প্রথম পাতা
সিনোফার্মের টিকা কেনার চুক্তি সই
কূটনৈতিক রিপোর্টার
১৩ জুন ২০২১, রবিবার, ৯:৪০ অপরাহ্ন
টিকা কিনতে চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশ সরকার। শনিবার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে এক সভার পর এমনটাই জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তবে কবে ওই চুক্তি সই হয়েছে, কী দামে টিকা কিনছে বাংলাদেশ কিংবা কবে নাগাদ টিকা হাতে পাওয়া যাবে তার বিস্তারিত প্রকাশ করেননি মন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে তিনি গোপনীয়তা রক্ষা বা নন-ডিসক্লোজার সইয়ের কথা স্মরণ করেন। বলেন, আগে টিকার দাম প্রকাশ হওয়ায় কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল। সেটা আমরা কাটিয়ে উঠেছি। ফলে এখন আমাদেরকে অপ্রকাশযোগ্য তথ্যের বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। এর আগে গত ২৭শে মে সিনোফার্মের দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার একটি প্রস্তাবের অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা কমিটি। সভার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহিদা আখতার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, প্রতি ডোজ ১০ ডলার দামে চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের কাছ থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা কিনবে বাংলাদেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন দামে টিকা কেনায় বাণিজ্যের স্বার্থে কোনো অবস্থাতেই টিকার দাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে থাকে চীন। বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে ১০ ডলারে টিকা দিতে তখন তারা সম্মত হয়েছিল, কিন্তু শর্ত ছিল দামটি যেন কোনো অবস্থাতেই প্রকাশ না পায়। কিন্তু ওই কর্মকর্তার খামখেয়ালিতে দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে দাম প্রকাশ হয়ে যায়। ঘটনাটিতে রীতিমতো বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে বেইজিং। দাম বৈষম্যের প্রতিবাদ জানায় শ্রীলঙ্কা। কারণ, দেশটির সঙ্গে সিনোফার্ম ১৫ ডলারে টিকা বিক্রির চুক্তি করেছিল। দাম প্রকাশ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে ঢাকায় কূটনৈতিক পত্র পাঠায় চীন। বাংলাদেশ অবশ্য এ নিয়ে তাৎক্ষণিক দুঃখ প্রকাশ করে। এরপর বিষয়টির ‘সুরাহা হয়েছে’ বলে দাবি করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। চীনের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন ফের সে কথাই জানান। বলেন, ‘আমরা তো লাইনটা ক্লিয়ার করে দিয়েছি। যে সমস্যা ছিল সেটি সুরাহা করে দিয়েছি। বাকিটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ। চুক্তি হয়েছে এমন কোনো তথ্য পেয়েছেন কিনা- জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার আজ কথা হয়নি। তবে যেহেতু তিনি বলেছেন চুক্তি হয়েছে, তাই ধরে নিচ্ছি তা হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। এখন আমাদের পরবর্তী কার্যক্রমটা ভালোভাবে করতে হবে। চীন থেকে টিকা পেতে কোনো জটিলতা হবে না- এমন দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে বলেন, টিকা নিয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার আগেই কথা হয়েছে। আমি তাকে বলেছি, ভারত থেকে আমাদের টিকা আসার কথা ছিল কিন্তু তাতে তো বিঘ্ন ঘটে গেল। চীনের কাছ থেকে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে যেন এমনটি না হয়। জবাবে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খোলাসা করেই বলেন, চীনে পর্যাপ্ত টিকা আছে। যত প্রয়োজন সরবরাহ করা সম্ভব। তাছাড়া সরবরাহ শুরু হলে মাঝপথে এটি আটকে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই বলেও তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে সিনোফার্মের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বিষয়টিকে বাংলাদেশ সরকার এবং সিনোফার্মের মধ্যকার ‘কমার্শিয়াল অ্যাক্টিভিটি’ বলে মন্তব্য করে এ বিষয়ে তার কাছে বিশদ তথ্য (আপডেট) না থাকার দাবি করেন। মানবজমিন প্রতিবেদককে পাঠানো তার দুই লাইনের জবাবটি ছিল এমন ‘আপনি যে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। এটি সম্পূর্ণ স্থানীয় সরকার (বাংলাদেশ) এবং সিনোফর্মের মধ্যকার বাণিজ্যিক কার্যক্রম।’