরও কেবলমাত্র জরুরি আইনের ক্ষমতার জোরেই তারা পার পেয়ে যায়, অন্যথায় জনগণ এ সময় নেমে পড়তো রাজপথে।

শুক্রবার ৪ জুলাই ২০০৮ দিন ৪৪৯
আমার বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতি দমন কমিশনের আয় ও সম্পদ সংক্রান্ত মামলার সকল কার্যকরিতা স্থগিত রাখার ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নিষেধাজ্ঞা আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে সকল শ্রেণির জনগণ তীব্রভাবে সমালোচনা করছে।

শনিবার ৫ জুলাই ২০০৮ দিন ৪৫০
সেনাবাহিনীর অফিসাররা যেখানে মাঝরাতে সাব-জেলে গিয়ে খালেদা জিয়ার সাথে দেনদরবার চালাচ্ছেন সেখানে একই সাথে তার বিরুদ্ধে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে স্থাপিত বেসরকারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নামক পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের তহবিল তছরুপের ঘটনার অভিযোগ তুলে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। অবিশ্বাস্য রকমের অসম্ভব এই মামলা দায়েরের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো জিয়া পরিবারকে জনগণের সামনে আরো হেয় প্রতিপন্ন করে তোলা। এরপরও তারা কেমন করে কোনো সমঝোতা আশা করতে পারে?
আদালতের পূর্বানুমতি নিয়ে ব্যারিস্টার খোকন আমার সাথে পরামর্শ করতে এসেছিল।
যৌথবাহিনীর হাতে চরমভাবে নির্যাতিত আমার স্টাফ শহীদ আবার চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছে।

রবিবার ৬ জুলাই ২০০৮ দিন ৪৫১
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমান বলেছেন যে, সরকারের সাথে তাদের সংলাপ ব্যর্থ হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন যে, তার দল জরুরি আইনের অধীনে অনুষ্ঠেয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ মুখে যা বলে নিজেরাই তাতে বিশ্বাস করে না। পৌরসভা নির্বাচনের সময়ও তারা একই কথা বলেছিল এবং শেষ পর্যন্ত তারা একদলভিত্তিক প্রহসনমূলক নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।

সোমবার ৭ জুলাই ২০০৮ দিন ৪৫২
নাইকো মামলার শুনানিকালে আমি বসা ছিলাম বেগম জিয়ার পাশে। বেগম জিয়া আমাকে বললেন যে, সেনা অফিসাররা মাঝরাতে এসে নানা কথা বলছেন ও নানা ধরনের শর্ত দেখাচ্ছেন যেগুলোর একটির সাথে আরেকটির কোনো যোগসূত্র বা সমন্বয় নেই। তবে এ যাবৎ তারা যেসব মূল পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করেছেন সেগুলো। হলো: (১) সেনাবাহিনী প্রধানকে প্রেসিডেন্ট বানাতে হবে, (২) রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে একটা ভারসাম্য আনতে হবে, (৩) একটি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠন করা হবে, (৪) যেসব রাজনীতিবিদ জেলে রয়েছেন, সাজাপ্রাপ্ত হোক বা না হোক, তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না এবং দল থেকে তাদের বহিষ্কার করতে হবে এবং (৫) সেনাদের সরবরাহকৃত তালিকা মোতাবেক নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে হবে। অবশ্য খালেদা জিয়া এদের একটি প্রস্তাবেও রাজি হননি। কিন্তু হাসিনার বেলায় কী হবে? তিনি কি এসব মেনে নিয়েই মুক্তির নিশ্চয়তা পেয়েছেন? সরকারের সাথে তার সমঝোতার ভিত্তি কি এটাই ছিল? শেখ হাসিনার মতো জাতীয় পর্যায়ের একজন রাজনীতিবিদ কি এ ধরনের শর্তসমূহ মেনে নিতে পারেন?

