প্রথম পাতা
সিলেট-৩ উপনির্বাচন
হাবিবের চমক
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৩ জুন ২০২১, রবিবার, ৯:৪০ অপরাহ্ন
‘চমক’ দেখিয়ে সিলেটে নৌকার প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব। শুরু থেকেই তিনি ছিলেন আলোচনায়। তবে শেষদিকে এসে ভিআইপি প্রার্থীদের ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছিলেন নিজেও। অনেক আলোচনা এ আসনে নৌকার প্রার্থীকে ঘিরে। নৌকার জন্য লড়াইয়ে নেমেছিলেন কমপক্ষে ২৫ জন নেতা। প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে দলীয় মনোনয়নও কিনেছিলেন। একই সঙ্গে তারা চষে বেড়িয়েছেন নির্বাচনী মাঠও। তাদের পদচারণায় ভোটের আগেই জমে উঠেছিল সিলেট-৩ আসনের নির্বাচন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নৌকার মাঝি হলেন আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব। হাবিবের এ যেন জয়ের আগে জয়। অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছেন তিনি। ২৮শে জুলাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাবিব অবতীর্ণ হবেন চূড়ান্ত পরীক্ষায়। তবে- প্রতিপক্ষ হিসেবে তিনি বিএনপি’র প্রার্থী পাচ্ছেন না। লড়াই করতে হচ্ছে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মনোনীত প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে। তবে নিজ দল আওয়ামী লীগ থেকে শক্তিশালী কোনো প্রার্থীকে স্বতন্ত্র হিসেবে পাচ্ছেন না হাবিব। গতকাল পর্যন্ত বিদ্রোহী হওয়ার পথে কেউ হাঁটছেনও না। ঘোষণা দেননি কেউ নির্বাচন করবেন। ফলে পথ অনেকটা সহজ হাবিবুর রহমান হাবিবের জন্য। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কামাল বাজারে বাড়ি সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের। বর্তমানে তিনি সিলেট আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যও। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। যুক্তরাজ্যের রাজনীতিই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে হঠাৎ করেই ভোটের মাঠে নামেন হাবিব। চান আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন। তখন নৌকার প্রার্থিতার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী। হাবিব ওই সময় সিলেট-৩ আসনের ভোটের মাঠে সরব থাকলেও নৌকার মনোনয়ন পাননি। মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী কয়েস নৌকার প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। এরপর থেকে সিলেট-৩ আসনে হাবিব ছিলেন অনেকটা কোণঠাসা। তিনি যুক্তরাজ্যে যাওয়া-আসা করলেও থিতু হয়েছিলেন এলাকায়। নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা তার পক্ষে সব সময় সক্রিয় ছিলেন। ২০০৮ সালের পর হাবিব সব জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠতে পারেননি। গত ১১ই মার্চ মহামারি করোনার কাছে হেরে বিদায় নেন সিলেট-৩ আসনের জনপ্রিয় এমপি মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী। তার মৃত্যুতে গোটা নির্বাচনী এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর ফের সক্রিয় হয়ে উঠেন হাবিবুর রহমান হাবিব। এবার পান সাড়াও। এক যুগ ধরে মাঠে কাজ করায় সবার সঙ্গে পরিচয় থাকায় সবাই তাকে বরণ করেও নেন। এর মধ্যে সিলেট-৩ আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন প্রয়াত মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরী। মাঠে সক্রিয় হিসেবে প্রচারণা শুরু করেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বিএমএ’র কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল। এর বাইরে এ আসনে আরও অনেক নেতার নাম উঠে আসে। প্রাক ভোট প্রস্তুতির প্রচারণায় নামেন এসব নেতারা। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রচারণায় ভোটের মাঠ আগেভাগেই সরগরম হয়ে উঠে। নৌকা নিয়ে রীতিমতো শুরু হয় মল্লযুদ্ধ। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারা সবার সঙ্গে মাঠে থাকলেও সাফ জানিয়ে দেন-নৌকা যে পাবে তার পক্ষেই তারা মাঠে কাজ করবেন। হাবিবুর রহমান গতকাল থেকে সিলেট-৩ আসনে হলেন নৌকার প্রার্থী। তাকে ঘিরেই এখন সরব দলীয় নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে বিদ্রোহী হওয়ার আভাস দিয়েছিলেন মিসবাহ সিরাজ ও ডা. দুলাল। কিন্তু গতকাল আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের পর তারাও মাঠ থেকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। আর মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরীর স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী জানিয়েছিলেন নৌকা পেলে তিনি প্রার্থী হবেন। ফলে ফারজানা চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন না বলে তাদের পারিবারিক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। সিলেট-৩ আসনের নির্বাচনে মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার আগে বলা হয়েছিল লন্ডন ও সিলেটের লড়াই। কিন্তু শেষ মুহূর্তের বিবেচনায় জয় হলো লন্ডনের। প্রবাসীফেরত আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবকে দেয়া হলো আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন। এ আসনে ইতিমধ্যে দলীয় প্রার্থী হিসেবে আলহাজ আতিকুর রহমান আতিকের নাম ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি। দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর আতিকও নির্বাচনী প্রচারণায় নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন আরেক প্রবাসী ব্যারিস্টার মোস্তাকিম রাজা চৌধুরী। তিনি বিএনপি ঘরানার নেতা হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নামছেন বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।