মঙ্গলবার ৮ জুলাই ২০০৮ দিন ৪৫৩
জেলে আমার সহকারী ও সাহায্যকারী জিয়াউদ্দিন তার গ্রামে জমি নিয়ে বিবাদের সূত্রে এক খুনের মামলায় ৩০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তার বাড়ি নান্দাইল উপজেলার গাঙ্গাইল ইউনিয়নের পাকের হাটে। ২১ বছর ধরে সে সাজা খাটছে। এখন তার বয়স ৫৫। ৩৪ বছরের টগবগে এক যুবক হিসেবে জেলখানায় ঢুকেছিল সে। সে নিজে খুন করেনি। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার আদেশে চাচাতো ভাই খুনের ঘটনাটি ঘটিয়েছে। দোষী সাব্যস্ত ১৯ জনের মধ্যে ৫ জনের সাজা হয়। বাকি চারজন জামিনে মুক্ত হয়ে জেলের বাইরে আছে- কেবল সে এখনো জেল খাটছে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জেল খেটে যখন সে ছাড়া পাবে তখন তার বয়স হয়ে যাবে ষাটের কাছাকাছি। কাজেই বলতে গেলে গোটা জীবনটাই জেলখানায় কাটাচ্ছে জিয়াউদ্দিন।
সে বলেছে, খুনের ঘটনার মামলায় সে স্বেচ্ছায় নিজের দোষ স্বীকার করেছে। তার লক্ষ্য ছিল তার চাচাতো ভাইটিকে বাঁচানো। কারণ ভাইটির পরিবারে দেখাশোনার জন্য আর কেউ ছিল না।
মোটামুটি বেশ একটা ভালো পরিবার থেকে এসেছে জিয়াউদ্দিন। সে নিজে দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি পাস করেছে। তার বাবা আখতার হোসেন নান্দাইল থানা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও থানা মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এলাকায় একজন ভালো লোক ও সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার ভাই তাজউদ্দীন সেনাবাহিনীর একজন মেজর, মারা যান সড়ক দুর্ঘটনায়। রাষ্ট্রপতি এরশাদের সাথে অনেকদিন কাজ করেছিলেন তিনি।
যে বছর জিয়াউদ্দিন জেলে আসে ঠিক সে বছরই তার স্ত্রী জন্ম দেয় তাদের একমাত্র কন্যাসন্তানের। বাবার সান্নিধ্য, স্নেহ, ভালোবাসা ও মন থেকে আজন্ম বঞ্চিত সেই কন্যা এখন মেধার স্বীকৃতি নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের একজন ছাত্রী। বাবার আশীর্বাদ নিতে মেয়েটি মাঝে-মধ্যে জেলখানায় আসে। কোনোরকম ভাবাবেগ প্রকাশ না করেই জিয়াউদ্দিন এসব কাহিনী বলে যাচ্ছিল আমাকে। কিন্তু একবার মেয়ের প্রসঙ্গ আসতেই সে তার আবেগ ও অশ্রু আর সংবরণ করে রাখতে পারেনি, তার উদ্গত অশ্রু বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো বের হয়ে প্লাবিত করে তোলে তাকে।
জিয়াউদ্দিন একজন শক্তিমান, পরিশ্রমী, অনুগত ও স্বচ্ছ ব্যক্তি। আজ থেকে অনেকদিন আগেই জিয়াউদ্দিনের মুক্তি পেয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কারা সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আমার অন্যতম সংস্কার ছিল এই যে, যেসব বন্দি ইতিমধ্যেই তাদের সাজার মেয়াদের দুই তৃতীয়াংশ সময় পার করেছে তারা তখনই ছাড়া পাবে। সে অনুযায়ী জেল কোড সংশোধনও করা হয়। জিয়াউদ্দিন বলেছে, জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকটি আবেদন দাখিল করেছে, কিন্তু সেগুলোর কোনো জবাব পায়নি। তাছাড়া প্রতিবছর সে রেমিশন পাচ্ছে তিন মাস করে। অথচ আমরা কারা সংস্কারের সময় প্রতি বছর ৪ মাসের রেমিশন কার্যকর করেছিলাম। এ দুই বিবেচনাতেই অনেকদিন আগেই জিয়াউদ্দিনের জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়ে যাওয়ার কথা।
আমাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিরুদ্ধে আনীত এক রিটে হাইকোর্ট ডিভিশন একটি রুল জারি করে আয়কর অর্ডিন্যান্সের ৯৩ ধারা মোতাবেক আমার ওপর জারি করা আয়ের বিবরণী দেওয়ার সকল কার্যকারিতা হাইকোর্ট রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করে দিয়েছে, অথচ আমি নিজেই স্বেচ্ছাকৃতভাবে আমার অঘোষিত আয়ের ওপর আয়কর পরিশোধ করতে সম্মত ছিলাম।
ডা. হেলাল জানালো যে, একটি আন্তর্জাতিক লেখক সম্মেলনে অংশ নিতে হাসনা সুইডেনে গিয়েছে। আনাও রয়েছে তার সাথে।

বুধবার ৯ জুলাই ২০০৮ দিন ৪৫৪
শেখ হাসিনা চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে প্যারোলে মুক্তি পেলেও আসলে তা ছিল একটি রাজনৈতিক কৌশল । দেখেশুনে মনে হচ্ছে তিনি খুব আমোদের সাথেই ছুটি উপভোগ করছেন। কানাডাতে গিয়ে তিনি মেয়েকে দেখে এসেছেন। তার ভাগ্নে রেহানার ছেলের বিয়ে খেতে গিয়েছেন ফিনল্যান্ড ও লন্ডনে। সেখান থেকে ফিরে যাবেন আমেরিকায়। কী চমৎকার চিকিৎসা চলছে?

(চলবে..)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status